তসলিমা লিখছেন, "পশ্চিমবঙ্গের এক সেলেব্রিটি সুন্দরী নায়িকা, অনুমান করা হচ্ছে যে, বয়ফ্রেন্ডের সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিল, এবং সেই সন্তান গতকাল প্রসব করেছে। বয়ফ্রেন্ড কেয়ারিং স্বামীর মতো তার পাশে পাশে আছে। নায়িকার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলে, তার সন্তানকে স্বাগত জানালে এখন তড়িঘড়ি প্রগতিশীল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে মানুষ। আপারক্লাস এবং রিচ সোসাইটিতে এ বড় কোনও সমস্যা নয়। আপারক্লাস এবং রিচ সোসাইটিতে হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কও বড় কোনও সমস্যা নয়। সমস্যা মধ্যবিত্ত সমাজে। নিম্নবিত্ত সমাজেও সমস্যা। হতদরিদ্রদের মধ্যে এ আবার কোনও সমস্যা নয়। প্রাসাদবাসি এবং হোমলেসরা মোটামুটি একই রকম স্বাধীনতা অথবা থোড়াই কেয়ার করা ভোগ করে।"
advertisement
তসলিমা আরও বলছেন, "যে মধ্যবিত্তরা আজ সেলেব্রিটির নবজাতককে স্বাগত জানাচ্ছে তাদের অনেকেই হয়তো বিনা ওয়েডলকে নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নবাজাতককে স্বাগত জানাবে না বা পড়শির কোনও নবজাতককে স্বাগত জানাবে না, বা পুরুষটি মুসলমান হলে মেয়েটি হিন্দু হলে স্বাগত জানাবে না। সমাজ থেকে তো কুসংস্কার, পুরুষতন্ত্র, সাম্প্রদায়িতা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি।"
সেলিব্রিটিরা কখনওই সমাজের আয়না নয়। দাবি তসলিমার। এই বিষয়ে তিনি বলছেন, "সমাজের আয়না কারা তা আমরা একেবারে জানি না তা নয়। যারা স্বামীহীন অবস্থায় জরায়ুর ভেতরে বড় হতে থাকা ভ্রূণকে সমাজের ভয়ে যে কোনও উপায়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দূর করে, গর্ভপাত ঘটায়, তারা।"
নুসরতের সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরছেন তসলিমা। তাঁর মতে এই ঘটনা আলাদা করে প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরে না। তসলিমার কথায়, "ভয়ংকর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের বাচ্চা নেওয়া, সে বিনা বিবাহে হোক, বয়ফ্রেন্ডের ঔরসে হোক, খুব বড় কোনও প্রগতিশীলতা নয়। বরং নিতান্তই পুরোনো ট্রাডিশান। আসলে গর্ভধারণ না করাটাই, সন্তান জন্ম না দেওয়াটাই এই সমাজের জন্য, এই সময়ের জন্য, সবচেয়ে উপযুক্ত আধুনিকতা এবং প্রগতিশীলতা।"