নববর্ষ বলতে এখন আমার কাছে শুধুই একরাশ নস্টালজিয়া। এই দিনটার হাত ধরেই যেন এক ছুটে শৈশবে ফিরে যাওয়া যায়। তখন স্মৃতির পাতা উল্টে দেখে নিই ফেলে আসা মুহূর্তগুলো। তখন হোয়াটসঅ্যাপের টুংটাং ছিল না। ছিল না সেলফি তোলার হিড়িক। নতুন জামার গন্ধ আর ছুটির আমেজই যেন সব!
ছোটবেলায় আমার পয়লা বৈশাখ কাটত মামাবাড়িতে। সেখানে খুব ধুমধাম করে বাংলা নববর্ষ পালন করা হত। সকাল থেকেই রান্নাঘরে চরম ব্যস্ততা। রকমারি মাছের পদ, কষা মাটন, ধোঁয়া ওঠা ভাত, আরও কত কী! শিলে বাটা মশলা আর ফোড়নের গন্ধে ম ম করত সারা বাড়ি। আর আমি থাকতাম সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায়। সূর্য ডুবলেই নতুন জামা পরে তৈরি হয়ে নিতাম। এর পর বাড়ির বড়দের সঙ্গে হালখাতা করতে যাওয়ার পালা। তখন যদিও 'হালখাতা' শব্দটার অর্থই বুঝতাম না। ভাবতাম, বছরের অন্য সময়ে পরিচিতদের বাড়িতে নেমন্তন্ন থাকে। কিন্তু শুধু এই দিনটায় দোকানে কিছু কিনতে নয়, বরং অতিথি হয়ে যেতে হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: নববর্ষে সুখবর! নতুন সদস্য আসছে পরিবারে, বেবি বাম্পের ছবি দিলেন গর্ভবতী ঋদ্ধিমা
আরও পড়ুন: কবিগুরুর কাছে পয়লা বৈশাখ ছিল নবজন্ম, শেষ জন্মদিন-ও পালিত হয়েছিল পয়লা বৈশাখের দিন
ছোটবেলায় বাড়িতে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ার চল ছিল না। মা বরাবরই খুব স্বাস্থ্য সচেতন। শুধু সেই দিনই কাচের বোতলে রঙ-বেরঙের ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার ছাড়পত্র মিলত। তখন সেই স্বাধীনতাটাই যেন সব কিছু। কী যে খুশি হতাম! রকমারি মিষ্টির প্যাকেট হাতে করে ফিরতাম মামাবাড়িতে। তার পর মাটন কষা দিয়ে পেটপুজোর পালা।
এখন আর এ সব কিছুই নেই। দাদু-দিদা প্রয়াত হয়েছেন। চলে গিয়েছেন মামীরা। নববর্ষ এখন হোয়াটসঅ্যাপের ফ্যামিলি গ্রুপে এসে ঠেকেছে। তাও চেষ্টা করি এই দিনটায় মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে আসার।
আজ যদিও শ্যুট করছি। তবে নিয়ম মেনে নতুন জামা পরে সেটে এসেছি। অন্যান্য দিন আমরা নিজেদের খাবার সঙ্গে আনি। তবে আজ একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা। কিন্তু যা কাঠফাটা গরম! এই অবস্থায় তেল-ঝাল-মশলা নৈব নৈব চ! সেদ্ধ ভাত আর ডাল দিয়েই ভুরিভোজ হবে আমাদের। যতই সময় গড়াক, বয়স বাড়ুুক, এই দিনটা নিয়ে উচ্ছ্বাস কখনও ফিকে হবে না।