বস্তুত দেশের যে কোনও রাজ্যে জনগণনার সূত্র ধরে সময়ে সময়ে সীমানা প্রসারণের কাজটি সঙ্ঘটিত হতে পারে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে যাতে রাজ্যের সব অধিবাসীদের সুযোগ-সুবিধার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই এই সীমানা প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়া শুধু সীমানা প্রসারণেই সীমাবদ্ধ থাকে না, একই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় লোকসভার আসন সংখ্যাও। কী ভাবে ক'টি আসন বৃদ্ধি পাবে, সীমানা কতটা প্রসারিত হবে, সেই দায়িত্বে থাকে ডেলিমিটেশন কমিশন (Delimitation Commission); এই ব্যাপারে এই কমিশনের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে মান্যতা দেওয়া হয়।
advertisement
জম্মু ও কাশ্মীরে কিন্তু এই সীমানা প্রসারণের কাজ এই প্রথমবার হচ্ছে না। অতীতে ১৯৬৩, ১৯৭৩ এবং ১৯৯৫ সালে তা সঙ্ঘটিত হয়েছে। তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে জনগণনার কাজ হয়নি। ২০০১ সাল পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে সেই সময়ে রাজ্যে লোকসভায় মোট আসন ছিল ৮৭; ৪৬টি কাশ্মীরে, ৩৭টি জম্মুতে এবং ৪টি লাদাখে। ২৪টি অতিরিক্ত আসন সংরক্ষিত ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ক্ষেত্রে। সেই সময় থেকেই রাজ্যের জনগণনা এবং সীমানা পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। অনেকেই দাবি করেছেন যে রাজ্যে সুষ্ঠু আইনব্যবস্থা প্রচলিত রাখতে হলে সীমানা পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
বিজেপি সরকারেরও অভিমত সেই দিকেই! ফলে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে ডেলিমিটেশন কমিশন স্থাপন করা হয়েছে। যার দায়িত্বে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক রঞ্জন প্রসাদ দেশাই (Ranjana Prakash Desai)। তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ইলেকশন কমিশনার সুশীল চন্দ্র (Sushil Chandra), জম্মু ও কাশ্মীরের স্টেট ইলেকশন কমিশনার কে কে শর্মা (K K Sharma)। এছাড়া রয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদ ফারুখ আবদুল্লাহ (Farooq Abdullah), মহম্মদ আকবর লোনি (Mohammad Akbar Lone) এবং হাসনাইন মাসুদি (Hasnain Masoodi)। আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজ্যের ইউনিয়ন মিনিস্টার ড. জিতেন্দ্র সিং (Dr Jitendra Singh) এবং যুগল কিশোর শর্মা (Jugal Kishore Sharma)।
কথা মতো, ডেলিমিটেশন কমিশনের কাজ শেষ করা উচিত এক বছরের মধ্যেই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি। তাছাড়া কে কে শর্মা কমিশনে যোগ দিয়েছেন গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। সব মিলিয়ে, জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন সীমানা নির্ধারণের জন্য কমিশনকে অতিরিক্ত এক বছর মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই অনেক রাজনৈতিক নেতা এর বিরোধিতা করছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার রদ অনৈতিক- এই মর্মে শুরু থেকেই সরব তাঁরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের প্রথম বৈঠক যখন ডাকা হয়, তখন সেখানে ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদরা কেউ যোগ দেননি। সব মিলিয়ে, বিতর্ক একটা বজায় আছেই, জম্মু ও কাশ্মীরের সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হয়, তার উত্তর রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে!