১.কালো ছত্রাক এবং সাদা ছত্রাক কি?
ক. মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) বা কালো ছত্রাক (Black Fungus) হ'ল এমন এক ধরনের সংক্রমণ যা সংক্রামিত টিস্যুগুলিতে কালো রঙের এক ধরণের ছোপ সৃষ্টি করে।
খ. ক্যান্ডিডা (Candida) বা সাদা ছত্রাক (White Fungus)) এমন এক সংক্রমণ যা এক ধরণের ছত্রাকের ফলে ঘটে যা সংক্রামিত টিস্যুতে সাদা রঙের বসতি তৈরি করে।
advertisement
২. এটি কীভাবে সংক্রমণ হয়?
ক. এটি মূলত বায়ুতে উপস্থিত ছত্রাকের বীজগুটি গ্রহণ এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে থাকে। কেটে যাওয়া ত্বক বা আঘাতলাগা জায়গা থেকে এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৩. এটি কোথা থেকে আসে?
ক. অন্যান্য জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের মতো এই ছত্রাকও আমাদের আশেপাশের পরিবেশেই উপস্থিত রয়েছে। এটি সাধারণত মাটি, বায়ু এমনকি মানুষের নাক এবং শ্লেষ্মার মধ্যেও পাওয়া যায়।
৪. এটি কি বায়ু বাহিত?
ক. হ্যাঁ। এর স্পোরগুলি বায়ুতে উপস্থিত থাকায় এটি বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৫. এই ছত্রাক কি এক ব্যক্তি থেকে অন্যে ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে?
ক. না, এই ছত্রাক অ-সংক্রামক।
৬. সকলেরই কি সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে?
ক. না। যেহেতু জীবাণুগুলি (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক) বায়ুতে উপস্থিত থাকে, তাই আমাদের শরীরে তাদের প্রবেশ এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু আশার কথা হল, সকলেই এই ছত্রাকে সংক্রমিত হননা। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত শক্তিশালী হবে, ততই এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হবে।
৭. কাদের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি
যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা এই ছত্রাকের দ্বার আত্রান্ত হতে পারেন। ৬০ বছরের উর্ধ্বে যে সমস্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘস্থায়ী অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ, দীর্ঘস্থায়ী লিভারের অসুখ, COPD, হাঁপানি, TB, বা স্টেরয়েড ইত্যাদির মতো কঠিন অসুখে আক্রান্ত থাকেন তবে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
এছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারী, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে রয়েছেন, যাঁদের পুষ্টির অভাব, যাঁরা তামাক সেবন করেন বা ধূমপান করেন বা অ্যালকোহল পান করেন তাঁদের মধ্যেও সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকখানি।
৮. করোনা আক্রান্ত সকলেরই কি ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
ক. না। কালো ও সাদা ছত্রাকের সংক্রমণ একটি বিরল সংক্রমণ, করোনা আক্রান্ত সমস্ত রোগীই এই ফাঙ্গাসগুলির দ্বারা আক্রান্ত হবেন, তার কোনও মানে নেই।
৯. কোভিড রোগীদের মধ্যে এই সংক্রমণ কেন বাড়ছে?
ক. কোভিড ভাইরাস নিজেই মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে, তাই ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকগুলি বৃদ্ধির সুযোগ পায়।
খ. কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েডের মতো ওষুধ লিম্ফোসাইটের সংখ্যা হ্রাস করে, এটি এক ধরণের শ্বেত রক্ত কোষ যার কাজ আমাদের শরীরের ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
গ. অত্যধিক জিঙ্কের ব্যবহারও দায়ী হতে পারে কারণ এটি ছত্রাকের বৃদ্ধির অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।
ঘ. দীর্ঘসময় ঘরে অক্সিজেনের ব্যবহার এর কারণও হতে পারে।
১০. এই ওষুধগুলি কী বন্ধ করে দেওয়া উচিত?
ক. না। কারণ এই ওষুধগুলি কোভিড চিকিৎসায় জীবন রক্ষাকারী।
১১. ওষুধগুলি গ্রহণের পরেও কীভাবে ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করা যায়?
ক. এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধগুলি গ্রহণ করুন।
১২. কোভিড সংক্রমণ ছাড়াও কি এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে পারে?
ক. হ্যাঁ। সংক্রমণ কোভিড সংক্রমণ ছাড়াও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের সর্বাধিক সম্ভাবনা আছে।
১৩. ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ কি মারাত্মক?
ক. হ্যাঁ। মিউকরমাইকোসিস বা কালো ছত্রাক বিরল, তবে মারাত্মক হতে পারে।
১৪. ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ সনাক্ত করার পদ্ধতিগুলি কী কী?
ক. MRI বা রেডিওলজিক্যাল পর্যবেক্ষনের পর এই ছত্রাকের সংক্রমণের লক্ষণগুলি ধরা পড়ে। সংক্রমণটি নিশ্চিত করার জন্য, বায়োপসি (Biopsy) করতে হবে
১৫. এই রেগের চিকিৎসা কী সম্ভব?
ক. হ্যাঁ। অ্যামফোটেরিসিন (Amphotericin) এবং পোসাকোনাজল (Posaconazole)জাতীয় কিছু অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা হলে ওষুধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে এনেক ক্ষেত্রে এই ছত্রাকের চিকিৎসার জন্য অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হয়।
১৬. সাদা ছত্রাকের সংক্রমণ কি মারাত্মক?
ক. না। ক্যানডিয়াডিসিস (Candidiasis) বা সাদা ছত্রাক মারাত্মক নয়।
১৭. সাদা ছত্রাকের সংক্রমণ কি চিকিৎসাযোগ্য?
ক. হ্যাঁ। ক্যান্ডিডিয়াসিস বা সাদা ছত্রাক সম্পূর্ণ কম ব্যয়বহুল অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসাযোগ্য।
১৮. কীভাবে এই ছত্রাক থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন?
ক. নাক এবং মুখের মাধ্যমে আমাদের শরীরে এই ছত্রাক প্রবেশ করে, তাই এই ছত্রাকের প্রবেশ রোধ করার জন্য সর্বদা পরিষ্কার মাস্ক পরুন। ঘন ঘন মাস্কটি ধুয়ে বা পরিবর্তন করুন।
খ. কাট, ঘা বা কোনও ক্ষত জলে তাৎক্ষনিক ধুয়ে ফেলুন।
গ. RMP চিকিৎসকদের তদারকিতে সুষ্ঠুভাবে কভিডের চিকিৎসা করুন।