বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতি দিন অন্ততপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট শরীর চর্চা করা প্রয়োজন। এমনকী শরীর চর্চা করতে বা ব্যায়াম করতে কোনও সমস্যা হলে নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দেওয়া দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি দিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে হাঁটলে শরীর অনেকটাই সুস্থ থাকে এবং ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। এর সঙ্গে অবশ্য সঠিক মাত্রায় খাদ্য গ্রহণও করা উচিত।
advertisement
অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার যেমন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনই বাইরের খাবার অর্থাৎ জাঙ্কফুড, স্ট্রিট ফুড ইত্যাদিও শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। শুধু তা-ই নয়, মদ্যপান থেকেও বিরত থাকা উচিত। কারণ অত্যধিক মদ্যপান অথবা ধূমপান শরীরের ওজন অত্যধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। ওজন কমানোর জন্য অনেকে অনেক রকম টোটকা ব্যবহার করেন। কেউ গ্রিন টি পান করেন, আবার কেউ কেউ লেবু দিয়ে কফি (Lemon Coffee) পান করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে, এগুলি কতটা কার্যকরী।
লেবু দিয়ে কফি পান করলে কি আদৌ ওজন কমে?
প্রত্যেকেই ওজন কমাতে ইচ্ছুক। আর শরীরের ওজন যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার জন্যই সচেতন থাকার চেষ্টা করে বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু ওজন কমানোর (Weight Loss) জন্য যা যা করণীয়, তা অনেকেই করেন না। অনেকে সঠিক পদ্ধতি (যেমন সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা) না-মেনে কিছু শর্টকাট উপায় অবলম্বন করে থাকেন।
ওই শর্টকাট পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম, জিরে ভেজানো জল খাওয়া, হলুদের ব্যবহার অথবা মধু এবং লেবুর মিশ্রণ-সহ জল পান ইত্যাদি। এগুলির নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের টোটকা সাময়িক ভাবে কাজ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। বর্তমানে আরও একটি মিশ্রণ অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, আর সেটা হল-- লেমন কফি বা লেবু মিশ্রিত কফি।
কী ভাবে এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে?
আসলে লেমন কফি নিয়ে একটি Tiktok ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এক জন Tiktok ক্রিয়েটর ওই ভিডিও-য় দাবি করেছেন যে, কফির সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলে অতি দ্রুত শরীর থেকে মেদ ঝরে যাবে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও জানান, লেবুর রস মিশ্রিত কফি খেলে মাথাব্যথা এবং ডায়েরিয়া থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এর পরেই এই ধরনের পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কিন্তু এটা কি আদৌ ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি? আসুন, সেই বিষয়ে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
লেবু এবং কফি:
লেবু এবং কফি সাধারণত প্রত্যেকের বাড়ির রান্নাঘরে প্রায় সব সময়ই পাওয়া যায়। আর এই দুই উপকরণ সহজলভ্যও বটে! দু’টোই যদি সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তা হলে তা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী হয়ে ওঠে। এমনকী মনে করা হয় যে, লেবু এবং কফি-- দু’টি খাবার ভিন্ন প্রজাতির হলেও ওজন কমাতে কার্যকরী।
সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা হয় কফি। এতে মেটাবলিজম অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ছাড়াও এটা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলে এবং মুড পরিবর্তন করে। অন্য দিকে, লেবুও স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বার করে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি নেওয়ার মাত্রার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা-- এ সব কিছুর জন্যই কার্যকরী লেবু। এ ছাড়াও ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের অন্যতম উৎস হল, লেবু। ফলে শরীর সুস্থ রাখতে লেবু দারুণ ভাবে সক্ষম।
কফির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে কি ওজন কমে?
কফির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীর সুস্থ থাকে। এই যুক্তি সঠিক? কিন্তু এই দু’টির কোনওটাই মেদ ঝরাতে সাহায্য করে না। কফির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে খিদে কমে যায় এবং মেটাবলিজম বেড়ে যায়। কিন্তু মেদ কমানোর ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকর, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
মেদ কমানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে শুধুমাত্র লেবু জল খেয়ে শরীরের মেদ কমানো সম্ভব। যখন শরীর থেকে মেদ কমতে শুরু করে, তখন শরীরে একাধিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। রাতে ঘুম ভালো হয় এবং সঠিক মাত্রায় ঘুম হয়। এর পাশাপাশি মুডও ভালো থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেকাংশেই সাহায্য করে।
লেমন কফি পান করলে কি মাথাব্যথা এবং বদহজম কমানো সম্ভব?
লেবুর রস সহযোগে কফি পান করলে মাথাব্যথা কমে এবং হজম শক্তি অনেকটাই বাড়ে। তবে এই বিষয়ে এখনও বিস্তর গবেষণা চলছে। তবে কিছু কিছু গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্য বলছে, শরীরের বেশ কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো ফল দেয় কফি।
মাথাব্যথা কমানো থেকে শুরু করে একাধিক সমস্যা দূর করে। যদিও অন্য দিকে আবার আর এক দলের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অতিরিক্ত কফি সেবন করলে মাথাব্যথা হতে পারে।
ডায়েরিয়া প্রসঙ্গেও লেমন কফির গুণাগুণ সংক্রান্ত গবেষণাতেও একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। কফি পান করলে যে হজম শক্তি বেড়ে যায়, এমন কোনও নিশ্চিত তথ্য ওই গবেষণায় পাওয়া যায়নি। কেউ ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁকে ভাত বা মুড়ি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ফলে ডায়েরিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে লেমন কফি খাওয়া একদমই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সঠিক প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। আসলে এই বিষয়ে এখনও আরও গবেষণার প্রয়োজন। তার পরেই কোনও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লেবুর রস মিশ্রিত কফি খাওয়ার পদ্ধতি:
যদিও লেমন কফি নিয়ে এখনও বিস্তর গবেষণা চলছে, তা সত্ত্বেও অনেকেই এই ধরনের পানীয় সেবনের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এই বিষয়ে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। সেই নিয়মগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-- কফিতে লেবুর রস মেশাতে হলে তা ব্ল্যাক কফিতে মেশানো উচিত।
দুধ মিশ্রিত কফিতে লেবুর রস মেশানো একদম ঠিক নয়। কারণ তাতে দুধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা পান করলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এ ছাড়াও ব্ল্যাক কফিতে লেবুর রস মেশানোর পর তাতে চিনি মেশানো যাবে না। পরিবর্তে সামান্য পরিমাণে নুন মেশানো যেতে পারে। আর সব থেকে জরুরি বিষয় হল, এই পানীয় সারা দিনে এক কাপের বেশি পান করা উচিত নয়। কারণ এতে শরীরের অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।