সৌরেন্দ্র বললেন, ‘‘দেখুন, আমরা মিউজিক্যালি এত ছোট যে ওঁর মতো একজন শিল্পীর মূল্যায়ন আমরা কী করব? ওঁর সম্পর্কে আমাদের সম্পর্ক বোধহয় ১৫ বছরের৷ উনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন৷ আমাদের এত প্রশ্রয় দিতেন, আমাদের মিউজিককে এত ভালবাসতেন, আশীর্বাদ করতেন৷ আমারা যখন, যে রকম আবদার করেছি, কোনওদিন না বলেননি৷ আমরা ওঁকে বলেছি যে, খাঁ সাহেব আপনি অন স্টেজ আমাদের সঙ্গে কিশোর কুমারের গান করুন৷ সেটা আমরা রিহার্সাল করেছি, তিনি গেয়েছেন৷ বলেছি রবীন্দ্রনাথের গান করুন, অন স্টেজ, লাইভ৷ একমাস ধরে রিহার্সাল করে গেয়েছেন৷ আমরা ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ গাইয়েছি৷ আর তিনিও ওঁর স্কুলের জন্য আমাদের বলেছেন, ওখানে একটা ওয়ার্কশপ করতে৷ এই আদানপ্রদানের মধ্যে দিয়ে আমরা যে কত কী শিখেছি, তার শেষ নেই৷’’
advertisement
আরও পড়ুন – Ustad Rashid Khan Demise: সঙ্গীত জগতে ইন্দ্রপতন! পৃথিবী ছেড়ে অন্য সুরলোকে উস্তাদ রাশিদ খান, ৫৫-তেই সব শেষ
তাঁরা এখন কলকাতা থেকে অনেক দূরে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সৌরেন্দ্র বললেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে রায়পুরে, একটা অনুষ্ঠানে এসেছি৷ আপনারা জানেন, এই যে দু’টি জগতের তারতম্য, একটা স্বাভাবিক জীবন আর একটা মঞ্চের জগত৷ আমরা প্রতিদিন সেই মঞ্চের জগতে প্রবেশের আগে, পণ্ডিত রাশিদ খাঁ সাহেবের গান ইয়ারফোনে শুনে তবে স্টেজে উঠি৷ এটা আমাদের একটা প্রথা বলতে পারেন৷ কোথাও একটা মনে হয়, এটা করলে বোধহয় আমাদের অনুষ্ঠানটাও ভাল হবে৷ আর কোথাও এই যে একটা অন্তরের সুর তাঁর গানে আছে, সেটা সবসময় বেঁধে দেন আমাদের৷ ফলে রাশিদ খাঁ সাহেব শুধু একজন ফেলো মিউজিশিয়্যান যাঁর সঙ্গে আমরা কাজ করেছি, তেমনটা নন৷ আমরা বিশ্বাস করি এটা অন্তর থেকে যে তিনি যতবার গান করেছেন, তত বার আমরা বুঝতে শিখেছি যে ঈশ্বর আছেন৷ ওঁর সুর, ঈশ্বরের সুর ছিল৷’’
সৌমজিৎ বলেন, ‘‘মানুষ হিসাবে ভীষণ প্রগতিশীল ছিলেন তিনি৷ যদি তিনি একজন শাস্ত্রীয় শিল্পী, তবুও তাঁর চিন্তার ভিতরে এ যুগের আধুনিকতা ছিল৷ বারবার বাঁধ ভাঙার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ ওঁর সাম্প্রতিক কালেও উনি সাউন্ডস্কেপ নিয়ে এতটা ভাবনা চিন্তা করেছেন, যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কনসার্টেও নিজের মতো করে ভেঙে নতুন কিছু করার চিন্তা তিনি করেছেন৷ যে আমাদেরকে খুব উৎসাহ দিয়েছে৷’’
সৌরেন্দ্র বলেন, ‘‘আজকেও আমরা গান করব৷ উস্তাদজি নেই, শুধু মাত্র এই তাৎক্ষণিক সত্যিটা হয়ত আমাদের তাড়া করবে দীর্ঘদিন, কিন্তু, তিনি তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে, সুরের মধ্যে আমাদের কাছে থেকে যাবেন আজীবনের মতো৷ উস্তাদজিও থাকবেন আমাদের সঙ্গে৷’’