বিতর্কিত সেই নাচের অন্যতম শিল্পী অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত৷ তিনি নাচ পরিবেশন করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্যের আনন্দ তথা বৌদ্ধ ভিক্ষুর ভূমিকায়৷ তাঁর সহ-শিল্পী হিসেবে চণ্ডালিনীর ভূমিকায় ছিলেন এক প্রতিযোগী অনুষ্কা৷ কিন্তু দেখা গিয়েছে, মূল রবীন্দ্রসৃষ্টি থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছে তাঁদের পরিবেশন৷ প্রকৃত চণ্ডালিকার দু’টি চরিত্র ছাড়া প্রায় কিছুই সেখানে নেই৷ এখানেই শেষ নয়৷ সমাজে অস্পৃশ্য ব্রাত্য ‘চণ্ডালের ঝি’-এর হাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুর জলপান করার মুহূর্তে বাজছে ‘আঁধি’ সিনেমার ‘তেরে বিনা জিন্দগী সে কোই শিকবা তো নহীঁ’! এবং সেই গানের সঙ্গে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও চণ্ডালিনীর ভূমিকায় অভিনয়-সহ নাচছেন দেবলীনা ও অনুষ্কা৷ নাচের ভঙ্গিও ফিল্মি৷
advertisement
সঞ্জীবকুমার এবং সুচিত্রা সেনের যুগলবন্দিতে পর্দায় অমর হয়ে থাকা এই গানকে আচমকা রবীন্দ্রসৃষ্টিতে এভাবে ঢোকানোর পর সব মহলে চরমে উঠেছে নিন্দার ঝড়৷ সমালোচকদের মত, ফিউশনের নামে এই পারফর্ম্যান্স অপসংস্কৃতি৷ এহেন পারফরম্যান্সের প্রশংসা কীভাবে করতে পারলেন মমতাশঙ্করের মতো প্রখ্যাত শিল্পী? প্রশ্নে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া৷
অবশেষে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শিল্পী৷ তাঁর ফেসবুক পেজে তিনি জানিয়েছেন, দর্শকরা তাঁর উপর যত না বিরক্ত এবং হতাশ, তাঁদের থেকে তিনি নিজে বেশি বিরক্ত ওই পারফরম্যান্স দেখে৷ প্রথমেই স্পষ্ট করে বলেছেন কাজের সূত্রে, সম্পর্কের খাতিরে এবং নিজেদের স্বার্থেই তাঁকে যেতেই হয় এই ধরনের রিয়্যালিটি শো-এ৷ কিন্তু রবীন্দ্রসৃষ্টির এই অবমাননা কোনওমতেই তিনি সমর্থন করেন না৷ মেনে নিতেও পারেন না৷ দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়েছেন তিনি৷ শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই নয়৷ রিয়্যালিটির শো-এও প্রতিবাদ করেছেন তিনি৷ দাবি শিল্পীর৷ কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সেই অংশ বাদ দিয়ে এডিট করে তাঁর বক্তব্য সম্প্রচার করেছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ৷
মমতাশঙ্কর আরও জানান নাচের প্রতিযোগিতা সমর্থন করেন না বলে এই ধরনের কোনও শো-এ বিচারক হয়ে যান না তিনি৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমি কীভাবে প্রমাণ করব যে সেখানে ওই চণ্ডালিকা দেখে সকলের সামনে আমি কী বলেছিলাম? যে এটা আমার একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না৷ এবং এটা ঠিক নয়৷ এই গানের সঙ্গে চণ্ডালিকার কোনও সম্পর্ক নেই৷ এটার কোনও জাস্টিফিকেশন নেই৷ ওখানে আর যাঁরা ছিলেন তাঁরা আমার সঙ্গে সহমত হয়েছিলেন৷ আমরা অনেকেই বলেছিলাম৷ আমি সবার প্রথমে বলেছিলাম৷’’ শিল্পীর আক্ষেপ, তিনি জানেন তাঁর প্রকৃত মতামত কোনওদিন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করবে না৷ প্রতিযোগীদের উপর মমতাশঙ্করের কোনও রাগ বা অভিযোগ নেই৷ কিন্তু কোরিওগ্রাফারদের উপর তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন৷
প্রসঙ্গত ডান্স বাংলা ডান্স-এর ওই পর্বে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী ছাড়াও বিচারকের আসনে ছিলেন অঙ্কুশ হাজরা, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত এবং কৌশানী মুখোপাধ্যায়। তবে সমাজমাধ্যমে সবথেকে বেশি ট্রোলড হয়েছেন মমতাশঙ্কর৷ ট্রোলিংয়ে কষ্ট লাগলেও তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না-সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি৷ কারণ তিনি বিশ্বাস করেন তাঁকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন তিনি নাম কেনার জন্য, জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কিছু করেন না বা বলেন না৷ তাই দ্বিধাহীন কণ্ঠে জানিয়েছেন ডান্স বাংলা ডান্স-এ পরিবেশিত ওই নাচ তিনি মানতে পারেননি কোনও দিন এবং আজও পারেন না মেনে নিতে৷