প্রশ্ন- প্রথমেই জানতে চাইব, রবীন্দ্রসংগীত গাইবেন সেটা ঠিক করলেন কবে?
দেখুন সবার প্রথমে আমি একজন অভিনেত্রী, মানুষকে বিনোদনের মাধ্যমে আনন্দ দেওয়াই আমার কাজ। এত দিন অভিনয় করতে না পেরে, খারাপ লাগছিল। দর্শককে কিছু উপহারও দিতে চাইছিলাম। রবীন্দ্রসংগীতের চেয়ে ভাল কী হতে পারে। বাঙালি আর রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কতটা নিবিড়, সেটা সকলেই জানেন। তাই ঠিক করলাম, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইব। গিটারের সঙ্গে খালি গলাতেই গানটা গেয়েছি। 'আমারও পরাণও যাহা চায়', আমার খুব প্রিয় গান।
advertisement
প্রশ্ন- রবীন্দ্রসঙ্গীত আর আপনার একটা যোগ রয়েছে, আপনি যতই সফল ছবি করুন আপনাকে সকলে পুপে বলেই ডাকবে।
সে তো বটেই। বহু দিন ধরেই অনেকে বলেছেন, যে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে আমার কিছু করা উচিত। ওই যে 'গানের ওপারে'-এর বিষয়টা রয়েছে, তাই হয়তো। আর জানেন লকডাউনের মধ্যে আমি গোটা ধারাবাহিকটা দেখলাম। গানগুলো এত সুন্দর ভাবে শুট করা হয়েছে। দেখে মনে হল এবার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কিছু করা উচিত। দু’তিন দিনের মধ্যে করে ফেললাম। রেকর্ডিংও বাড়িতে করেছি। আমার টিমকে বললাম, শুট করব। ছোট একটা ইউনিট নিয়ে করে ফেললাম কাজটা।
প্রশ্ন- আচ্ছা, অভিনয় করা ও গান গাওয়া, দুটো পৃথক শৈলি, দুটোর জন্য কী আলাদা প্রস্তুতি প্রয়োজন?
গান, অভিনয় দুটো খুবই আলাদা। আমি গান গাইতে ভালবাসি, কতটা পারি, জানি না। ছোটবেলা বাড়িতে গানের চর্চা ছিল, গুনগুন করে যেটুকু শিখেছি। অভিনয় বেশ কয়েক বছর করছি। গানে তেমন প্রশিক্ষণ নেই, তাই গানের জন্য একটু বেশি খাটি।
প্রশ্ন- অভিনয়, গান, সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব, সব কিছু একসঙ্গে পালন করেন কী করে? তার মধ্যে করোনা, কয়েকদিন আগে আমফান হয়ে গেল, সব সামলানো কঠিন নিশ্চয়ই?
দেখুন, দায়িত্ব সারা জীবন থাকবে। সব কিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই আসল। সেটাই চেষ্টা করি। খুব খারাপ ব্যালান্স করছি, মনে হয় না। বাকি দায়িত্ব পালন করছি, তবে অভিনয় করতে পারছি না। শিল্পী হিসেবে এই কষ্টটা হচ্ছে। তাই মিউজিক ভিডিও করে নিজের শিল্পী সত্তাকে একটু রসদ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। বাকিটা আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন- মিউজিক ভিডিওটা শুট করতে কেমন লাগলো? কারণ আগের মতো পরিস্থিতি আর নেই, নতুন বিধি মেনে শ্যুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন?
দেখুন রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে আমাকে বেরোতেই হয়। আমফানের পর বিশেষ করে আরও বেশি বেরোতে হচ্ছে। তাই 'নিউ নরমাল'-এর সঙ্গে আমি অভ্যস্ত। তবে শ্যুটিং করার ব্যাপারটা একেবারে আলাদা। বাইরে কাজে বেরিয়েছি যখন, সবসময় মাস্ক পরে ছিলাম। শ্যুটিং করলে সেটা সম্ভব নয়। অথচ আমার সঙ্গে কলাকুশলী যে ক'জন ছিলেন, সকলের মুখে মাস্ক। একটা ভয় কাজ করছিল ঠিকই। আগে মুখে চুল উড়ে এলে হাত দিয়ে সরিয়ে দিতাম। কিন্তু এবার শ্যুটিং করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, হাত দেব কী দেব না। আগে স্যানিটাইজার নিলাম। চোখে, মুখে হাত দেব কিনা এত সংশয়, এভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়ে যায়। শ্যুটিং করতে গিয়ে এই ব্যাপারটা অনুভব করলাম।
প্রশ্ন- আপনি একটা কয়েক মিনিটের ভিডিও বানাতে গিয়ে এটা অনুভব করলেন। যখন গোটা ছবি করবেন, সেটা আরও কঠিন হবে, তাই না?
জানেন, শ্যুটিং করার সময় এই কথাটাই ভাবছিলাম। যেখানে বসছি সেই জায়গাটা স্প্রে করে দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। শ্যুটিং করে যেই শান্তি পেতাম, সেটা আর নেই। এই ভিডিওটা করার সময়, মোট ১০ জন ছিলেন স্পটে, তাতেই এত ভয় করছিল। পুরো ইউনিট নিয়ে যখন শুট করব, সেটা কেমন হবে আমি ভাবতেই পারছি না। লাইট, ক্যামেরা, কস্টিউম, খাবার সব ডিপার্টমেন্ট আলাদা। আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয় সকলে বিধি নিষেধ মানছেন কিনা। নিজে সতর্ক থাকব। তবে বিষয়টা সোজা হবে না।
প্রশ্ন- করোনায় বিনোদন জগতের খুব ক্ষতি হয়ে গেল, এই ব্যাপারে কী বলবেন?
প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা শিল্পীরা সতর্কতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভিডিও বানিয়েছি। যে যাঁর সামর্থ মতো কলাকুশলীদের আর্থিক সাহায্য করেছি। তবে এটা সমাধান নয়। শ্যুটিং শুরু করতেই হবে। ধারাবাহিকের শ্যুটিং শুরু হল। ছবির শ্যুটিং কী ভাবে হবে, সেটা সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন- এই মহামারীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য, অভিনেত্রী মিমির মধ্যে কী কোনও বদল এসেছে? চিত্রনাট্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে, কী মাথায় রাখবেন?
অভিনয় করার খিদেটা প্রবল। ভাল চরিত্র করতে চাইব। কিন্তু চিত্রনাট্যের পাশাপাশি নিরাপত্তাটাও এখন বিচার করব। প্রযোজনা সংস্থাগুলো কতটা বিধি নিষেধ মেনে কাজ করবে, সেদিকে নজর দেব। সারাক্ষণ যদি এটা ভাবতে হয়, কে হাত ধুয়ে এলো, কে এলো না। কে স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে, কে করছে না, নিজের হাতটা মুখে দেব, কী দেব না, তাহলে আমার দ্বারা অভিনয়টা হবে না। তাই কবে কাজ করতে পারব বুঝতে পারছি না।