#বেঙ্গালুরু: প্রয়াত বিশিষ্ট অভিনেতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব গিরিশ কারনাড। সোমবার বেঙ্গালুরুর লাভেলি রোডে নিজের বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কারনাড। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বেশকিছুদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন কারনাড। ক্রমশ তাঁর অধিকাংশ অঙ্গই বিকল হয়ে যায়।
চারদশকের বেশি সময় ধরে নাট্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গিরিশ করনাড ৷ ‘যযাতি’ (১৯৬১), ‘তুঘলক’ (১৯৬৪), ‘হায়বদন’ (১৯৭২), ‘নাগমন্ডল’ (১৯৮৮)-এর মতো বিখ্যাত নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে গিরিশের নাম। হিন্দি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ভাষায় অভিনয় করেছিলেন গিরিশ। পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। গিরিশ করনাড পেয়েছেন পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, জ্ঞানপীঠ সম্মানও ৷ একাধারে নাট্যচর্চা, চিত্রনাট্যকর, মঞ্চে ও রুপোলি পর্দায় সমান দক্ষতায় কাজ করতেন তিনি ৷ তাঁর লেখা রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনাকে বার বার উৎসাহ প্রদান করেছে ৷
advertisement
১৯৩৮ সালের ১৯ মে মহারাষ্ট্রের মাথেরানে জন্মগ্রহণ করেন গিরিশ কারনাড। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর পড়াশোনার শুরুটা হয়েছিল কর্ণাটকে। অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতক করেছেন। এরপর অক্সফোর্ডে রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। গিরিশ কারনাডের স্ত্রী সরস্বতী গণপতি। তাঁদের দুই সন্তান।
১৯৭০ সালে ‘সংস্কার’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় গিরিশ কারনাডের যাত্রা শুরু। অভিনয় করেছেন ‘নিশান্ত’, ‘মন্থন’, ‘স্বামী’, ‘পুকার’-এর মতো হিট ছবিতে। ২০০৫ সালে মুক্তি পায় ‘ইকবাল’। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় পছন্দ করেন দর্শক। সালমান খানের দুটি আলোচিত ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। ২০১২ সালে ‘এক থা টাইগার’ এবং ২০১৭ সালে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ ছবিতে গিরিশ কারনাডের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন দর্শক। অন্যদিকে, ছোট পর্দায়েও গিরিশ কারনাড সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৮৬-৮৭ সালে জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক ‘মালগুড়ি ডেজ’-এ তিনি অভিনয় করেন।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন করনাড ৷ তাঁর লেখা পরে প্রশংসা করেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক টিএস এলিয়টও ৷ কারনাডের লেখা মহাভারত বিষয়ক ‘যযাতি’ আলোড়ন ফেলেছিল সাহিত্য দুনিয়ায় ৷ এটি ছিল তাঁর লেখা দ্বিতীয় নাটক ৷
গিরিশ করনাডের লেখা সবচেয়ে চর্চিত লেখাগুলো হল, তুঘলক (১৯৬৪), হায়াবন্দনা (১৯৭২), অঞ্জুমাল্লিগে (১৯৭৭), তাল্লেডান্ডে (১৯৯০), আগি মত্তু মালে (১৯৯৫), তিপ্পুভিনা কানাসুগালু (১৯৯৭), ওদাকালু বিম্বা (২০০৫) ৷
তবে শুধুই নাট্যচর্চায় নয়, হিন্দি সিনেমাতেও তাঁর অবদান প্রচুর ৷ কন্নড় ছবি ‘সমস্করা’তে অভিনয়ের জন্য স্বণর্কমল সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছিল গিরিশ করনাডকে ৷ তবে শুধু সিনেমায় অভিনয় নয়, ছবি পরিচালনাতেও হাত রেখেছিলেন গিরিশ কারনাড ৷ ‘উৎসব’ ও ‘গোধূলি’ এই দুটি হিন্দি ছবিও তৈরি করেছিলেন গিরিশ কারনাড৷
তবে শুধুই সাহিত্য চর্চা, সিনেমাতে নয়, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক নানা ঘটনায় বারবার সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন গিরিশ কারনাড। সমাজের অনেক সমস্যা তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়। তাঁর নাটকে বারবার বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। ওই সময় নিজেকে ‘আরবান নকশাল’ বলে ঘোষণা দেন। নকশালদের উৎসাহ দিচ্ছেন, এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে শুধু ভারতের মঞ্চে নয়, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশেও তাঁর কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।