কেমন ছিল প্রতিরক্ষা রণণীতি?
১৯৬২ সালের ২৬ অক্টোবর লেহ-তে চিনের সেনার যোগ্য জবাব দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেই সময় চুশুলে তৈরি হয়েছিল ১১৪ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের মুখ্য কার্যালয়। মেজর জেনারেল বুদ্ধ সিংয়ের নেতৃত্বে ৩ ইনফেন্ট্রি ডিভিশন সেনা মোতায়েন করা হয়। প্রায় ৪০ কিলোমিটার জায়গ জুড়ে সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হয়েছিল। সেদিন থেকে সংঘর্ষ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঠাণ্ডাযুদ্ধ জারি রয়েছে।
advertisement
রেজাংলগার লড়াই
কৈলাস রেঞ্জে অবস্থিত রেজাং লা-এর তত্ত্বাবধানে ছিল 13 C কম্পানি। তাদের কাছে মোর্টার, মেশিন গান, রকেট লঞ্চার ছিল। আর এখানেও রাতের বেলায় ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে হামলা করার ষড়যন্ত্র করেছিল চিন। জবাব দিতে শুরু করে ভারতীয় সেনাও। তবে এই লড়াইয়ে জিতে যায় চিন। প্রায় ২৬ ঘণ্টার যুদ্ধে রেজাং লা-কে দখলে নেয় চিন। তবে মেজর শয়তান সিংয়ের জওয়ানদের পালটা হামলার এই লড়াই আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৪১ জন সেনার মধ্যে সেই যুদ্ধে ১৩৫ জন শহিদ হয়েছিলেন। পাঁচজনকে চিনের সেনারা আটক করে নেয়। শুধু একজন বেঁচে যায়। অন্যদিকে চিন সেনার ২১ জন সেনা মারা যায়। ৯৮ জন সেনা জখম হয়।
গুরুং হিলের ঐতিহাসিক সংঘর্ষ
স্পাঙ্গুর গ্যাপে প্রথম প্রথম দুই সেনা কম্পানির অধীনে ছিল এই এলাকার নির্দিষ্ট অংশগুলি। এখানে AMX 13 লাইট ট্যাঙ্কিরও সাপোর্ট ছিল। ৫,১০০ মিটার উঁচুতে সুরক্ষার জন্য ভারতীয় সেনার কাছে একটি মেশিন গান, একটি ৫৭ MM রিকোইললেস গান, ১২ টি মোর্টার ও ফ্লেন থ্রোয়ার-সহ বেশ কিছু উপকরণ ছিল। এদিকে রেজাং লা জেতার পরই গুরুং হিলের দিকে পা বাড়ায় চিনের সেনা। কিন্তু গোর্খাদের সাহসিকতায় শেষমেশ পিছু হটতে হয় চিন সেনাকে। এর পর ফের ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুই দেশের বেশ কয়েকজন সেনার মৃত্যু হয়। তবুও পুরোপুরি গুরুং হিল দখল করতে পারেনি PLA। কয়েকটি জায়গায় তারা ডেরা জমায়।
সেই সূত্র ধরে দুই দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে একাধিক উচ্চস্তরীয় বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কৈলাস রেঞ্জ থেকে সেনারা পিছু হটবে এবং চুশুলের পশ্চিম দিকে সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু চিন তাদের সেনাদের পিছু হটার সিদ্ধান্তে রাজি হয়নি। ২১ নভেম্বর যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হয়। কারণ ততদিনে চিনের সেনার ক্ষমতা কমে আসে। শেষমেশ পিছু হটতে শুরু করে চিনের সেনা। আর এলাকা নিজেদের দখলে রাখে ভারতীয় সেনা।
বর্তমানে কী পরিস্থিতি?
গত বছর মে মাসের ঘটনার পর আপাতত কৈলাস রেঞ্জ নিয়ে সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি চিন সেনাকে। চিন যাতে আচমকা হামলা করতে না পারে, সে কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই এই সীমান্ত এলাকায় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স মোতায়েন করেছে ভারত। তাছাড়া পরিস্থিতির যথেষ্ট বদলও হয়েছে। বর্তমানে উঁচু, দুর্গম এলাকায় লাগাতার যুদ্ধ চালানোর জন্য আধুনিক অস্ত্র, পরিষেবা বা যাবতীয় উপকরণ রয়েছে। ১৯৬২ সালের মতো বর্তমান পরিস্থিতি নেই। ভারতীয় সেনা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। বলা বাহুল্য, কৈলাস রেঞ্জে ভারতের এই অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে চিনও। তাই বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে চিন কৈলাস রেঞ্জ দখল না করে অন্য পরিকল্পনাগুলির উপরে বেশি করে গুরুত্ব দেবে। অর্থাৎ পেগংগের দক্ষিণ দিক থেকে হামলা চালাতে পারে চিনের সেনা। এদিক দিয়ে ভারতীয় সেনাকে পিছু হটার জন্য বাধ্য করতে পারে তারা।
তবে একটি বিষয় সব সময়ে মাথায় রাখতে হবে। কৈলাস রেঞ্জের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। প্রথমত, ভারত-চিন সীমান্তে এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। দ্বিতীয়ত, এটি এমন একটি সীমান্ত এলাকা যা প্রথমবার চিনের অবৈধ দখল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ভারত। তাই এই এলাকাটি দুই দেশের নজরে রয়েছে। এগুলির পাশাপাশি ১৮৬৫ সালের জনসন লাইনের সূত্র ধরে একাধির সীমান্ত সমস্যা দানা বেঁধেছে। জনসন লাইন অনুযায়ী, এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যা এখনও চিন সেনার কাছ থেকে দখল করতে হবে ভারতকে। আপাতত আগামী দিনের অপেক্ষা। এখন দেখার, দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়ায় কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে না কি কোনও বড় সীমান্ত সংঘর্ষ বাধবে!