দু'হাজার টাকার গোলাপি নোটটা তখন দোকানীর পকেটে চালান হয়ে গিয়েছে! আশপাশে আরও বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী... এক, দুই, পাঁচ, পঞ্চাশ, একশো, পাঁচশো ! দু'হাজারিকে দেখে একটু 'সেলাম' ঠুকে দিল তাঁরা! এই বাজারের সর্ব্বোচ্চ অঙ্ক বলে কথা! দু'হাজারও মুচকি হেসে সেলামের জবাব দিল! কলারটাও উঁচু হয়ে গিয়েছে ! 'সুপেরিয়ার' বলে কথা!
এসব দেখে তখন মুচকি হাসছে কোণায় পড়ে থাকা এক টাকার একটা মলিন নোট! বহুদিন সেখানেই পড়ে রয়েছে! এখন তো অচল! হাতবদল হয় না! এই পকেটই ঘরবাড়ি! পায়ের উপর পা তুলে, অলস মস্তিষ্কে এক টাকা ভাবতে বসল পুরনো দিনের কথা! তার পূর্বপুরুষের কথা! নিজের মনে মনেই বলল, হায় রে মূর্খ দু'হাজার, তোর এত গর্ব! তোর বহু আগে এদেশেই রাজ করে গিয়েছে ১ লাখ টাকার নোট!
advertisement
সেও ছিল এক সময়! ছাপা হত ১ লক্ষ টাকার নোট! গান্ধীজি নয় সেখানে থাকত সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের শাসনকালে এই নোট ছাপা শুরু হয়। নেতাজির বডিগার্ড ও গাড়ি চালক ছিলেন কর্ণেল নিজামুদ্দিন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, এই নোট ইস্যু হত আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক থেকে। বর্মা, ক্রোয়েশিয়া, জার্মানি, চিন, মাঞ্চুকো, ইতালি, তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স আর আয়ারল্যান্ড... এই ১০টি দেশ আজাদ হিন্দ সরকার ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে সমর্থন করত এবং এই দেশগুলোতে এই টাকা ব্যবহারও হত।
কথায় কথায় আরও কথা...! নিজামুদ্দিনের মনে এসে যায় সেইসময়কার বেতনের অঙ্ক! তাঁর নিজের মাসিক বেতন ছিল ১৭ টাকা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির লিউটেন্যান্ট জেনারেলের বেতন ৮০ টাকা! যে সমস্ত আধিকারিকরা কর্মসূত্রে বর্মায় ছিলেন তাঁদের ২৩০ টাকা।
কী যেন একটা আওয়াজ হল ! স্মৃতি রোমন্থনে ছন্দপতন! আড়মোড়া ভাঙল এক টাকা! চারপাশটা একবার তাকিয়ে দেখল! দু'হাজারির কলার তখনও উঁচু! ফের একবার মুচকি হাসল এক টাকা...