কলকাতার মানুষ চঞ্চলের মতো উচ্চপ্রশংসিত অভিনেতাকে চিনতে এত দেরি কেন করল? ওটিটি-তে 'কারাগার' না এলে বা কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব না হলে কি এমন এক অভিনেতাকে চিনতে পারত এপার বাংলার দর্শক? তাঁর সমস্ত কাজ কি হাতে আসত? সবার কাছে পৌঁছতে না পেরে শিল্পী সত্তায় আঘাত লাগে?
আরও পড়ুন: কলকাতায় 'হাওয়া', কবে থেকে সিনেমা হলে চঞ্চলের ছবি? অন্য রাজ্যেই বা কবে? জানুন
advertisement
এই প্রসঙ্গে চঞ্চলের বক্তব্য, ''আমি তো অনেক পরে এসেছি। ৩০-৪০ বছর আগে যে মানুষগুলো দুর্দান্ত অভিনয় করতেন, তাঁদের চিনতেই পারল না কেউ। হাতে গোনা কয়েক জনকে চিনেছে মানুষ। যাঁরা এপার বাংলায় এসে কাজ করেছেন। যেমন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন ববিতা ম্যাডাম। তাই তাঁর অভিনয় এখানে পরিচিত।''
অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদির প্রসঙ্গ তুলে চঞ্চল বললেন, ''আমরা মনে করি, ওনার মতো অভিনেতা বাংলাদেশে আর জন্মাননি। এবং আরও অনেকে এরকম আছেন যাঁরা সারা জীবনই দুর্দান্ত অভিনয় করে পার করে গেলেন, কিন্তু কেউ তাঁদের কাজ দেখলেন না। সবই বাংলা। অথচ এপার পর্যন্ত পৌঁছতেই পারলেন না। বরং ইউটিউব বা ওটিটির কারণে আমরা তো এখন পরিচিত। আমাদের কাজ দেখতে পারছেন এই বাংলার মানুষ।''
অভিনেতার কথায় জানা গেল, কলকাতায় এমন কোনও কাজ হয়নি, যা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ অবগত নয়। কিন্তু তাঁদের কাজগুলো বিভিন্ন কারণে এখানে এসে পৌঁছয়নি। চঞ্চলের আক্ষেপ, ''যদি শুরু থেকেই সমস্ত শিল্পীকে এই বাংলার সঙ্গে পরিচয় করানো যেত, তা হলে আমাদের বাংলাটা আরও এগিয়ে যেত। সেখানে বাংলাদেশ বা কলকাতা আলাদা করে আসছেই না। দুই বাংলার সবাই সবাইকে চিনলে আরও বড় কিছু হতে পারত।''
আরও পড়ুন: ১৫ দিন একটানা ওকে ছেড়ে থাকতে পারি না, সেখানে ৪৫! 'হাওয়া'র শ্যুটিং নিয়ে চঞ্চল
শিল্পের অবাধ যাতায়াত বাধাপ্রাপ্ত কেন হল? কারণগুলি কী কী?
চঞ্চল বললেন, ''সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের শিল্পীদের এতে কোনও ভূমিকাই নেই। রাষ্ট্রীয় আইন, কাঠামো, সব কিছুই কাজ করছে এর নেপথ্যে। দুই দেশের মানুষই স্বাধীন। কিন্তু তাতেও একটা গণ্ডি রয়েই গিয়েছে। তার বাইরে তো আমরা কিছুই করতে পারি না। যেমন 'হাওয়া' এই দেশে রিলিজ করানোর জন্য অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে সমস্ত বাঙালি কমিউনিটিতে একাধিক বার ছবিটি দেখানো হয়ে গেল। কিন্তু কলকাতাতেই সম্ভব হচ্ছে না এখনও। আর তা কেবলমাত্র কিছু নিয়ম শৃঙ্খলার কারণে। সেন্সর করাতে দীর্ঘ সময় লাগে যা দেখা যাচ্ছে। এরই মাঝে যদি দর্শকের আগ্রহ কমে যায়?''
ওটিটি এখন চঞ্চলের প্রথম পছন্দ। তিনি জানেন, এই মাধ্যমে তাঁর কাজ প্রকাশ পেলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবেন। নিয়মের বেড়াজালে বাধাপ্রাপ্ত হবে না তাঁ শিল্পের হাওয়া।
শেষে চঞ্চলের সংযোজন, ''আমার বক্তব্যে রাজনৈতিক কোনও অ্যাজেন্ডা নেই। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই সমস্যাগুলো অনেক আগেই সমাধান হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। শিল্পী হিসেবে দাবি কেবল একটাই, এদেশের সিনেমা বাংলাদেশ দেখবে। বাংলাদেশের সিনেমা এদেশের দর্শক দেখবে। বিনা বাধায়।''