আসলে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। তবে ভুললে চলবে না যে, করোনা কিন্তু এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। তাই প্রতিটা মানুষকে নিজেদের জন্য সচেতন থাকতে হবে। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে ‘মাস্ক পরব না’, ‘সামাজিক দূরত্ব মানব না’- এমন কিন্তু চলবে না। মনে রাখতে হবে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়কার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা। আবার এখন দেখা যাচ্ছে, ভ্যাকসিনের (Vaccine) ডবল ডোজ (Double Dose) নিয়ে অনেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তাঁরা ভাবছেন যে, ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে মানেই আর করোনা ছুঁতে পারবে না। এটা কিন্তু একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডবল ডোজ নেওয়ার পরেও ঘরে বসেই অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এখানেই সব থেকে চিন্তার বিষয়!
advertisement
তা হলে করোনার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কি কোনও গুরুত্ব নেই?
সব সময় এটা মনে রাখতে হবে যে, করোনার সঙ্গে সম্মুখ সমরে আমাদের হাতে মাত্র দু’টোই অস্ত্র রয়েছে। আর সেই দু’টি অস্ত্র হল- ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ এবং উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা। এই দুই অস্ত্রেই কাবু হবে মারণ সার্স-সিওভি-২ (SARs-COV-2)। কিন্তু প্রশ্ন উঠবে যে, ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও মানুষ কেন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন? তা হলে কি ভ্যাকসিন এবং তার ডবল ডোজ পর্যাপ্ত নয়? আসলে এই রোগের ভ্যাকসিন একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। অর্থাৎ ওই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত রক্ষাকবচ গড়ে তুলতে সক্ষম ভ্যাকসিন। যদিও অনেকেই এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হলেও ঝুঁকি সে অর্থে থাকে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যে রকম জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, ভ্যাকসিনেশনের পরে তা অনেকটাই এড়ানো যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আসলে ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমবে এবং হাসপাতালে ভর্তিও হতে হবে না।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কি উপসর্গ দেখা যাবে?
ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়া হয়ে গেলেও কেউ ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাঁর শরীরে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা যাবে। কখনও কখনও অনেকেই উপসর্গবিহীন বা অ্যাসিম্পটোম্যাটিক থাকে এবং আবার অনেকের ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকে খুবই মৃদু। তবে কিছু নির্দিষ্ট কেসের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ভাবে ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষজনও মারা যেতে পারেন, তবে এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল অর্থাৎ সে ভাবে দেখা যায় না।
ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে যে মৃদু উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে, সেগুলি হল-
মাথা ব্যথা
নাক থেকে জল পড়া
হাঁচি হওয়া
গলা ব্যথা
স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া
রিপোর্ট বলছে, কোভিডের ক্ষেত্রে প্রধান উপসর্গ হচ্ছে মাথা ধরা বা মাথা ব্যথা, আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নাক থেকে জল পড়া। এ বার ঋতু পরিবর্তনের জেরে অনেক সময় ঠাণ্ডা লেগে গেলেও এই দুই উপসর্গই দেখা দেয়। ফলে কারও এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাঁর আদৌ করোনা হয়েছে না ঠাণ্ডা লেগেছে, সেটা বোঝা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছিল দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস নামক জার্নালে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়া থাকলেও কোভিড সংক্রমণ হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সংক্রমিত ব্যক্তি অন্যান্যদের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় ধরে লন্ডন এবং বোল্টনের মোট ৪৪০টি বাড়ির সদস্যদের উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। সেই গবেষণায় ওই সব বাড়ির সদস্যদের পিসিআর কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় দেখা কোভিড ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ তাড়াতাড়ি সেরে গিয়েছে। আর যাঁরা ভ্যাকসিন নেননি, তাঁরা সব থেকে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন এবং তা বাড়ির অন্য সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা:
কোভিড সংক্রমণের জটিলতা এবং মৃত্যুর হার প্রতিরোধ করবে কোভিড ভ্যাকসিন। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী নয়। আর মারাত্মক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও সে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না কোভিড ভ্যাকসিন। আসলে করোনার ডবল ডোজ নেওয়ার পরেও মানুষের করোনা আক্রান্ত হওয়ার পিছনে যে কারণটা রয়েছে, সেটা হচ্ছে- ভাইরাসের ভ্যারিয়ান্ট (Variant)। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি যে, ভাইরাসের মূল স্ট্রেনটার সঙ্গে লড়াই করার জন্যই এই কোভিড ভ্যাকসিন বানানো হচ্ছে। এ বার ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টও চলে এসেছে। আর সেই সব ভ্যারিয়ান্ট ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিচ্ছে। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল। তবে ভাইরাসের নতুন এবং সাম্প্রতিক ভ্যারিয়ান্ট এই অ্যান্টিবডির প্রভাব নষ্ট করে দিতেও সক্ষম।
দ্য পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তরফে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে যে, ফাইজার (Pfizer) ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ নিলে আলফা ভ্যারিয়েন্টকে অনেকটাই প্রতিরোধ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণের উপসর্গের ঝুঁকি প্রায় ৯৩ শতাংশ কম। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকা (AstraZeneca) ভ্যাকসিন বা ভারতের কোভিশিল্ড (Covishield) ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক একই রকম।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালানো হয়েছে। আর তাতে বোঝা গিয়েছে যে, করোনা সংক্রমণের প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিনগুলি কম কার্যকর। যার ফলে এখন বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন গবেষকরা।
বিশ্বের কিছু কিছু দেশে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের বুস্টার দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যাঁদের ইমিউনিটি কম, তাঁদেরকেই ওই বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। আর সেখানে ভারতের মতো কিছু দেশে এই উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে এখনও কথাবার্তা চলছে। তাই বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং সমস্ত রকম সতর্কতা মেনে চলতে হবে। যেমন- ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রভৃতি বিষয় মেনে চলতে হবে। তাতেই খানিক হলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।
Keywords: Covid 19, Covid 19 Vaccine
Original Story Link: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/coronavirus-fully-vaccinated-people-can-still-spread-covid-19-at-home/photostory/87391272.cms?picid=87391293
Written By: Upasana Sarkar