হার্ট ভালো রাখার জন্য মহিলাদের কী কী করণীয়?
হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। এবং বর্তমান সময়ে এটি অত্যন্ত সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে ভুগছেন। এক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলা, উভয়ের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান।
কিন্তু শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী সময়ে মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের যে উপসর্গ দেখা যায় তা পুরুষদের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। এমনকী মহিলাদের ক্ষেত্রে উপসর্গ অনেক সময় বোঝাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার ফলে কোনও মহিলা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তা বুঝতে বেশ কিছুটা সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসকদের। রোগীর চিকিৎসা পেতেও দেরি হচ্ছে।
advertisement
হার্টের গঠনে পার্থক্য
মহিলাদের হৃদয় তুলনামূলক ভাবে পুরুষদের থেকে ছোটো হয়। ফলে ভিতরের প্রকোষ্ঠগুলিও ছোটো হয়। এছাড়াও হার্টের দেওয়ালগুলি তুলনামূলক পাতলা হয়। একারণে প্রতিবার পাম্পের জেরে পুরুষের হৃদয় থেকে যে পরিমাণ রক্ত পাম্প করা হয় মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ রক্ত কম পাম্প করা হয়। মহিলারা যখন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করেন তখন তাঁদের হৃদয় অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করে। ফলে রক্তচাপ অনেকটা বেড়ে যায়। এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা থাকে। কী ভাবে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব? জেনে নেওয়া যাক...
যে সব সমস্যা মহিলাদের উপর বেশি প্রভাব ফেলে
বেশ কিছু হার্টের সমস্যা এবং অন্য শারীরিক সমস্যা শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। সেগুলি হার্টের জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এন্ডোম্যাট্রিওসিস (Endometriosis), পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিস (Polycystic Ovary Diseas), মধুমেহ এবং গর্ভাবস্থার সময়ে যদি রক্তচাপ তৈরি হয় তাহলে তা হার্টের জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও যদি মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ব্লাড সুগার, কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি থাকলে এবং মহিলারা যদি ধূমপান করেন তাহলেও তাঁদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি থাকে।
মহিলারা বুকে যন্ত্রণা অনুভব করেন না
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত সাধারণ উপসর্গ হল বুকে যন্ত্রণা। রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা দেখা হলে যখন হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন বুকে যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। এমন অনেক বিষয় সামনে এলেও বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে যন্ত্রণা হয় না। বরং তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
কিন্তু সেগুলি দেখে সাধারণভাবে বোঝা সম্ভব নয় যে সেগুলি হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ। এবং সঠিক সময়ে উপসর্গ না বুঝতে পারায় চিকিৎসা শুরু হতে অনেক দেরি হয়। ফলে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়। তবে এটাও ঠিক অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয়।
বয়স
মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একটু বেশি বয়সে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাঁদের মধ্যে। তুলনামূলকভাবে পুরুষদের ক্ষেত্রে কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কারণ মহিলাদের শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের জন্য মেনোপজের পরেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা হয়। কিন্তু ৬০ বছর পর এস্ট্রোজেনের পরিমাণ যখন কমে যায় তখন হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এমনকী এই বয়সের পরে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হন মহিলারা। যেমন মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলির জন্যও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে কী কী উপসর্গ প্রকাশ হতে পারে?
মহিলাদের ক্ষেত্রে সব সময় পুরুষদের মতো হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলি প্রকাশ পায় না। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ৫টি ভিন্ন উপসর্গ থাকে। যা দেখে বোঝা সম্ভব কোনও মহিলার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
ওই ৫টি উপসর্গ কী কী ?
বুকে অস্বস্তি অনুভব হতে পারে- মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে যন্ত্রণা হয় না। পরিবর্তে তাঁরা বুকে অস্বস্তি অনুভব করেন। বুকের মধ্যে চাপ দিলে যেমন অনুভব হয় সেই একই চাপ অনুভব করেন তাঁরা।
হাত, ঘাড় এবং পিঠে ব্যথা অনুভব হওয়া- মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হাত, ঘাড় এবং পিঠে ব্যথা অনুভব হতে পারে। এগুলি অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হয়।
পাকস্থলীতে ব্যথা- পাকস্থলী এবং গোটা পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে। জ্বালা পোড়া অনুভব হতে পারে।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা- আচমকা শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
ক্লান্তি- ক্লান্তি এবং বমি ভাব মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রেও আচমকা ক্লান্তি ভাব আসতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এই ধরনের সমস্যা উপেক্ষা করলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ৫টি উপসর্গ দেখা দিলে হার্ট আট্যাকের সম্ভবনা থাকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এই উপসর্গগুলিকে কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
বাঁচার উপায় কী?
বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তার মধ্যে একটি হল সঠিক খাদ্যাভাস। জাঙ্ক ফুড ও বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। খাদ্য তালিকায় খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ এমন খাবার রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও কাঁচা নুন খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা প্রয়োজন।
অন্য দিকে, শারীরিক যোগব্যায়ামের কথা বলেছেন তাঁরা। দৈনিক নির্দিষ্ট দূরত্বে হাঁটতে হবে। এবং সমতল রাস্তায় হাঁটা প্রয়োজন। এর সঙ্গে যোগব্যায়াম এবং অন্য শরীরচর্চার উপর জোর দিতে হবে। তার সঙ্গে ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। কারণ ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।