কে কীভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের?
কিন্তু সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ইউক্রেনের ডাকে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই সাড়া দেয়নি। তবে সামরিক শক্তি দিয়ে সাহায্য না করলেও ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রতি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গোটা বিশ্বের প্রথম নম্বরে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে আরও একধাপ এগিয়ে রাশিয়ায় ভিসা এবং মাস্টার কার্ডের লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করেছে আমেরিকা ব্রিটেন সহ ইউরোপের একাধিক দেশ।
advertisement
পাশাপাশি রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্শ্ববর্তী কানাডা সরকার রাশিয়ার প্রতি কঠোর অবস্থান নিতেরাশিয়ান বিমানগুলি চলাচলের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু একগুঁয়ে রাশিয়া এসব কোনও কিছুকেই আমল দিতে নারাজ। ফল স্বরূপ যুদ্ধে অনড় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)।
রাশিয়ার আকাশ পথ বন্ধের পাল্টা চাল
কিন্তু প্রাণ যায় যাক, তাতে যে রাশিয়ার কিছু আসে যায় না তা তাদের আগ্রাসন মনোভাবেই স্পষ্ট। এমনকী ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে যে দেশ তাদের সামনে আসবে তাদেরও ওই একই পরিণতি হবে বলে ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। লক্ষ্য একটাই, যেন-তেন প্রকারে করায়ত্ত করতে হবে ইউক্রেনকে। তাতে গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের কড়া মনোভাব ব্যক্ত করেছে রাশিয়া সরকার। এক প্রকার প্রতিশোধের ফলস্বরূপ ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতাশ'টি দেশ সহ কানাডাকে এক হাত নিতে পাল্টা তাদের দেশের আকাশ পথ নিষিদ্ধ করল রাশিয়া। রাশিয়ার ওই বিধিনিষেধের ফলে তাদের দেশের আকাশ পথ ব্যবহার করতে পারবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ কানাডার বিমান সংস্থার বিমানগুলি। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা রাশিয়ার এই অনমনীয় মনোভাবকে গোটা বিশ্বের প্রতি তাদের প্রতিশোধ সহ ইটের বদলে পাটকেল ছোঁড়ার নীতিকেই প্রকাশ করছে বলে মত দিয়েছেন।
ভারতীয় বিমানগুলির সমস্যা
কিন্তু কোনও কিছুতেই দমার পাত্র নয় রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার এই সাম্প্রতিক বিধিনিষেধ আরোপের ফলে ভারত থেকে আমেরিকা এবং কানাডা যাওয়ার পথে বেশ খানিকটা পথ ঘুরেই পাড়ি দিতে হচ্ছে ভারতীয় বিমানগুলিকে। জানা গিয়েছে, ভারত থেকে বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বেশ কয়েকটি বিমান সরাসরি পাড়ি দেয় আমারিকার নিউ ইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, শিকাগোতে এবং কানাডায়। যাওয়ার পথে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই দুই দেশের সীমানা পেরিয়ে ওই পথ পাড়ি দেয় ভারতীয় বিমানগুলি। শুধুমাত্র যাওয়ার পথেই নয়, ঠিক একই ভাবে ওই দেশগুলি থেকে ফেরার পথে ওই একই রুটে (Air Space) চলাচল করে একাধিক বিমান।
লাগছে বেশি সময়, বাড়ছে খরচ
এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার জন্য রাশিয়ার আকাশ সীমা (Air Space) বন্ধ হওয়ায় ভারতীয় বিমানগুলিকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে ঘুরপথে যেতে হবে বলে জানানো হয়েছে বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে। এই অবস্থায় বেশ কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, একে তো সোজা পথ বন্ধ হয়েছে ফলে নাক বেড় দিয়ে কান ধরার মতো অবস্থা, তার ওপর যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে হু-হু করে। ফলে ঘুরপথে আমেরিকা যেতে জ্বালানির খরচ হয়ে গিয়েছে দিগুণ। এমনকী ঘুরপথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে অনেকটা সময় বেশি লাগবে বলেই জানা হয়েছে বিমান সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে। এর ফলে ভারত থেকে সরাসরি নিউ ইয়র্ক এবং সানফ্রানসিসকো যাওয়ার বিমানগুলি কয়েকদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বিমানসংস্থাগুলির পক্ষ থেকে। জানা গিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া এবং ভিস্তারার বেশ কয়েকটি বিমান বর্তমানে ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত চলাচল করে। তবে ভারত থেকে ইউরোপগামী বিমানগুলি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের একাধিক জায়গা এড়িয়ে ঘুরপথে পাড়ি দিচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সংঘর্ষপ্রবণ এলাকাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমানসংস্থাগুলি।
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে বিমানসংস্থা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক করোনা আবহে চলতি বছরের শুরুতে কিছুটা স্বস্তি মেলায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ওপর সব রকমের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত সরকার। করোনাকালে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক হাল বেশ শোচনীয়। এই অবস্থায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবার মতো ব্যবসার আর্থিক হাল বেশ তলানিতে। সাম্প্রতিক করোনাপ্রবাহ কম হওয়ায় নিজেদের বেহাল আর্থিক হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয় বিমানসংস্থাগুলি। বিমানসংস্থার এই উদ্যোগকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে আর্থিক ভাবে রুগ্ন হয়ে যাওয়া বিমান ব্যবসার হাল ফেরাতে গত মাসে বিমানযাত্রীদের জন্য করোনা নিয়মবিধি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। কিন্তু সরকার কিংবা বিমান সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসার বেহাল আর্থিক হাল ফেরাতে যতই উদ্যোগ নিক না কেন, সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই উদ্যোগ কিছুটা হলেও যে ধাক্কা খাবে তা বলাই বাহুল্য।