Poila Baisakh: কবিগুরুর কাছে পয়লা বৈশাখ ছিল নবজন্ম, শেষ জন্মদিন-ও পালিত হয়েছিল পয়লা বৈশাখের দিন

Last Updated:

গ্রীষ্মের ছুটির কারণে পঁচিশে বৈশাখ নাগাদ শান্তিনিকেতনের আশ্রম চত্বর খাঁ খাঁ করত! সে বার কবির ৭৫ তম জন্মদিন, সে-বছর গরমের প্রচণ্ড দাবদাহ! তাই কবির সম্মতি নিয়েই আশ্রমিকরা ঠিক করেন ১৯৩৬ সালে নববর্ষের দিন বর্ষবরণের পর কবির জন্মদিন পালন করা হবে। প্রস্তাবে কবিও রাজি হয়ে যান। এরপর থেকে নববর্ষের দিনই শান্তিনিকেতনে কবির জন্মদিন পালিত হত

অষ্টাদশ শতকে ইয়ংবেঙ্গলের বাবু কালচারের যুগে পয়লা বৈশাখের দিন কলকাতার উঠতি জমিদারের দল মেতে উঠত মোচ্ছবে! ইংরেজদের খুশি করতে বসত বাইজি নাচের আসর, দেদার খানা-পিনা, ছুটত মদের ফোয়ারা! অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি বাঙালি হিন্দু সমাজে নববর্ষ পালিত হত প্রবল ধর্মীয় ভাবাবেগের মধ্যে। আসলে সেই প্রাচীন সময় থেকেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের যে ছবি ধরা পড়ে, দেখা যায়, একে ঘিরে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বাঙালির উদ্দীপনা মাঙ্গলিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে। একবিংশ শতাব্দীতেও পয়লা বৈশাখের দিন ব্যবসায়ী, পুরোহিত ও আমজনতার মধ্যে ধর্মচারনের সেই ছবি অটুট থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে বিশ শতকের শেষেই নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনে এল মননশীলতার ছোঁয়া। যা ছিল বাণিজ্যিক, তা-ই আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে শৈল্পিক রূপে ধরা দিল। স্বতন্ত্র সেই ধারার প্রবর্তক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
পয়লা বৈশাখ কবির কাছে ছিল নবজন্ম। পুরনো জীর্ণ জীবনকে ভুলে গিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশের সুন্দর অনুভূতি। ১৯৩৯ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন শ্যামলী-প্রাঙ্গণে সকালবেলায় কবি বলেন, ‘নববর্ষ-ধরতে গেলে রোজই তো লোকের নববর্ষ। কেননা, এই হচ্ছে মানুষের পর্বের একটা সীমারেখা। রোজই তো লোকের পর্ব নতুন করে শুরু।’
নতুন বছরের প্রথম দিনটি শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর হাত ধরে নৃত্য, গীতি ও নাট্যাভিনয়ের মধ্যে দিয়ে এক নতুন রূপ পেল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরপরিবারের নানা নথিপত্র থেকে জানা যায়, মহাসমারোহে উদযাপিত হত পূণ্যাহ বা নববর্ষের অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, '' সেদিন যাকে বলে জমিদারি সেরেস্তার 'পূন্যাহ', খাজনা আদায়ের প্রথম দিন। কাজটা নিতান্তই বিষয়-কাজ। কিন্তু জমিদারি মহলে সেটা হয়ে উঠেছে পার্বণ। সবাই খুশি। যে খাজনা দেয় সেও, আর যে খাজনা বাক্সেতে ভর্তি করে সেও। এর মধ্যে হিসেব মিলিয়ে দেখবার গন্ধ ছিল না। যে যা দিতে পারে, তাই দেয়।'' ১৮৯২ সালে সাজাদপুর থেকে একটি চিঠিতে রবি ঠাকুর লিখলেন, '' আজ আমাদের এখানে পূণ্যাহ-- কাল রাত্তির থেকে বাজনা বাজছে।'' ১৩৩০ সনের পয়লা বৈশাখে শান্তিনিকেতনে নববর্ষের অনুষ্ঠানে কবি বলেছিলেন—
advertisement
advertisement
‘...নতুন যুগের বাণী এই যে,তোমার অবলোকের আবরণ খোলো, হে মানব, আপন উদার রূপ প্রকাশ কর। ’
গ্রীষ্মের ছুটির কারণে পঁচিশে বৈশাখ নাগাদ শান্তিনিকেতনের আশ্রম চত্বর খাঁ খাঁ করত! সে বার কবির ৭৫ তম জন্মদিন, সে-বছর গরমের প্রচণ্ড দাবদাহ! তাই কবির সম্মতি নিয়েই আশ্রমিকরা ঠিক করেন ১৯৩৬ সালে নববর্ষের দিন বর্ষবরণের পর কবির জন্মদিন পালন করা হবে। প্রস্তাবে কবিও রাজি হয়ে যান। এরপর থেকে নববর্ষের দিনই শান্তিনিকেতনে কবির জন্মদিন পালিত হত। এমনকী ১৯৪১ সালের পয়লা বৈশাখেও পঁচিশের শঙ্খধ্বনি বেজেছিল। নাতি সৌমেন্দ্রনাথের দাবি রক্ষায় কবি লিখলেন মানবের জয়গান, ‘ঐ মহামানব আসে’। সূর্য্যোদয়ের খানিক আগেই মন্দিরে উপাসনা আরম্ভ হয়। আবাসিকদের গানে মুখর হয়ে ওঠে প্রাঙ্গন। এর মধ্যে দুটি গান কবিগুরু এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিশেষভাবে রচনা করেছিলেন — ‘হে পুরুষোত্তম’ এবং ‘এস হে মহামানব’। কবির শেষ জন্মদিন, অর্থাৎ ৮০ তম জন্মদিন-ও পালিত হয়েছিল পয়াল বৈশাখের দিন। সে বার কবিগুরু হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন উদয়নগৃহে। তাঁর সামনেই ‘সভ্যতার সঙ্কট’ পাঠ করেছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন।
advertisement
প্রায় সাত দশকের বেশি সময় ধরে পয়লা বৈশাখে পালিত হত রবীন্দ্র জন্মোৎসব। তার পরে বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগের নির্দেশে নতুন নিয়ম চালু হয়, ১৫ মে’র আগে গরমের ছুটি দেওয়া যাবে না। এ দিকে, ২৫ বৈশাখ সাধারণত মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই পড়ে। কাজেই, এই নিয়ম চালু হওয়ার পর ফের ২৫ বৈশাখ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পালন করা শুরু হল  বিশ্বভারতীতে। সেই রীতি এখনও চলছে।
advertisement
ঋণ: রবীন্দ্রজীবনী - প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবিজীবনী - প্রশান্তকুমার পাল, রবীন্দ্রস্মৃতি - ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা - সরলাদেবী, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল - চিত্রা দেব, চিঠিপত্র - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ - কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত, অধ্যাপক অর্মত্য মুখোপাধ্যায়
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Poila Baisakh: কবিগুরুর কাছে পয়লা বৈশাখ ছিল নবজন্ম, শেষ জন্মদিন-ও পালিত হয়েছিল পয়লা বৈশাখের দিন
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে ! দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে
  • ভারী বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে !

  • দক্ষিণবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলবে

  • কলকাতা-সহ বাকি অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে রবিবার পর্যন্ত

VIEW MORE
advertisement
advertisement