আরও পড়ুন: সেন্ট জেভিয়ার্স কাণ্ডে জনরোষ! উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ
শিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রোষ সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে। অনলাইনে সই সংগ্রহ চলছে, গণদাবি, ভিসির অপসারণ। অজস্র মানুষ সই করেছেন সেই পিটিশনে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে উদ্দেশ্য করে এই পিটিশন দাখিল করছেন তাঁরা।
advertisement
নিউজ18 বাংলা যোগাযোগ করল এই কলেজেরই প্রাক্তন চার পড়ুয়া এবং ইন্ডাস্ট্রির তারকাকে। জেনে নেওয়া যাক তাঁদের প্রতিক্রিয়া।
সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় (জেভিয়ার্সে পড়াশোনা করছেন এখনও)- এই পুরো ঘটনাটায় আমি ভীষণ ভাবে লজ্জিত। অনেক পড়ুয়া প্রচণ্ড রেগে গিয়েছে। এটাতে সমাজ হিসেবে আমরা আরও বেশি পিছিয়ে গেলাম। এক জন মহিলা কেমন পোশাক পরেছিলেন, সেটা নিয়ে যদি তাঁর কর্মদক্ষতাকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে সেটা খুবই লজ্জাজনক। তাও সেটা তিনি পোস্ট করেছিলেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে, কলেজে চাকরি পাওয়ার আগে। সেটার স্ক্রিনশট তুলে একটা কমিটি ভর্তি লোকের মাঝে প্রিন্ট আউট ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে পুরুষ-মহিলা সকলেই ছিলেন। এটাকে তো আমি যৌন হেনস্থা বলে মনে করি। আমরা সকলেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই। তা ছাড়া যে ছাত্রের বাবা অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর পরিচয় লুকিয়ে মস্ত ভুল করা হচ্ছে। কলেজে কোন পড়ুয়া এক জন তাঁকে কেমন ভাবে দেখছে, তা জানাটা দরকার শিক্ষিকার। তার মানে মহিলা হয়ে আমি ক্যাম্পাসে নিরাপদ নই! এমন এক জন ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে তো আমাদের মতো ছাত্রীরাও নিরাপদ নই।
সোহিনী সেনগুপ্ত (জেভিয়ার্সে বিএড করেছেন)- আমি দু'তরফের সম্পূর্ণ বক্তব্য না জেনে মন্তব্য করি না। তবে যতটুকু জেনেছি, তাতে বলব, সাঁতার কাটার সময়ে স্যুইমস্যুট না পরে আর কী পরব? এক জন মহিলা যদি মনে করেন, তাঁকে এমন একটি পোশাক পরলে দেখতে ভাল লাগে, তা হলে অবশ্যই পরবেন। তার বিচারে তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়াটা অনুচিত। আমাদের সময়ে এই কলেজ খুবই উদারমনস্ক ছিল। খুব আনন্দ করে পড়াশোনা করেছি আমি। তবে হ্যাঁ, একই সঙ্গে শিক্ষকতায় আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দায়িত্ববান হতে হবে। আমি নিজে এক জন শিক্ষিকা, আবার এক জন অভিনেত্রীও বটে। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার কাজ নিয়ে সকলেই খুব খুশি। প্রশংসাও পাই। আশঙ্কাও থাকে। 'আয় খুকু আয়' ছবিতে আমার চরিত্রটি গালিগালাজ দিয়ে কথা বলে। অভিনয় করার সময়ে আমার মনে হচ্ছিল, আমার মেয়েরা বুঝতে পারবে তো যে এটা চরিত্রের জন্য করতে হয়েছে আমায়? এগুলো মাথার মধ্যে থাকেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কখনও এমন ভাবে চাকরি থেকে বের করে দেবেন না আমায়, সেটাও জানি।
নীল ভট্টাচার্য (জেভিয়ার্সের প্রাক্তন ছাত্র)- শিক্ষিকা হলেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। সেটিকে সম্মান দেওয়া উচিত। কেউ যদি কলেজের মধ্যে এ রকম পোশাক পরে আসেন, তা হলে না হয় আপত্তি জানানোর অবকাশ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যে দেশে থাকি, সেখানে সকলেরই নিজের মতামত জানানোর, নিজের পছন্দ মতো পোশাক পরার স্বাধীনতা রয়েছে। তাই সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো কলেজে এই ভাবে কারও চাকরি চলে যাওয়াটাকে সমর্থন করতে পারছি না। যদিও আমি নিজে সেই ছবিটিও দেখিনি। মিটিংয়ে তাঁদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে, সেগুলিও জানি না। তাই সবটা না জেনে বিস্তারিত মন্তব্য না করাই ভাল।
দেবলীনা কুমার (জেভিয়ার্সের প্রাক্তন ছাত্রী)- একদম সমর্থন করছি না এই ঘটনাটি। আমি নিজে এক জন সেই কলেজের ছাত্রী। কখনও এ এমন ঘটনা ঘটেনি। হ্যাঁ পড়ুয়াদের জন্য পোশাকের কড়াকড়ি ছিল। সেটাকে কোনও দিন অতিরিক্ত বলে মনে হয়নি। তা বলে এক জন শিক্ষিকা নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কী করবেন, সেটার জন্য তাঁর চাকরি চলে যাবে, এটা খুবই ভয়ের। আমিও এক জন শিক্ষিকা, আমারও তো এখন অস্বস্তি হবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার আগে। সব ছাত্রছাত্রীর মানসিকতা এক রকমের হয় না। কে কী ভাবে গ্রহণ করবে, সে নিয়ে চিন্তাই রয়েই যায়। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হবে, এ রকম আশঙ্কা কাজ করে না। আমি কলেজের অধ্যাপিকা, এবং আমার বয়স কম, তাই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতেই হয়, সেটা ঠিক। কিন্তু দুটো পেশা একেবারে আলাদা আমার। আমি আশা করব, সেটা সবাই বুঝবেন। যদি কারও দুটো আলাদা পেশা না-ও হয়। তাও এক জন নারী বা পুরুষ তাঁর ব্যক্তিগত প্রোফাইলে কী পোস্ট, সেটা তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত।