লতা মঙ্গেশকর জন্মগতভাবে বাঙালি ছিলেন না। জানা যায়, বাংলা বুঝতেনও না। কিন্তু ভাষাটার প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। তাই শুধু বাংলা শিখবেন বলে বাড়িতে শিক্ষক রেখেছিলেন লতা। শিক্ষকের নাম ছিল বাসু ভট্টাচার্য। দায়সারা ভাবে নয়, রীতিমতো লিখতে ও পড়তে যাতে পারেন, রীতিমতো সেই চেষ্টা করেছিলেন তিনি। লতা মঙ্গেশকরের অসীম শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন বাঙালি সুরকার সলিল চৌধুরী। সুরসম্রাজ্ঞী খোলাখুলি সবার কাছে বলতেন, সলিল চৌধুরী বিরলতম প্রতিভা। মধুমতি সিনেমায় সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় 'আজা রে পরদেশী'-র জন্য লতা সেরা মহিলা প্লেব্যাক শিল্পীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন।
advertisement
আরও পড়ুন: 'ঠিক নেহি হ্যায়' থেকে 'ইয়ে হসিন রাত', লতা মঙ্গেশকরের মুক্তি না পাওয়া গানগুলি...
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একাধিক কাজ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। প্রায় এক হাজারের বেশি ছবিতে গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতের ৩৬ টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষাতে গান গাওয়ার রেকর্ড একমাত্র তাঁরই। এত দীর্ঘ সময় ধরে কেরিয়ারে নানা সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন গায়িকা। ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: লড়াই শেষ, প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
১৯২৯ সালে ইন্দোরে মারাঠি এবং কোঙ্কনি সঙ্গীতশিল্পী দীননাথ মঙ্গেশকর এবং শেবন্তীর কোলে জন্ম নেন লতা মঙ্গেশকর। দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন একজন ধ্রুপদী গায়ক এবং থিয়েটার অভিনেতা। শেবন্তী (পরে নাম পরিবর্তন করে হন সুধামতি) ছিলেন দীননাথের দ্বিতীয় স্ত্রী। জন্মের সময় লতার নাম রাখা হয়েছিল 'হেমা'। তার বাবা-মা পরবর্তীতে একটি নাটকের নারী চরিত্র লতিকার নামানুসারে মেয়ের নাম রাখেন লতা। লতা মঙ্গেশকর বাংলা ভাষায় ১৮৫টি গান গেয়েছেন। ১৯৫৬ সালে হেমন্তর সুরে ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গানের মাধ্যমে লতার আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই বছর, তিনি ভূপেন হাজারিকার সুরে ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’ গান। সলিলের সুরে ‘না যেওনা’ এবং ‘ওগো আর কিছু তো নয়’ এর মতো হিট গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। ১৯৬০ এর দশকে ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,’ ‘সাত ভাই চম্পা,’ ‘নিঝুম সন্ধ্যায়,’ ‘চঞ্চল মন আনমনা,’ "আষাঢ় শ্রাবণ,’ এর মতো বিখ্যাত গানে বাংলার সঙ্গীত জগত এখনও উদ্ভাসিত। সুধীন দাশগুপ্ত, হেমন্ত এবং সলিল চৌধুরীর মতো সুরকারদের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠের জাদু দিয়ে রচিত গানগুলি বাঙালির আজীবনের সম্পদ।