D2 ডেঙ্গু কী?
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত জ্বর। প্রকৃতপক্ষে, এটি মশা থেকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল রোগ এবং বলাবাহুল্য এটিকে আন্তর্জাতিক স্তরের জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগের কারণ হিসেবে দায়ী করেছে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এই রোগটি বেশিরভাগ ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ুতে বিস্তার লাভ করে। প্রধানত শহর এবং শহরতলি অঞ্চলে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। আদতে এটি ডেঙ্গু ভাইরাস, যার নাম DENV, যা এই রোগের মূল কারণ। এছাড়াও আরও চারটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ফর্ম রয়েছে। এই চারটি সেরোটাইপ হল- DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4। এর মানে হল যে ডেঙ্গু একজন ব্যক্তিকে চারবার আক্রান্ত করতে পারে। যদিও একবার একটি স্ট্রেনে সংক্রমিত হলে সাধারণত সেই স্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অনাক্রম্যতা অর্থাৎ ইমিউনিটি তৈরি হয়, তবুও বাকি তিনটি স্ট্রেনে সংক্রমিত হওয়া সম্ভব।
advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অনেক DENV সংক্রমণ শুধুমাত্র হালকা অসুস্থতা তৈরি করে, কখনও কখনও আবার তীব্র ফ্লু-এর মতো অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। জ্বর বা সেই সম্বন্ধীয় কিছু অসুস্থতা হয়। তবু মাঝে মাঝে এটি একটি প্রাণঘাতী জটিলতায় পরিণত হয়, যাকে বলা হয় মারাত্মক ডেঙ্গু। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে ইন্ডিয়ান কউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-র ডিরেক্টর বলরাম ভার্গব জানিয়েছেন যে ডেঙ্গুর DENV-2 বা D2 ভ্যারিয়ান্ট পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ, আগ্রা, মথুরা এবং আলিগড় জেলায় জ্বর ও মৃত্যুর পিছনে অন্যতম কারণ।
তিনি এও বলেন যে এই স্ট্রেনটি মারাত্মক ক্ষতিকারক। এর আগে, চলতি বছরের জুলাইয়ে, ওড়িশায় ডেঙ্গুর বিপুল সংখ্যক রোগী সনাক্ত হয়েছিল। ভুবনেশ্বরে আইসিএমআর-এর আঞ্চলিক চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্রের এক গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে সাব-টাইপ -২ সব চেয়ে প্যাথোজেনিক। এর আক্রমণ আরও বিপজ্জনক। কারণ এর ম্যাক্রোফেজগুলি ভাইরাস প্রবেশকে অনেক সহজতর করে দেয়।
D2 ডেঙ্গু কেন মারাত্মক?
WHO বলছে যে ডেঙ্গু রোগটি বহু দূর বিস্তার লাভ করে, এমনভাবে সেটা করে যেখানে মানুষ হয় তো জানেও না যে তারা মারাত্মক ফ্লু-এর মতো উপসর্গ দ্বারা সংক্রমিত। এও বলা হয় যে কিছু লোক মারাত্মক ডেঙ্গু ছড়াতে পারে, যদিও এই ধরনের ঘটনাগুলি সাধারণত কম ঘটে। পাঁচের দশকে গুরুতর ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা গিয়েছিল ফিলিপাইনস এবং থাইল্যান্ডে। যথাযথ ভাবে চিহ্নিত বা প্রতিরোধ করা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। রিপোর্ট বলছে যে ২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মারাত্মক ডেঙ্গু শব্দটির ব্যবহার শুরু করে। যা আগে 'ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার' এবং 'ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম' নামে পরিচিত ছিল।
মারাত্মক ডেঙ্গু রোগ এখন প্রায় সব এশিয়ান এবং লাতিন আমেরিকান দেশে দেখা যায় যা ওই অঞ্চলে শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। NCDC-র বক্তব্য, যখন একজন ব্যক্তি ক্লাসিক ডেঙ্গু হন (অর্থাৎ একটি সেরোটাইপ দ্বারা সংক্রমিত), তিনি পরে দ্বিতীয় সেরোটাইপ দ্বারা দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে হেমোরেজিক জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। WHO বলেছে যে যেহেতু ডেঙ্গুর একটি স্ট্রেনের সংক্রমণের পর, অন্যান্য সেরোটাইপগুলিতে অনাক্রম্যতা (ক্রস-ইমিউনিটি) শুধুমাত্র আংশিক এবং অস্থায়ী, তাই অন্যান্য সেরোটাইপ দ্বারা পরবর্তী সংক্রমণ (সেকেন্ডারি ইনফেকশন) মারাত্মক ডেঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
D2 ডেঙ্গুর উপসর্গ কী কী?
WHO বলছে যে ডেঙ্গু ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ তৈরি করে এবং ২-৭ দিন সেটা থাকে, যখন রোগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ সংক্রমিত মশার কামড়ের ৪-১০ দিন পর্যন্তও থাকে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) বলেছে, জ্বর ছাড়াও এই ক্লাসিক ডেঙ্গুর অন্য উপসর্গগুলি হল মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব, হাড় বা পেশি ব্যথা, ফুসকুড়ি।
যখন কেউ মারাত্মক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তখন অসুস্থতার প্রথম ৩-৭দিন সংকটজনক পরিস্থিতি চলে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে, এর অর্থ এটা নয় যে ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠছে। এর পর তীব্র পেটে ব্যথা, ক্রমাগত বমি, মাড়ি থেকে রক্তপাত, রক্ত বমি, দ্রুত শ্বাস, ক্লান্তি/অস্থিরতা এগুলিও হতে পারে। একবার গুরুতর ডেঙ্গু সন্দেহ হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। কারণ, গুরুতর রক্তপাত এবং গুরুতর শারীরিক দুর্বলতা রোগীর মনোবল ভেঙে দিতে পারে।
এর চিকিৎসা কী?
ডেঙ্গুর জন্য কোনও টিকা বা নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এক্ষেত্রে রোগীদের উপসর্গের উপর নির্ভর করতে হয়। WHO-এর মতে, রোগীদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রচুর তরল জিনিস পান করা। জ্বর কমাতে এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল নেওয়া যেতে পারে। অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন নেওয়া উচিত নয় কারণ এই ধরণের ওষুধ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা মৃত্যুর হার ১ শতাংশের নিচে আনতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক অভিজ্ঞতা খুবই অস্বস্তিকর এবং অপ্রীতিকর। তাই সচেতনতা সর্বাধিক প্রয়োজন।