ভাগ্য? না, চেষ্টাই সব। আর সেখানেই বদলের বীজ নিহিত থাকে। অভিজিৎ চৌধুরী পরিচালিত ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ জীবনের সেই অনন্ত সম্ভাবনার কথা বলে। যেখানে ধ্রুবরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগেও সাধারণ মানুষের ‘নায়ক’ হয়ে যায়।
advertisement
‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে
বাংলা সিনেমায় এক্সপেরিমেন্টাল বা সমান্তরাল ধারার ছবির সংখ্যা হাতে গোনা, আর সেই বিরল ধারায় সাহসী সংযোজন এই ছবি। আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালমুখী সিনেমার প্রতি বাঙালির আকর্ষণ নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিজের ভাষায় এমন একটি গল্প বলা, যা আন্তর্জাতিক মানের—সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
অভিজিৎ চৌধুরী পরিচালিত ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ জীবনের অনন্ত সম্ভাবনার কথা বলে।
অভিজিৎ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর কথায়, “নিজেদের পছন্দের ছবি বানানোর ইচ্ছে থেকেই এই সৃষ্টি। যে ধরনের আন্তর্জাতিক ছবি দেখে অভ্যস্ত, সেই ঘরানার সিনেমা আমরা কেন করতে পারব না? আমার সৌভাগ্য, যে প্রযোজক বন্ধুরাও ছবি ভালবেসেই ছবিতে বিনিয়োগ করেন, ব্যবসার জন্য নয়। তার পর সবাই মিলে ছবিটা তৈরি হয়ে গেল ভাল ভাবেই। এবার দেখা যাক, দর্শক কতটা ভালবাসা দেন!” ছবিটি ইতিমধ্যেই একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরস্কৃতও হয়েছে।
কেন্দ্রীয় চরিত্র ধ্রুবর ভূমিকায় ঋষভ বসু নিজেকে বারবার ভেঙেছেন, শেষ হয়েছেন, আবার গড়েছেন। এই চরিত্রের জন্য ঋষভকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পরিচালক বলেন, “ওর মধ্যে একধরনের সংবেদনশীলতা আছে, যা ধ্রুব চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।”
প্রিমিয়ারে, নায়ক ঋষভ বসুর এন্ট্রি!
ছবিতে ধ্রুবর প্রেমিকার ভূমিকায় অসম্ভব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ঋত্বিকা পাল। রাজনীতি, আর্ট, দুর্ঘটনা কিংবা শৈশবের ভয়াবহ অতীত পেরিয়ে প্রতি অধ্যায়ে আলাদা আলাদা ধ্রুব আর রিমি বার বার নিজেদের কাছেই ফিরে আসে। ছবির ৪টি অধ্যায়, যা ভিন্ন ঘটনার আখ্যান বুনে নিয়ে আসে, কিন্তু কোথাও যেন এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। প্রেম, সম্ভাবনা, হার-জিতের এই খেলা শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায়? সে উত্তর আছে শেষে। অথবা নেই, শুধু ভেসে থাকা। ঋষভের কথায়, “ধ্রুব তো ৫০ জনের সঙ্গে লড়াই করতে পারে না, নায়িকাকে বাঁচাতেও পারে না। সে সাধারণ মানুষ। আর ৫ জন সাধারণ মানুষ যা করতে পারে, সেও তা-ই পারে। শুধু চেষ্টা, চেষ্টা আর চেষ্টা…।”
ধ্রুব ও রিমি, যারা বার বার নিজেদের খুঁজে পায়। (ঋষভ বসু ও ঋত্বিকা পাল)
নিজের জীবনের সঙ্গেও কি মিলে যায়? ঋষভ অকপটে জানান, যায় বইকি! তাঁর কথায়, “আমাদের প্রত্যেকের জীবনে হেরে যাওয়া থাকে, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকে। আমার অনেক ছবি বক্স অফিসে ফ্লপ করেছে, রিলিজ আটকেছে। আগের খুব প্রিয় যে ছবি ছিল তার প্রিমিয়ার হয়নি। কিন্তু আজ হয়েছে। আরও এক কারণে এই ছবি স্পেশাল, কারণ ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’- অভিনয় করেই শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি এনএবিসিতে!”
না, কোনও স্পয়লার নয়। তবে, ছবিটি দেখতে দেখতে মনে আসছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের অমোঘ সেই পঙক্তি ‘নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে’…জীবনের এই কঠিন সত্য ভারী চমৎকার ভাবে বাস্তব করে তুলেছেন পরিচালক এবং এই ছবির প্রতি কলাকুশলী। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে বাদশা মৈত্র, কোরক সামন্ত, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, যুধাজিৎ সরকার, আনন্দরূপা চক্রবর্তী, দীপক হালদার, শান্তনু নাথ, অরুণাভ খাসনবিশ, সেজুতি মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপস্থিতি দর্শককে টানটান মুহূর্ত উপহার দেবে। এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটার প্রেরণা দাসের উপস্থিতি বিশেষ চমক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটার প্রেরণা দাসের প্রথম ছবি এটি!
সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রলয় সরকার। তিমির বিশ্বাস এবং প্রলয়ের গাওয়া গান ছবির আবহে দারুণ মানানসই। সিনেম্যাটোগ্রাফির দায়িত্বে অর্ণব লাহা, যিনি অসাধারণ দৃশ্যগ্রহণের মাধ্যমে গল্পকে আরও জীবন্ত করে তুলেছেন। ভিএফএক্সের কাজ করেছেন শুভায়ন চন্দ্র।
গত ডিসেম্বরে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেঙ্গলি প্যানোরমা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছিল ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২৮ ফেব্রুয়ারি, তার আগের দিন সাউথ সিটি মলের আইনক্সে গ্র্যান্ড প্রিমিয়ার হয়ে গেল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন টলিউডের প্রথম সারির বহু শিল্পী ও নির্মাতা। যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেছে ফোর্থ ফ্লোর এন্টারটেনমেন্ট ও কনসেপ্ট কিউব।
মোটের উপর, ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ দেখলে মনে হবে, বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলা ছবির কোনও দুর্বলতা নেই। অজস্র সম্ভাবনা ছুঁয়ে যেতে যেতে এ ছবিই সোচ্চারে জানিয়ে যায় বাংলা ছবির আগামীর সম্ভাবনার কথা।