ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর জন্য জরিমানা বা ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি পেতে হবে। রাশিয়ার সংসদে এই আইন পাস হওয়ার পর থেকেই কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রাশিয়ায় তাদের রিপোর্টিং বন্ধ করে দেয়। বিবিসি (BBC), ডয়েশভিলে (DW), ভয়েস অফ আমেরিকা (Voice Of America), সিএনএন (CNN) ও ব্লুমবার্গের (Bloomberg) মতো বহু গণমাধ্যমকে হয় রাশিয়া নিষিদ্ধ করেছে অথবা তারা নিজেরাই দেশটিতে সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কার্যক্রম। এছাড়াও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ফেসবুক (Facebook) এবং ট্যুইটার (Twitter) অ্যাকসেস সীমিত করেছে, বেশ কয়েকটি স্বাধীন মিডিয়া এবং ইউক্রেনীয় ওয়েবসাইট ব্লক করেছে। ইউটিউবে (Youtube) আরোপ করা হয়েছে বহুবিধ বিধিনিষেধ। বিপরীতে, ইউটিউবও সব রাশিয়ান অ্যাকাউন্টের আয়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
advertisement
সাংবাদিকদের গণ পদত্যাগ
রাশিয়ার এই অবস্থান নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এবং সত্যের বিরুদ্ধেও রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছে আমেরিকা। মস্কোর নিষেধাজ্ঞার জবাবে ট্যুইটার বলেছে যে স্বাধীন ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত মানুষের, বিশেষত সংকটের সময়ে। ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা-র (Meta) গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেছেন, লাখ লাখ সাধারণ রাশিয়ান নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন- করোনার কোন ভ্যাকসিনের কোন ডোজে কতটা ব্যবধান থাকা উচিত? যা না জানলেই নয়
রাশিয়া আইন পাস করার পর থেকে বেশ কয়েকটি রাশিয়ান মিডিয়া আউটলেটও তাদের কাজ স্থগিত করেছে। যুদ্ধের কভারেজের জন্য প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় বেশ কয়েটি ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে। স্বাধীন টিভি চ্যানেল 'ডোযড' এবং উদারপন্থী রেডিও স্টেশন 'এখো মস্কোভি' (Ekho Moskvy) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এই দুই সাংবাদমাধ্যম জঙ্গিবাদ এবং হিংসায় উস্কানি দিয়েছে এবং রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যে তথ্য ছড়িয়েছে। রাশিয়ার মুক্তমনা খবরের চ্যানেল টিভি রেইন-র (Russia TV Rain) কর্মীরা গণ পদত্যাগ করেছেন নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে।
চ্যালেনটির সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। চ্যানেলের সম্প্রচার সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় মস্কো (Moscow)। সেই মতো শেষ বার সম্প্রচার চলাকালীন সব কর্মীরা একজোটে ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে গণ ইস্তফা দেন। নোভায়া গাজেটা সংবাদপত্র, যার সম্পাদক দিমিত্রি মুরাটভ (Dmitry Muratov) গত বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের (Nobel Peace Prize) সহ-বিজয়ী ছিলেন, তিনি বলেছেন যে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাজ বন্ধ রাখবেন।
ইউক্রেন আক্রমণের আগেই রাশিয়ায় অনলাইন সেন্সরশিপ বেড়ে গিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের আগে কারাগারে বন্দি বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির সঙ্গে যুক্ত ওয়েবসাইট এবং অনলাইন প্রকাশনা সংস্থাগুলির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়। ইন্টারনেট স্বাধীনতার উপর নজরদারিকারি গ্রুপ রসকোমসববোডা-র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে রাশিয়ায় প্রায় ২ লাখ ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল ওভিডি-ইনফো ওয়েবসাইটও।
এই ওয়েবসাইট বছরের পর বছর ধরে ক্রেমলিন-বিরোধী বিক্ষোভ কভার করে এসেছে। এই বছর, ১০ মার্চ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি সাইট ব্লক করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ তথ্যের অবাধ প্রবাহ থেকে রুশদের বিচ্ছিন্নই করবে। পুতিনকে এই পদক্ষেপগুলি সাময়িক সাহায্য করলেও আগামীদিনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। ততে ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) বিরোধী ক্ষোভ ক্রমেই বাড়তে পারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের বিকল্প পথ
তবে নিষেধাজ্ঞার আহবে বিকল্পও বের হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ভিপিএন-র মাধ্যমে ব্লক থাকা সাইটগুলিতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অ্যাপল এবং গুগলের অ্যাপ স্টোর থেকে পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় ভিপিএন (VPN) অ্যাপ ডাউনলোড করেছে কয়েক মিলিয়ন বার। আগের তুলনায় চাহিদা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিজিটাল অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে পুতিন হয়তো অসাবধানতাবশত রাশিয়ায় ডিজিটাল সাক্ষরতার একটি বিশাল, স্থায়ী পরিবর্তনের জন্ম দিয়েছেন, যা বছরের পর বছর ধরে শাসনের বিরুদ্ধে কাজ করবে।