দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারতীয় যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্ত্রীদের জন্য তহবিল সংগ্রহে চলচ্চিত্র জগত আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গান (Aye Mere Watan Ke Logo) গেয়েছিলেন লতা (Lata Mangeshkar)। শোনা যায়, সাড়ে ছয় মিনিটের গানটি গাইতেই পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর চোখ ছলছল করে উঠল। গানটির (Aye Mere Watan Ke Logo) সুর করেছিলেন সি রামচন্দ্র। তবে গানটিকে ঘিরে অনেক অজানা গল্পও রয়েছে।
advertisement
সিগারেটের বাক্সের অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে লেখা হয় গানটি:
গানটির রচয়িতা কবি প্রদীপ জানিয়েছিলেন, মুম্বইয়ের মাহিম সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই “অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো” গানটি লাইনগুলি তাঁর মাথায় আসে। হাতের কাছে না ছিল পেন, না ছিল কাগজ। পথচারী একজন অপরিচিতর থেকে কলম ধার চান প্রদীপ। তারপর সিগারেটের বাক্সের অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে লিখে ফেলেন বিখ্যাত লাইনগুলি।
আরও পড়ুন- ছুটে গেলেন হেমন্ত কুমার, অবশেষে রাজি হলেন লতা, ইতিহাস তৈরি করল ‘বন্দেমাতরম’!
লতা এবং সুরকারের মতপার্থক্য:
ঠিক হয়েছিল লতা মঙ্গেশকর গানটি গাইবেন এবং সি রামচন্দ্র সুর দেবেন। কিন্তু সুরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় গানটি না গাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন লতা।
তখন আশা ভোঁসলেকে গানটি গাইতে বলা হয়। কিন্তু প্রদীপ অনড় ছিলেন, লতাকে দিয়েই গানটি গাওয়াবেন। তাঁর মতে, লতার কণ্ঠই একমাত্র এই গানটির অনুভূতিকে ধরতে পারবে, তা প্রসার করতে পারবে। প্রদীপ লতাকে শেষমেশ গানটি গাইতে রাজিও করান।
গানটি প্রথমবার শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন লতা:
প্রথমবার গানটি শুনে লতা নিজেই কেঁদে ফেলেছিলেন বলে জানা যায়। তক্ষুণি গানটি গাইতে রাজি হন তিনি তবে শর্ত দেন যে প্রদীপকে উপস্থিত থাকতে হবে রিহার্সালে।
আরও পড়ুন- চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী, রয়ে গেল সুরেলা-সাম্রাজ্য! শুনুন লতার সেরা গানগুলি...
লতা এবং আশার কথা ছিল গানটি গাওয়ার:
গানটি শোনার পর লতার পরামর্শ ছিল যে দ্বৈতকণ্ঠে গানটি গাওয়া উচিত। কিন্তু প্রদীপ চেয়েছিলেন লতা একাই গানটি গাইবেন। লতা এবং আশা দু’জনেই গানটির রিহার্সাল দিলেও আশা পরে গানটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। লতা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও আশা রাজি হননি। শোনা যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও চেষ্টা করে আশাকে রাজি করাতে পারেননি। এরপর দিল্লিতে একাই গানটি গেয়েছিলেন লতা।
রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এবং প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর উপস্থিতিতে লতা যখন ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গানটি গান চোখ ছলছল করে ওঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর।
১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পেয়ে বিমর্ষ হন কবি প্রদীপ। এর মাস দুই পরে, যখন নেহেরু একটি স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য মুম্বই আসেন, তখন কবি প্রদীপ তাঁর সামনে এই গানটি গেয়েছিলেন। নিজের হাতে লেখা এই গানটি নেহেরুকে উপহারও দেন তিনি।