গেম শো-র সেটে দাঁড়িয়ে নন্দিনী জানান কীভাবে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়াশোনা করেও তিনি চলে এসেন পাইস হোটেলের ব্যবসায়। বলেন, তাঁর বাবার একটা ছোট্ট রাবার ফ্যাক্টরি ছিল। কিন্তু নোটবন্দির সময় সেটা বন্ধ হয়ে যায়। বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অকূল পাথারে পড়ে তাঁদের পরিবার। একে একে শেষ হয়ে যায় তিল তিল করে জমানো সঞ্চয়। মায়ের অলঙ্কার। প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার।
advertisement
পরিবারের উপর এই আঘাত সহ্য করতে পারেননি নন্দিনী। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীর প্যারালাইসিসের শিকার হয়। যখন সুস্থ হলেন তখন বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিবারের হাল ধরতে গুজরাতে চাকরি নিয়ে চলে যান নন্দিনী। এদিকে তাঁর বাবা মায়ের জীবনে শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। বাড়িতে গোপন করে তাঁর বাবা ডালহৌসিতে একটি রুটির দোকানে সহকারীর চাকরি নেন, দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে। ক্রমে তিল তিল করে সঞ্চয়ের পর একটি দোকানঘর ভাড়া নেন তাঁরা। সেখানেই নন্দিনীর বাবা মা শুরু করেন পাইস হোটেল। কিন্তু এর পর পরই তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন : চৌকিদারের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে গোপন নির্দেশ, ঐতিহাসিক এই বাড়িতে ছড়িয়ে নেতাজির অজস্র স্মৃতি
বাবার কাছ থেকে মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েই গুজরাত থেকে ফিরে আসেন নন্দিনী। চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি পাইস হোটেলের ব্যবসায় মন দেন তিনি। হাল ধরেন ব্যবসার। জানিয়েছেন তাঁর বাবা কাকভোরে উঠে চলে যান পাইস হোটেলে। তার পর যান তাঁর মা। সকাল ৯ টা নাগাদ পৌঁছে যান নন্দিনী। রান্নার যোগাড় যন্ত্র সব বাবা মা করে রাখলেও রান্না করেন নন্দিনী নিজে। বাঙালি হেঁসেলের স্বাদ সযত্নে পরিবেশন করেন তিনি। তাঁর বিপণির ক্যাচলাইন হল বাঙাল রান্নার আসল স্বাদ বাঙালের হাতে খেতে আসতে হবে তাঁর দোকানে।
নন্দিনীর পাইস হোটেল এখন ভাইরাল ফুড ভ্লগারদের সৌজন্যে। তার সরাসরি রেশ পড়েছে ব্যবসাতেও। নন্দিনী জানালেন আগে তিনি দৈনিক ৩০ প্লেট রান্না করতেন। ক্রেতা আসত ১০-১৫ জন। কপাল ভাল হলে ২০-২৫ জন। কিন্তু এক মাসের মধ্যে সেই সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০ প্লেটে। খাবার পরিবেশন করছেন ৭০ জনকে।
কেন এই আকাশছোঁয়া পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরে নন্দিনী যা বলেছেন, তাতেই ট্রোলড হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন এটা তাঁর জীবনে মিরাক্যল। তার পর অবশ্য বলেন ফুড ব্লগারদের দৌলতেই তাঁর ভাইরাল হয়ে পড়া। কিন্তু সরাসরি তাঁদের কৃতিত্ব না দেওয়াতেই ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। পাশাপাশি, নন্দিনীকে দিদি নাম্বার ওয়ান-এর মতো শো-এ সুযোগ দেওয়ারও পক্ষপাতী নন অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, নিজের সৌন্দর্যের সুযোগ নিচ্ছেন নন্দিনী। আরও অনেকেই যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে অন্নসংস্থান করছেন, তাঁদেরও আলোকিত করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
