শঙ্কর ও সোনালি দু’জনেই ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া৷ সোনালি ছিলেন নৃত্য বিভাগে৷ শঙ্করের বিষয় ছিল নাটক৷ ১২৫ তম রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ‘তাসের দেশ’ মহড়ার সময় আলাপ৷ তার পর ক্রমেই আলাপ থেকে প্রেম গাঢ় হয়ে ওঠে৷ তখন সোনালি স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী৷ শঙ্কর ছিলেন স্নাতক স্তরে৷ বয়সে অবশ্য তিনিই বড়৷ কিন্তু মাঝে পড়াশোনায় তাঁর বিরতি পড়েছিল৷ রবীন্দ্রভারতীতে পড়ার সময় অল্পবিস্তর অভিনয়ও করতেন শঙ্কর৷ কিন্তু বিয়ে করে সংসার শুরুর জন্য তা নিতান্তই সামান্য৷ তবুও সাহসে ভর করে সোনালিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েই দিয়েছিলেন কর্মহীন শঙ্কর৷ বলেছিলেন চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করবেন৷
advertisement
চাকরি অবশ্য এসেছিল বিয়ের পর৷ ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন শঙ্কর-সোনালি৷ তার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান শঙ্কর৷ কিন্তু কেরানির চাকরিতে কোনওদিনই মন বসেনি তাঁর৷ বাধ্য হয়েছিলেন সংসারের মুখ চেয়ে চাকরি করতে৷ শুধু অর্থ নয়, বিয়ের পর দেখা দিল মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েও সমস্যা৷ খড়দহে যে বাড়িতে মাকে নিয়ে শঙ্কর থাকতেন, সেখানে স্থান সঙ্কুলান৷ অনেক খুঁজেও পাননি বাড়ি ভাড়া৷ শেষে যে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে বেরিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িরই একতলায় গোডাউন পরিষ্কার করে শুরু হয়েছিল তাঁদের নতুন সংসার৷ আবার এক সময় নবাগত অভিনেতা হিসেবে জীবন সংগ্রামের সময় সোনালির কলকাতার ত্রিকোণ পার্কের বাড়ির চিলেকোঠায় থাকতেন শঙ্কর৷ কারণ খড়দহ থেকে কলকাতায় যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য ছিল৷
আরও পড়ুন : প্রয়াত অভিনেত্রী সোনালি চক্রবর্তী, বিনোদন জগতে শোকের ছায়া
শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অভিনয়ের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন শঙ্কর-সোনালি৷ সেই একনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা থেকে বউভাতের দিনও নাটকে অভিনয় করেছেন সোনালি৷ আগেই নির্ধারিত ছিল নাটকের দিন৷ এদিকে সেদিনই বউভাত৷ আপত্তি তো দূর অস্ত্৷ বরং, শঙ্করই সাহায্য করেন নবপরিণীতা সোনালিকে৷ যাতে তিনি ‘মৃচ্ছকটিক’-এ বসন্তসেনার ভূমিকায় মঞ্চে আবির্ভূত হতে পারেন৷ দূরদর্শনের সেই সাক্ষাৎকারে শঙ্কর জানান বউভাতের সকালে অনুষ্ঠানের পর তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন সোনালিকে৷ তার পর সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদনে নাটকে অভিনয়ের পর রাতে তাঁরা ফিরেছিলেন খড়দহে৷ গিয়ে দেখেন ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছেন বন্ধুবান্ধবরা৷
আরও পড়ুন : অভিনেত্রী সোনালি চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, সমবেদনা জানালেন পরিবারকে
জীবনের ওঠাপড়ায় আরও প্রগাঢ় হয়েছে শঙ্কর-সোনালির দাম্পত্য৷ অভিনয়ের টানে চাকরি ছেড়েছেন শঙ্কর৷ নিজেকে অতুলনীয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিবাহ অভিযান’-এর ‘গণশা’৷ ছবি-টেলিছবি-ধারাবাহিকের দুনিয়ায় উজ্জ্বল মুখ ছিলেন সোনালিও৷ এক সময় শঙ্করের তুলনায় তিনিই ছিলেন বেশি ব্যস্ত ও পরিচিত৷ কিন্তু পরবর্তীতে মেয়ে সাজির জন্য ধীরে ধীরে অভিনয় করা কমিয়ে দেন সোনালি৷ আজ শঙ্কর ও সোনালির একমাত্র মেয়ে সাজি মুম্বইয়ের সহকারী পরিচালক৷ বাংলা টেলিভিশনে কিছু অভিনয়ও করেছেন তিনি৷ স্বামী শঙ্কর ও মেয়ে সাজিকে নিয়ে সাজানো সংসার পড়েই রইল৷ সোনালি চলে গেলেন বহু দূরে৷ শঙ্কর-সোনালির রসায়নের স্পর্শ রয়ে গেল দর্শকদের মনের কোণায়, ‘বরিশালের বর কলকাতার কনে’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার স্মৃতিমেদুরতায়৷