সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বয়স নব্বই। আর লতা চলে(Lata Mangeshkar | Sandhya Mukhopadhyay) গেলেন বিরানব্বইয়ে। ১৯৫০ সালে বম্বে যান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শচীন দেব বর্মণের সুরে গান করার জন্যই। কলকাতা থেকে যোগসূত্র আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রথম শচীন দেব বর্মণের সুরে নয় গান গাইলেন অনিল বিশ্বাসের সুরে। ছবির নাম 'তরানা'। এই ছবিতেই গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। এই ছবির সূত্র ধরেই দুই গায়িকার পরিচয়। 'বোল পাপিহে বোল রে' এই গান এক সঙ্গে গেয়েছেন লতা-সন্ধ্যা।
advertisement
সে সময় বম্বেতেই এক হোটেলে উঠেছিলেন সন্ধ্যা(Lata Mangeshkar | Sandhya Mukhopadhyay)। আলাপের পরেই লতা মাঝে মধ্যেই সেই হোটেলে এসে দেখা করতেন সন্ধ্যার সঙ্গে। সেখানেই দু'জনে গান নিয়ে গল্প জুড়তেন। তখন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নামী শিল্পী ছিলেন রোশেনারা বেগম। তাঁর গান খুব পছন্দ ছিল লতাজির। তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে সে সময়কার বলিউডের অনেকের গান নকল করেও শুনিয়েছেন। হাসি ঠাট্টায় এভাবেই মেতে উঠতেন তাঁরা।
কিছুদিন পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকতে তাঁর মা যান বম্বে। সে সময় লতা প্রায় চলে আসতেন। মায়ের হাতের রান্না খেতে। লতা শুনিয়েছেন তাঁর জীবনের লড়াইয়ের গল্প। কী ভাবে পুরনো ছেঁড়া চটি, আর মাত্র দুটো কাপড় দিয়েই চলত তাঁর জীবন। অনেকেই তাঁকে বলেছেন 'বড্ড সরু গলা'। কিন্তু লতা হেরে যাননি। এই লড়াইয়ের গল্প সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মনে ভালবাসার জন্ম দিয়েছিল। বলিউডে লতাজি কখনই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান গাওয়া আটকাতে চাননি। তাঁরা তো ছিলেন প্রাণের বন্ধু। বরং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজেই কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন। সে সময় কলকাতা থেকে বম্বে যেমন অনেকে যেতেন, তেমন অনেকেই থেকে যেতেন কলকাতার মায়ায়। ওই অঞ্জন দত্তর 'প্রিয়বন্ধু'র মতো, 'পারবো না ছাড়তে আমার ছাপোষা জীবন, নোনা ধরা দেওয়ালের গন্ধ।'
আরও পড়ুন: সেই কবেকার কথা! শেখ মুজিবের পাশে লতা, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে
২০০১ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়(Lata Mangeshkar | Sandhya Mukhopadhyay)। সে সময় তিনি নিজে বলেছিলেন, 'লতা নাকি আমার বিরুদ্ধে পলিটিক্স করেছে? এ কথা একেবারেই মিথ্যে। বরং আমি যখন মুম্বই গেছি ও সবার আগে ছুটে এসেছে আমার কাছে।"
যখন তাঁদের দেখা সাক্ষাৎ আর হত না। সে সময় ফোনে কথা হত। ফোনে গান গেয়ে শোনাতেন লতাজি। এই বন্ধুত্বে হিংসে কখনই আসতে পারে না। তাছাড়া তাঁরা দু'জনেই কিংবদন্তী। হিংসের মতো ছোট শব্দ তাঁদের জন্য নয়। সন্ধ্যা-লতা এসবের উর্দ্ধে এক স্বপ্ন মাখা জগতে বাস করেছেন। যেখানে প্রাণ খোলা বন্ধুত্ব ছিল, ছিল ভালবাসার ছোট গল্প।