বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোভিডের অনেক ভ্যারিয়ান্ট বারবার আক্রমণ করেছে। বিভিন্ন সময় আক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে কোভিডের উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ঠিক একই ভাবে কোভিডের প্রথম ঢেউ আসার সময়ে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁরা জানিয়েছিলেন স্বাদ ও গন্ধ অনুভব করতে পারছেন না। অন্য দিকে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা গিয়েছে।
advertisement
স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি (Loss of Smell) চলে যাওয়ার বিষয়টি সাময়িক নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোভিড আক্রমণের কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি ফিরে পাচ্ছেন না আক্রান্তরা। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া বিভিন্ন ভাবে মানবশরীরে প্রভাব ফেলে।
কী ভাবে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি মানব শরীরে প্রভাব ফেলে?
অন্য উপসর্গগুলির মতো স্বাদ চলে যাওয়াও করোনার একটি উপসর্গ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, স্বাদ চলে যাওয়ার কারণে কারও মৃত্যু হয় না ঠিকই কিন্তু মানবশরীরে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সেই প্রভাব হয় দীর্ঘস্থায়ী। যার প্রভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও সাধারণ জীবনধারণ ব্যাহত হয়।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার কত দিন পর্যন্ত এই সমস্যা থাকতে পারে?
এই বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন গবেষকরা। সেই গবেষণার ভিত্তিতে তাঁরা জানিয়েছেন, কোভিড ভাইরাস (Covid 19) অনুভূতির জন্য যে সমস্ত অঙ্গ থাকে সেখানেও আক্রমণ করে। যার ফলে ওই অনুভূতি গ্রহণের অঙ্গগুলি সাময়িকভাবে কাজ করতে সমর্থ থাকে না। যদিও এই বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে কোনও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এটাও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোভিড ভাইরাস নাকের সঙ্গে সংযুক্তকারী বিভিন্ন কোষে আক্রমণ চালায় SARs-COV-2। আর সেই কারণে গন্ধ পেতে সমস্যা হয় কোভিড রোগীদের। কোভিড থেকে যাঁরা সেরে উঠছেন তাঁরা রোগমুক্তির পর ফের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি বুঝতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড আক্রান্তরা এই সমস্যা থেকে সেরে উঠলেও অনেকের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক দেরি হচ্ছে। কোভিড আক্রান্ত প্রায় ১০ শতাংশ এই সমস্যায় ভুগছেন। যেখানে কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও প্রায় ৬ মাস পরেও তাঁরা স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি পাচ্ছেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দীর্ঘ সময় লাগলেও রোগীরা তাঁদের অনুভূতি ফিরে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- IPL 2021: KKR vs PBKS: প্লেঅফে পৌঁছতে কেকেআরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, দেখে নিন সম্ভাব্য একাদশ
খাদ্যাভাস এবং ওজনে কেমন প্রভাব পড়ছে?
গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি লোপ পাওয়ার বিষয়টিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অ্যানসমিয়া (Anosmia)। এই সমস্যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। খাদ্যাভাসের বদল হয়। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অরুচি আসে এবং ওজন কমতে শুরু করে।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সেই খাবারের স্বাদ ও গন্ধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে খাবারের গন্ধ অত্যন্ত ভালো থাকে এবং স্বাদ ভালো হয় সেই খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু যে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও স্বাদ পাওয়া যায় না তা অরুচির জন্ম দেয়। এক্ষেত্রেও তাই। খাবারের কোনও স্বাদ না পাওয়া গেলে কোনও কোভিড আক্রন্ত রোগীর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অরুচি আসে। তাই পরিমাণের থেকে অনেক কম পরিমাণ খাবার গ্রহণ করেন তাঁরা। এমনকী অনেক সময় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। অন্য দিকে, খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ফলে রোগীর ওজনও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তৈরি হয়। ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
এই বিষয়ে একটি গবেষণা করে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার (Virginia Commonwealth University Medical Center)। মোট ৩২২ জনের উপর তাঁরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালান। সেই রিপোর্টে প্রকাশ, কোভিডের কারণে অনেকের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি সম্পূর্ণ রূপে চলে গিয়েছে। তাঁদের খাবার খাওয়ার অভ্যাসও নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অনিচ্ছা তৈরি হওয়ায় তাঁদের ওজনও অত্যন্ত দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে। যাঁদের উপর এই গবেষণা চালানো হয় তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মোট কোভিড আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৫৫ শতাংশের মধ্যে খাবার খাওয়ার সম্পূর্ণ ইচ্ছা চলে গিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ কোভিড আক্রান্ত রোগীর ওজন হ্রাস (Weight Loss) হয়েছে। ওই গবেষক দলটি জানিয়েছে, মূলত স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি সম্পূর্ণ রূপে চলে যাওয়ার কারণেই খাবার গ্রহণে অনিচ্ছা দেখা গিয়েছে।
সম্পর্কের মধ্যেও প্রভাব ফেলে এই সমস্যা-
এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি চলে যাওয়ার প্রভাব পড়তে পারে কোনও সম্পর্কে।
অ্যাবসেন্ট (AbScent) নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। কোভিডের কারণে যাঁরা স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারিয়েছেন তাঁদের বিভিন্নরকম সহায়তা দেওয়ার কাজ করছে অ্যাবসেন্ট নামে সংস্থাটি। পুরো বিষয়টি অনলাইনের মাধ্যমে করে থাকে ওই সংস্থাটি। ওই সংস্থা থেকে যাঁরা বিভিন্ন সাহায্য নেন তাঁরা জানিয়েছেন কী ভাবে স্বাদ ও গন্ধ না থাকার অনুভূতি তাঁদের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে। সন্তান এবং সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে মধুর সম্পর্কের (Sexual Relationship) উপর প্রভাব ফেলেছে।
আসলে, গন্ধ এক মানুষকে অপরের কাছে যেতে বা ঘনিষ্ট হতে সাহায্য করে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই সমস্যারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের।
কী ভাবে গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে এই সমস্যা থেকে যেমন মুক্তি সম্ভব তেমনই ঘরোয়া বিভিন্ন টোটকা থেকেও সমাধান মিলতে পারে। কোনও সুগন্ধি তেলের গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, গন্ধ ও স্বাদ ফিরে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন থেরাপি করা যেতে পারে। তবে সবার প্রথমে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।