TRENDING:

International Mother Language Day: 'হঠাৎ রেডিওয় শুনলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে', ১৯৭১-এর স্মৃতি ফিরল শিল্পী শুভেন্দু মাইতির গলায়

Last Updated:

21 February: আজ কলকাতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে ভদ্রলোক মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য কথা বলছেন, তিনি তাঁর নাতিকে মঞ্চ থেকে নেমেই নিয়ে যাচ্ছেন ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করাতে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠছে, বলছেন শুভেন্দু।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: শিল্পী শুভেন্দু মাইতি মাঠে-ময়দানের গাইয়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যা শুরু হয়েছিল এক ভাষার অধিকারের লড়াইকে কেন্দ্র করে, তা দেখেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর কথায় ফিরে এল সেই দিনের স্মৃতি। মুক্তি সেনার বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি ও তাঁর বন্ধু শিল্পীরা যখন গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠান করছেন, তখন হঠাৎই রেডিওয় শুনেছিলেন, স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। কথোপকথন অনুলিখন করলেন উদ্দালক ভট্টাচার্য।
গ্রাফিক - উদ্দালক ভট্টাচার্য
গ্রাফিক - উদ্দালক ভট্টাচার্য
advertisement

কেমন ছিল সেই দিনগুলো?

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা থেকে একটা রেডিও স্টেশন চলত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আমি সেখানে মাঝে মাঝে যেতাম। সেখানেই আমার সঙ্গে আলাপ হয় ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফকির আলমগীর ও অজিত রায়ের। ১৯৭১ সাল, মুক্তি যুদ্ধ চলছে পুরোদমে। আমি ওদের আমন্ত্রণ জানাই যে, আমার গ্রাম নন্দীগ্রামে আমরা থাকব, ক্যাম্প করে, কিছু দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা আমরা ওখানকার স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটা একটা গ্রামে ঢুকব, সেখানে গান বাজনা করব, সারাদিন আমরা মুক্তি সংগ্রামের সপক্ষে প্রচার করব। যে শরণার্থী শিবিরগুলি আছে, সেগুলির জন্য আমরা টাকা-পয়সা সংগ্রহ করব। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে থেকে আমরা কাজ করতে শুরু করি। অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে কাজটা চলতে থাকে। তখন যুদ্ধ চলছে। মনে পড়ে ১৬ ডিসেম্বরের কথা। আমার গ্রামেই অনুষ্ঠান চলছিল। সন্ধ্যে বেলা। আমি চা খেতে বাইরে এসেছিলেন। সেই সময় শুনি রেডিওতে ঘোষণা করা হয়েছে, স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। পরাজিত হয়েছে খান সেনারা। তখন অনু্ষ্ঠানের মঞ্চে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী গাইছিলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে খবরটা দেওয়ার পর পুরো পরিবেশটা পাল্টে যায়। কান্নাকাটি, আনন্দ, সব মিশে গিয়েছিলে সেদিন। সেদিন দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছিল, শুধু বাংলাদেশের মানুষ এই যুদ্ধ জিতল না, মেদিনীপুরের সেই লোকেরাও যুদ্ধটা জিতল। তাদের প্রত্যেকেই সেই যুদ্ধ জয়ের আনন্দ পেলেন। তার পর থেকে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফকির আলমরা কলকাতায় এলে আমার বাড়িতে থাকতেন, আমার বাংলাদেশের সঙ্গে এক মধুর সম্পর্ক তৈরি হল। এখনও আমাকে বাংলাদেশ যেতে হলে ভিসার লাইনে দাঁড়াতে হয় না। বাংলাদেশ আমাকে 'মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু' বলে ডাকে। বাংলাদেশের প্রায় ২৯টি জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, বাংলাদেশের মাটিকে চিনতে চেয়েছি।

advertisement

আরও পড়ুন: আনিসের মৃত্যু তদন্তে DSP পদমর্যাদার আধিকারিক, নির্দেশ DG-র, কী উঠে এল ময়না তদন্ত রিপোর্টে?

বাংলা ও বাঙালির যোগ প্রসঙ্গে...

মুক্তি সংগ্রামের সময় হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল আমার দেশ। এই সংযোগটা যেমন এই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। আর এই যোগ শুধু ভাষার কারণে নয়, বাঙালি এই কারণে। বাঙালি বাংলাদেশের যুদ্ধকে এক আত্মমুক্তির সংগ্রাম বলে মনে করেছিল। প্রত্যেকে মনে করেছেন, শুধু বাংলাদেশের বাসিন্দাদের নয়, মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। যে হেতু সেই লড়াইটার জন্ম হয়েছিল ভাষাকে কেন্দ্র করে, তাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল বাঙালি। তবে পশ্চিবঙ্গের বাঙালি ততটা বাঙালি হয়ে উঠতে পারেনি, যতটা বাংলাদেশের বাঙালি পেরেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙালির পরিচয় তো বাংলাদেশের জন্যই। আমাদের কিন্তু বাঙালি পরিচিতি নেই, আমরা ভারতীয়। বাঙালি বলতে বিশ্ব বাংলাদেশকেই চেনে। যদিও কেউ কেউ মুখ ফস্কে বাঙালি আর মুসলমানকে আলাদা করে ফেলেন। না, সেই ফারাক কিন্তু নেই। মনে রাখতে হবে বাঙালির হয়ে, বাঙলা ভাষার হয়ে লড়াইটা লড়েছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

advertisement

আরও পড়ুন: নবান্নে ডেকে পাঠালেন মমতা, প্রস্তাব ফেরালেন আনিস খানের বাবা

কে হিন্দু, কে মুসলমান..

এখান থেকেই মেরুকরণ, হিন্দু-মুসলমানের ভাগ বাটোয়াঁরার প্রসঙ্গ আসে। আমার মনে হয়, বাঙালির পরিচয় ছিলই অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্ত্বা হিসাবে। এই জাতির চরিত্রের এটাই সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল। যদিও এখন সেখানে জামাতের ক্ষমতা বৃদ্ধি হচ্ছে, শাসকদলের মধ্যেও জামাতের লোকেরা ঢুকছে। তথাপিও বলব, লড়াইটা কিন্তু আগে ওখানেই ছিল। মৌলবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই চলেছিল। আমরা কিন্তু সেই অর্থে সেই লড়াই লড়তে পারিনি, মানে এপার বাংলার বাঙালিরা লড়তে পারিনি। বাঙালির বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্ত্বার লড়াইটা অনেকদিন আগে থেকে লড়ছিলেন বাউল, ফকির, দরবেশরা। ভদ্রলোকেরা লড়াই করেনি। তিনশো বছর ধরে এই লড়াই লড়ে গিয়েছে।

advertisement

আজকের একুশে...

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
​'শুভ বিজয়া' সন্দেশ স্পেশালে মন মজেছে জনতার! বর্ধমানের মিষ্টির দোকানে ভিড়
আরও দেখুন

আজ কলকাতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে ভদ্রলোক মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য কথা বলছেন, তিনি তার নাতিকে মঞ্চ থেকে নেমেই নিয়ে যাচ্ছেন ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করাতে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গের এই প্রজন্মের ছেলেপুলেদের বাংলা শুনতে কেমন লাগে? বিজ্ঞাপনে যে বাংলা ব্যবহৃত হচ্ছে, তার বাংলাগুলো শোনা যাচ্ছে। এখন নাকি বাঙালির তেজ খুঁজতে হলে বিশেষ ব্র্যান্ডের তেলে যেতে হয়, কিন্তু আমাদের তাতে লজ্জা হয় না। এত বড় আত্মবিস্মৃত জাত, আমি এভাবে নিজেকে বাঙালি বলে সুখী হই না। কী হবে সত্যিই জানি না।

advertisement

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
International Mother Language Day: 'হঠাৎ রেডিওয় শুনলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে', ১৯৭১-এর স্মৃতি ফিরল শিল্পী শুভেন্দু মাইতির গলায়
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল