যেহেতু আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শরীরে ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে সেকারণে এই সময় জ্বর সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কোনও বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। বর্তমান সময়ের ভাইরাসজনিত অসুস্থতা সাময়িক এবং তা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে। সেক্ষত্রে সেই ব্যক্তিকে দ্রুত বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।
advertisement
কারা মূলত বেশি আক্রান্ত হতে পারে?
প্রথমত জানিয়ে রাখা দরকার, ভাইরাল ফিভারে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যাঁরা একটু বেশি স্থূলকায় বা একটু বেশি মোটা তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। বর্তমান সময়ে ভাইরাসজনিত সমস্যায় পড়লে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যেহেতু স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে চর্বির পরিমাণ অত্যধিক থাকে, সে কারণে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের মতে, শরীরে চর্বি থাকা কোনও খারাপ বিষয় নয়। কারণ চর্বি বা মেদ প্রত্যেকের দরকার কিন্তু তা নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকা দরকার। অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি শরীর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মেদ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ভাইরাসের আক্রমণে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ইনফেকশন হতে পারে।
ভাইরাল জ্বরের উপসর্গগুলি কী কী হতে পারে?
আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে জ্বরে আক্রান্ত হলে যে সব উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেখা যায়। তবে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই ওই উপসর্গ প্রকাশ পেলেই সেই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ। কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে? সাধারণ জ্বর হলে সর্দি, গলায় ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। পাশাপাশি সাইনাসে ইনফেকশন (Sinus Infection) হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রেও এই উপসর্গগুলি দেখা দেয়। কিন্তু একমাত্র কোভিড পরীক্ষা করার পরই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় যে ওই ব্যক্তির করোনা হয়েছে।
অন্য দিকে, করোনার ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা প্রকাশ পায়। তা হল স্বাদ ও গন্ধ বোঝার অনুভূতি চলে যাওয়া। করোনায় আক্রান্ত হলে অধিকাংশ জনের এই সমস্যাগুলি দেখা দেয়। কিন্তু ভাইরাল ফিভার বা সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলি প্রকাশ পায় না।
সংক্রমণ স্থূলকায় ব্যক্তিদের ভূমিকা-
স্থূলকায় ব্যক্তিদের উপর সংক্রমণের মাত্রা যে শুধু বেশি থাকে তেমন নয় বিভিন্ন রিপোর্টে এটাও প্রকাশ অতিরিক্ত মেদযুক্ত ব্যক্তিরা সংক্রমণও ছড়ায়।
মূলত হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যখন কোনও সুস্থ ব্যক্তি কোনও অসুস্থ ব্যক্তির অত্যন্ত কাছাকাছি থেকে কথা বলে তাহলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন ভাইরাস আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির থেকে নূন্যতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে। অনেক সময় এটাও দেখা গিয়েছে, ভাইরাস আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির দেহে সে ভাবে কোনও উপসর্গ দেখা না গেলেও তারা ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলে ভাইরাল শেডিং (Viral Shedding)। কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভাইরাল শেডিং প্রক্রিয়াটি সব থেকে বেশি সক্রিয় থাকে যখন তাদের শরীরে সংক্রমণ শুরু হয়। একটি গবেষণা পত্রে প্রকাশ, স্থূলকায় ব্যক্তিদের ভাইরাল শেডিং প্রক্রিয়াটি অনেকদিন ধরে সক্রিয় থাকে। তুলনামূলকভাবে মেদহীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি কম দিন সক্রিয় থাকে। সুতরাং ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্থূলকায় ব্যক্তিদের আশেপাশে যাঁরা থাকেন তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
আরও পড়ুন - IPL 2021: বাবা আউট হতেই যা করল AB De Villiers- ছেলে, মাঠের Video Viral
কী ভাবে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকা যাবে?
কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই সুস্থ থাকা যাবে। একদিকে যখন কোভিডের আক্রমণ চলছে এবং অন্যদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে, এই পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং পরিজনদের যতটা সম্ভব সুস্থ রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে সুস্থ থাকা যাবে তার জন্য রইল বেশ কয়েকটি টিপস-
নিজেকে পরিস্কার রাখতে হবে- প্রতিবার হাঁচি ও কাশির সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। বার বার হাত সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ধুতে হবে। জলের সমস্যা রয়েছে এমন পরিস্থিতিতে হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও দেখুন - Weather Forecast Video: সোমবার আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে বঙ্গোপসাগরে, মঙ্গল-বুধে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি
খাওয়া-দাওয়া -এই সময় খাওয়াদাওয়ার উপর যথেষ্ট নজর দিতে হবে। প্রথমত বাইরের খাবার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র বাড়িতে তৈরি করা খাবার খাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত মশলাদার খাবার বর্জন করতে হবে। অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রোটিন খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় ডাল, ডিম, সয়াবিন রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে হবে। প্রসেসড ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার বর্জন করা উচিত। প্রতি দিন খাদ্য তালিকায় ফল রাখতে হবে।
এর পাশাপাশি ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। যে কোনও রকমের নেশাদ্রব্য পরিত্যাগ করা উচিত।
যোগব্যায়াম- শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে যোগাভ্যাস করা ভীষণ প্রয়োজন। তাই নিয়ম করে প্রতি দিন যোগ ব্যায়াম করতে হবে। স্থূলকায় ব্যক্তিদের এমন কিছু ব্যায়াম করতে হবে যাতে তাঁদের মেদ কমে।
জ্বরের টিকা- জ্বরের টিকা নেওয়া দরকার। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং জ্বর থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
স্থূলকায় ব্যক্তিদের কেন সচেতন থাকা দরকার?
স্থূলকায় ব্যক্তিদের অনেকেই তাঁদের শরীর নিয়ে খুব একটা ভাবনা-চিন্তা করতে চান না। তাঁরা মনে করেন তাঁরা যেমন আছেন, সেটাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু দেখা গিয়েছে স্থূলকায় ব্যক্তিরা তুলনামূলক বেশি রোগে আক্রান্ত হন। তাই তাঁদের সুস্থ থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে মেদ কমিয়ে ফেলা উচিত।