সন্ধ্যার আড্ডা বসবে, আর একটু খাওয়া-দাওয়া হবে না ! তা তো আর হতে দিতে পারেন না হেমন্তবাবু ৷ তিনি আসতে না আসতেই তাই চলে আসত ভাঁড়ে চা আর পূর্ণ ঘোষের খাস্তা শিঙাড়া ৷ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক লাগিয়ে হেমন্তেবাবু বললেন, ‘শোন মন্টু তোর হলে তো অনেক জায়গা ৷ সামনেই তো পয়লা বৈশাখ ৷ একটা জমজমাট জলসা করা যায় না?’’ সবাই তো হেমন্তবাবুর সেই প্রস্তাবে দারুণ খুশি ৷ কিন্তু জলসা জিনিসটা আসলে কী, তখনও জানেন না কেউই ৷ আসলে তখনও এ দেশে তেমনভাবে জলসা শুরু হয়নি ৷ তবে হেমন্তবাবু চাইতেন বিরাট কিছু একটা হোক ৷ হেমন্তবাবুর এক কথায় রাজি ছিলেন মন্টু বসু ৷ আর হেমন্তবাবু কথা দিয়েছিলেন, যদি বোম্বেতেও থাকেন পয়লা বৈশাখের সময় বসুশ্রীর জলসা হাজির হবেনই ৷ সেই থেকে শুরু হল বসুশ্রী সিনেমা হলে পয়লা বৈশাখের জলসা ৷ আর প্রতিবার উপস্থিত থেকেছেন এই জলসার প্রাণ পুরুষ।
advertisement
আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার সম্পর্কটা কী? জানুন ইতিহাস
সে এক অন্য ব্যাপার ৷ এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন বহু মানুষ ৷ এই আসরের তো টিকিটের কোনও ব্যাপার ছিল না ৷ হল খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাউসফুল ৷ অনুষ্ঠানের দিন ভোর থেকে বাঙালিরা এসে ঠাই গাড়তো বসুশ্রীর সামনের ফুটপাথে ৷ বাংলা বছরের প্রথম দিনে বাঙালির সেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো ৷ ভিড়ের চাপে বন্ধ হয়ে যেত গোটা এলাকা ৷ এক বছর তো উত্তম কুমারকে জলসায় আনায় মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায় ৷ এরপর থেকে সোজা গেট দিয়ে উত্তমবাবুকে আর জলসায় আনা হত না ৷ এমনকী ঘোষণাও করা হত না যে তিনি আসছেন ৷ হলের পিছনের গেট দিয়ে আনা হত মহানায়ককে ৷ তবে হাজার হাজার লোক হলের ভিতর ঢুকতে পারতেন না, তাই হলের সামনে রাস্তায় উপর সামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা হত ৷ লাগানো হত বেশ কতগুলো মাইক ৷ সেই মাইকেই তখন শোনা যেত উত্তম কুমারের গলা ৷ শোনা যেত হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিংবা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ৷ সেখানেই ভিড় জমাতেন সাধারণ মানুষ।
সে সময় এই জলসাই ছিল পয়লা নম্বরে ৷ কত যে তাবড় তাবড় তারকা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না ৷ শ্যামল মিত্র থেকে শুরু করে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই জলসার পরিচিত নাম ৷ আর শিল্পীরাও এই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতেন ৷ লতা মঙ্গেশকরকেও একবার এই জলসায় আসতে দেখা গিয়েছিল। সবটাই করতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। স্বর্ণযুগের শিল্পীরা এখনও এই অনুষ্ঠান নিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ভোগেন ৷ সে দিনগুলো স্মৃতিতে অমলিন এখনও ৷ বসুশ্রী হলের সেই জলসা ছাড়া যেন পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যে হতেই পারে না। পয়লা বৈশাখ মানেই সে সময় ছিল বসুশ্রী হলের জলসা। ইতিহাসের পাতায় আজও অমলিন এই জলসার স্মৃতি।