কোভিড ১৯ একটি সাধারণ জ্বরে পরিণত হতে পারে
বিভিন্ন ভাবে কোভিড ১৯ আমাদের উপর প্রভাব ফেলেছে। নিজের রূপ বা ভ্যরিয়ান্ট পরিবর্তন করে একই মানবদেহে বার বার আক্রমণ চালিয়েছে কোভিড। সাধারণ ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও দীর্ঘকালীন মেয়াদে বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে আক্রান্তদের। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
advertisement
সব রকম কোভিড প্রোটোকল মেনে চলার পাশাপাশি কোভিড ভ্যাকসিন দেওযার প্রক্রিয়া চলছে দ্রুত গতিতে। এই পরিস্থিতিতে মনে করা হয়েছিল কোভিড প্রোটোকল মেনে চললে সম্পূর্ণ রূপে দূর করা যাবে কোভিড। কিন্তু এখনও তা দেখা যায়নি। এবিষয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যে কী ভাবে কোভিডকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ এবং অতিমারি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সম্পূর্ণভাবে কোভিডকে নির্মূল করা হয় তো সম্ভব নয়। তবে গণহারে টিকা দেওয়া হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং কেউ কোভিড আক্রান্ত হলেও তার শরীরে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। সাধারণ জ্বরের মতোই কোভিডও সাধারণ অসুখে পরিণত হবে।
কোভিড ১৯ থেকে যাবে- এর অর্থ কী?
২০২০ সালের প্রথমের দিকে কোভিডের বিষয়টি প্রথম জানা গিয়েছিল। এবং সেই সময়ে মনে করা হয়েছিল এটি সাধারণ একটি জ্বর। জ্বর হলে যে সব উপসর্গ দেখা দেয় সেই ধরনের উপসর্গই রয়েছে কোভিডে। কিন্তু কয়েক মাস যেতেই পুরো ধারণা পরিষ্কার হয়। করোনা যে সাধারণ জ্বরের থেকেও অনেকটাই বেশি মারাত্মক তা বোঝা সম্ভব হয়। এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও করোনা এখনও রয়েছে। এবং তার মারাত্মক ক্ষমতা প্রকাশ করছে। কারণ বার বারই নিজের রূপ পরিবর্তন করে মানবদেহে হামলা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন- করোনাকালে, ভাইরাল ফিভারে কাবু? তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার টিসপ দিচ্ছেন চিকিৎসক
রূপ পরিবর্তন করার ফলে দিন দিন কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যার ফলে বিভিন্ন আশঙ্কার উদয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। ফের কোভিড মুক্ত দুনিয়া পাওয়া যাবে কি না সে নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কারণ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ঘরবন্দি অবস্থা প্রায় প্রত্যেকের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষ যখন এই নিয়ে আশাবাদী, মনে করছেন, সম্ভবত ফের আগের পৃথিবী ফিরে আসবে, তখন কিন্তু এই নিয়ে যে সব বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন তাঁদের ধারণা আগের মতো পৃথিবী ফিরে পাওয়া হয় তো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠবে। গবেষকদের ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন মনে করছেন কোভিড কোনও দিনই হয় তো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হবে না। আগামী বিশ্বে কোভিডকে নিয়েই বাঁচতে হবে। তবে এটাও তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার অর্থ যে মৃত্যু বা সারা জীবন অসুখ ভোগ করে চলতে হবে এমনটাও নয়। পুরোটাই নির্ভর করছে যাঁর শরীরে কোভিড আক্রমণ করছে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন আছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের দৌরাত্ম্য
করোনার অনেকগুলি ভ্যারিয়্যান্ট প্রকাশ পেলেও সবথেকে মারাত্মক রূপে আক্রমণ চালিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট অথবা B1.617.2। এই ভ্যারিয়্যান্টে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এবং অনেক সময় শারীরিক পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তরফে জানানো হয়েছে, অতীতের করোনা রূপগুলির থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট প্রায় ২ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের শারীরিক পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়। এমনকী, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও অনেক বেশি।
ইদানিং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা World Health Organization জানিয়েছে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৩০টি দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট দেখা গিয়েছে।
করোনা কি সাধারণ জ্বরের মতোই পরিগণিত হবে?
বিজ্ঞনীরা একপ্রকার নিশ্চিত যে করোনা এত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হবে না। এবং গণহারে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হলে তা সাধারণ জ্বরে পরিণত হবে। আগামী দিনে করোনা আক্রান্ত
হলে তা সাধারণ জ্বর বলেই পরিগণিত করা হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যেহেতু ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে দ্রুতগতিতে তাই করোনা আক্রান্ত হলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি, করোনা টিকা নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলে তাঁর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভবনা অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
টিকাকরণ-ই কি একমাত্র উপায়?
করোনা যে একটি রুটিন রোগে পরিণত হয়েছে সেই বিষয়ে প্রায় অনেকেই নিশ্চিত। তবে যত দ্রুত সম্ভব নিজের ভ্যাকসিন গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে।
অনেকেই প্রথমের দিতে ভ্যাকসিন নিতে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ভ্যাকসিন নেওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। ভ্যাকসিন নিলে তবেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের ক্ষেত্রে কোভিড মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারেনি। এমনকী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও প্রয়োজন হয়নি।
CDC-র তরফে জনানো হয়েছে, যাঁরা কোভিড ভ্যাকসিন নেননি তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা একজন টিকা নেওয়া ব্যক্তির থেকে ১০ গুণ বেশি। এবং ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১১ গুণ বেশি।
ভ্যাকসিনের জোগানে সমস্যা
অনেকেই অভিযোগ করেছেন সঠিক ভাবে করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, তাঁদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, গরিব ও বড়লোকের বিভাজন করে করোনা ভ্যাকসিন বণ্টন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গোটা দেশে সমান ভাবে করোনা ভ্যাকসিন সমান ভাবে বণ্টন করা হচ্ছে। কোনও রকম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ভেদাভেদ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না।