বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (The World Health Organization) বুধবার নতুন এই ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে প্রতিটি রাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে এটি খুবই উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন ভ্যারিয়ান্ট (Omicron Symptoms)। খুব দ্রুত হারে এটি বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি করতে সক্ষম। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অনেক দেশকেই বাইরের দেশের সঙ্গে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য করেছে।
advertisement
আরও পড়ুন: দিনে ৬০ হাজার জনকে হাসপাতালে পাঠাতে পারে... কেন ভয় পাবেন ওমিক্রনকে? জানুন আসল কারণ!
এই ধরনের আতঙ্ক এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে, নিরাপদ এবং সতর্ক থাকাই আমাদের দায়িত্ব। সর্বোপরি, বাইরের কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, ভিড় এড়িয়ে চলা ও বিশেষ করে ওমিক্রনের লক্ষণ রয়েছে এমন কারও সংস্পর্শে না আসা ইত্যাদি বিষয়গুলি মাথায় রেখেই আমাদের সাবধানে চলতে হবে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট এখনও পর্যন্ত 'হালকা' বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু আমাদের কি এই মুহূর্তেই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
বর্তমানে, ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতি দিনই নতুন নতুন কেস রিপোর্ট করা হচ্ছে। ফলে এই ভ্যারিয়ান্টটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে বহু গুণে। এখনও অবধি, শুধুমাত্র ভারতেই ওমিক্রনের ৬০০টিরও বেশি কেস রেকর্ড করা হয়েছে।
যাই হোক, বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন কোভিডের বিকল্পটিকে সাধারণ বা হালকা মানের সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত করেছে। যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর খুব কম ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:আজ থেকে শুরু ছোটদের টিকাকরণ, কীভাবে করবেন নাম নথিভুক্ত? কতটা প্রস্তুত দেশ? জানুন যাবতীয়...
কিন্তু তা সত্ত্বেও ডব্লিউএইচও (WHO) জনসাধারণকে ভ্যারিয়ান্টের বিপরীতে সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার পরামর্শ দিয়েছে, এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য ও এটিকে হালকা সংক্রমণ হিসাবে এড়িয়ে না চলার জন্য অনুরোধ করেছে। কেন না, যে গতিতে এই ভ্যারিয়ান্টটি ছড়িয়ে পড়ছে তা বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের ক্রমশ শঙ্কিত করে তুলেছে। এই কারণেই আমাদের উচিত সামাজিক দূরত্বের অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া, মহামারী চলাকালীন যে সকল আচরণ আমরা অনুসরণ করছিলাম তা চালিয়ে যাওয়া।
তাই উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, হ্যাঁ, আমাদের এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী?
এখনও পর্যন্ত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওমিক্রনের লক্ষণগুলি (Omicron Symptoms) হালকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারবাবুরা আমাদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি বার বার তালিকাভুক্ত করে দিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ZOE COVID স্টাডি অ্যাপ, যা একটি সেলফ রিপোর্টিং সিম্পটম প্ল্যাটফর্ম অনুসারে এখানে ওমিক্রনের কিছু সাধারণ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নিম্ন লিখিত বিভিন্ন লক্ষণের কথা বলা হয়েছে:
- অল্প জ্বর
- গলা খুশখুশের অনুভূতি
- সর্দি
- হাঁচি
- শরীরে প্রচন্ড ব্যথা
- ক্লান্তি
- রাতে ঘাম হওয়া
তা ছাড়া, সম্প্রতি দেখা দেওয়া আরও দুই অস্বাভাবিক উপসর্গ (Omicron Symptoms) হল বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধা হ্রাস। আমাদের আশেপাশে বা বাড়ির কোনও পরিজনদের মধ্যে এ ধরনের সংক্রমণ হলে অতীব সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং করোনা টেস্ট করা উচিত।
আমাদের ত্বকও নতুন কোভিড ভ্যারিয়ান্টটির সংক্রমণের সঙ্কেত দিতে পারে
উপরে উল্লিখিত উপসর্গ রেসপন্স অ্যাপটি ওমিক্রনের আরেকটি উপসর্গও তুলে ধরেছে, যেটি আমাদের ত্বকে দেখা দিতে পারে, তা হল 'ফুসকুড়ি'।
ত্বকের ফুসকুড়ি প্রায়ই কোভিড-১৯ এর সঙ্গে যুক্ত। পূর্ববর্তী গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে এটি SARs-COV-2 ভাইরাস দ্বারা উদ্ভূত ত্বক প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে। ZOE COVID স্টাডি অ্যাপ সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে, ত্বকের এই ধরনের ফুসকুড়িকে কোভিড-১৯-এর 'চতুর্থ মূল লক্ষণ' হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ত্বকের নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় উপসর্গের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাতের আঙুল এবং পায়ের আঙুলগুলিতে লাল এবং বেগুনি ফুসকুড়ি হতে পারে, যার সঙ্গে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা এবং চুলকানি অনুভূত হবে। আমাদের আশেপাশে বা বাড়ির কোনও পরিজনদের মধ্যে এ ধরণের সংক্রমণ হলে অতীব সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং করোনা টেস্ট করা উচিত।
উপরন্তু, ওই স্টাডি অ্যাপ অনুসারে, আরও দুই ধরনের ফুসকুড়ি রয়েছে যা কোভিড পজিটিভ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের ফুসকুড়ি বা র্যাশকে বলা হয় হাইভ-টাইপ ফুসকুড়ি এবং প্রিকলি হিট টাইপ ফুসকুড়ি। যদিও প্রথমটি হঠাৎ করে বাম্পের আকারে উদ্ভূত হতে দেখা দেয় এবং দ্রুত বিবর্ণও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয়টি সাধারণত আকারে ছোট, অধিক চুলকানি যুক্ত এবং শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে। প্রথম প্রথম এটি হালকা লাল দাগ তৈরি করে, সূত্রপাত হয় সাধারণত কনুই, হাঁটু এবং হাত ও পায়ের পিছনে, তার পর ধীরে ধীরে এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
পজিটিভ রিপোর্ট এলে যে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে
আমাদের আশেপাশে বা পরিজনদের মধ্যে যদি কেউ কোভিডের এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটিতে আক্রান্ত হয় বা ব্যক্তির শরীরে যদি ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব কোভিড পরীক্ষা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমাদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত। আর যদি আমাদের টেস্টের রিপোর্ট ইতিবাচক আসে তবে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে নিজেদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। সবার প্রথমেই নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে আইসোলেট করতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিয়মিত খাবার এবং অন্যান্য মেনে চলতে হবে। নিয়মিত আমাদের স্বাস্থ্যের লক্ষণগুলিও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বাড়িতে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য একটি অক্সিমিটার কিন্তু সর্বদা প্রয়োজন!