TRENDING:

মায়ের শেষ সম্বলও চলে যায়, তাও বেঁচে আছি কথা দিয়েছি বলে, ঐন্দ্রিলাকেও বাঁচতে হবে! লিখলেন চন্দন

Last Updated:

Aindrila Sharma-Chandan Sen: আমার বা ঐন্দ্রিলার পেশার ক্ষেত্রে ক্যানসারের মতো রোগ সাংঘাতিক প্রভাব ফেলে। নির্মাতারা কাস্ট করার আগে ভাবতেই পারেন, একে নেব? যদি অসুস্থ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়? এতে তো নির্মাতাদের দোষ নেই।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: ক্যানসারজয়ী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে নিয়ে কলম ধরলেন আর এক ক্যানসারজয়ী শিল্পী চন্দন সেন।
advertisement

‘যে দিন খারাপ অভিনয় করতে দেখব, এই পয়সা সুদে আসলে নিয়ে নেব।’ এই কথাটাই নানা ভাবে বলেছিলেন ছ’জন চিকিৎসক। একটা টাকাও নেননি তাঁরা। পাশে ছিলেন অগুন্তি মানুষ, চিকিৎসার জন্য উঠেছিল ১৩ লক্ষ টাকা৷ ২০১০! ১২ বছর আগে৷ তখন কেমোর হাঁ-মুখ আমার মনে, শরীরে এঁকে দিয়েছে ক্লান্তির ক্ষত৷ ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত লাগত৷ কিন্তু ওই কথাটা, ‘যে দিন খারাপ অভিনয়...’ ইত্যাদি! আমাকে বাঁচতে হতই, দায়িত্ব নিতে হত যে ওই কথাগুলোর৷ তাই হয়তো থেকে গেলাম৷ ঐন্দ্রিলাও এ ভাবেই থেকে যাবে৷ লাখ লাখ মানুষের মন তোলপাড় করা ‘দায়িত্ব’ ওর পাশে বিশল্যকরণী হয়ে ঘিরে রয়েছে যে৷

advertisement

তিন দম্পতিকে জানি, তাঁদের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে আমায় টাকা দিয়েছিলেন। কী ভেবেছিলেন ওঁরা, বলতে পারেন? হয়তো ভেবেছেন, মিছিলের সাথীর অনুপস্থিতির কথা, ভেবেছেন মঞ্চে-সিনেমায় একটা লোককে আর দেখতে না পাওয়ার কথা৷ চোয়াল শক্ত করে ভেবেছেন, ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে৷ নিয়ে আসতে হবে ধরে। এই তো আমার বেঁচে থাকা, এই জন্যই তো বেঁচে থাকা৷

advertisement

ঐন্দ্রিলা, এই জন্যই তো বেঁচে থাকা৷

স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে ঐন্দ্রিলা। মা চিকিৎসাকর্মী, বাবা-দিদি দু'জনেই চিকিৎসক। তাতেও চিকিৎসার খরচ টানতে কষ্ট হচ্ছে। শুনলাম, ১২ লক্ষ টাকার উপর এখনই হাসপাতালের বিল পৌঁছেছে। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ এবং প্রয়োজন পড়লে রাজ্যের বাইরে অন্য কোথাও ঐন্দ্রিলাকে চিকিৎসা করাতে গেলে সেই খরচ বহন করবেন গায়ক অরিজিৎ সিং। তার মানে ওদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সব বিনামূল্যে পাওয়ার অধিকার রয়েছে দেশবাসীর, সেখানে এই বাজার অর্থনীতি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এত কাঠখড় পোড়াতে হবে কেন? চিকিৎসা বিনামূল্যে হওয়া দূরের কথা, সস্তা তো করাই যায়, তাই না? আন্দোলন না হলে, বিপ্লব না এলে একেকটি করে রোগের জন্য মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।

advertisement

কিন্তু যেই পরিবার স্বচ্ছল নয়, সেই পরিবারের কাছে তো অর্থনৈতিক কষ্টটাই সবটা ছাপিয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে, পরিবারের কেউই হয়তো আর খেতে পাবে না। একদম ধসে যাবে। আমি খুবই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছি। মায়ের কাছে নিজের জন্য একটা দু'টো গয়না ছিল কেবলমাত্র। কানের দুল আর হাতের বালা। এটা ছাড়া যা যা ছিল, সব চলে গিয়েছে।

advertisement

২০১০ সালে আমি যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হই, একেকটা রেডিয়েশন নিতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয়েছিল ৫-৬ হাজার টাকা। সেই অঙ্কটাই বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। আমার ৩৬টা কেমোথেরাপির মধ্যে প্রথম ১৮টা কেমো আমার ক্ষেত্রে সস্তা করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও তার খরচ ৮০ হাজার টাকা। কিছু দিন আগে এক লেখিকার সঙ্গে আলাপ হল, জানলাম, তাঁর একেকটি কেমোর খরচ আড়াই লক্ষ টাকা।

ঠিক যেভাবে করোনার সময়ে মানুষকে এমন চারটি ওষুধের কথা বলা হয়েছিল, যা আদতে নিষিদ্ধ কত বছর ধরে! তাও সেই ওষুধ খুঁজে বের করে আকাশছোঁয়া দামে কিনতে কিনতে হাঁপিয়ে উঠল মানুষ। সবাইকে আতঙ্কে রাখা হল। না হলে ব্যবসা হবে কী করে? বাজার অর্থনীতি চলবে কী করে?

আরও পড়ুন: 'এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এল মেয়েটা', অনেকটা ভাল আছেন ঐন্দ্রিলা, ভাল খবর সব্যসাচীর

আসলে রোগীর কথা কেউ ভাবে না। ভাবলে একটা পরিবারকে সব দিক দিয়ে ধসিয়ে দিত না এই সমাজ ব্যবস্থা। তাই মানুষকে বলতে চাই, যদি অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য না করতে পারলেও পাশে থাকুন। এই বিশ্বাসটা দিন, তুমি বাতিল হয়ে যাওনি।

ক্যানসার। আর্থিক, মানসিক, শারীরিক, সামাজিক, সব দিক দিয়ে ধসিয়ে দিতে পারে এই একটি রোগ। নিজে সেই রোগের শিকার হয়েছি বলে জানি, বুঝি। আর একটা ১৫ বছরের সম্ভাবনাময় মেয়ে যখন এই কাঠিন্যের মধ্যে দিয়ে যায়, তার অবস্থা কী হতে পারে, তা কল্পনার বাইরে। ঐন্দ্রিলা শর্মার কথা যখন জেনেছি, মনে হয়েছে, একটা সম্ভাবনা নষ্ট হওয়া। আর তার যন্ত্রণা সবথেকে বেশি। ঐন্দ্রিলার বেঁচে থাকাটার মধ্যে আগামীর সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা। আর সেটা নষ্ট হয়ে গেলে পরিবারের যন্ত্রণার বাইরেও সেই যন্ত্রণাটা কুড়ে কুড়ে খায়।

ঐন্দ্রিলার ১৫ বছর বয়সে সেই রোগ সেড়ে যাওয়ার পর আবারও একই রোগ শরীরে দানা বাঁধল ৬ বছর বাদে। সেটার সঙ্গে যুদ্ধ করে আবার সেড়ে ওঠা। তার পর আবারও সে শয্যাশায়ী। কেন? একটা ছোট্ট মেয়েকে এত কষ্ট কেন পেতে হবে? এই যে এত মানুষ প্রার্থনা করছেন, কার কাছে করছেন? কেউ কি শুনছে? সেটা ভেবে দেখার সময় এসে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: এখনও ভেন্টিলেশনে লড়ছেন, শনিবার কেমন আছেন 'জিয়নকাঠি'র নায়িকা ঐন্দ্রিলা

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
বাজারে ব্যাপক চাহিদা, তবুও মাথায় হাত! পান চাষ করে কেন সমস্যায় চাষিরা?
আরও দেখুন

আমার বা ঐন্দ্রিলার পেশার ক্ষেত্রে ক্যানসারের মতো রোগ সাংঘাতিক প্রভাব ফেলে। নির্মাতারা কাস্ট করার আগে ভাবতেই পারেন, একে নেব? যদি অসুস্থ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়? এতে তো নির্মাতাদের দোষ নেই। কারণ একটা কাজের পিছনে কত শত মানুষের রুটিরুজি জড়িয়ে রয়েছে। দোষ ক্যানসার আক্রান্ত শিল্পীদেরও নয়। তবে? সবেরই উত্তর বিপ্লবে রয়েছে।

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
মায়ের শেষ সম্বলও চলে যায়, তাও বেঁচে আছি কথা দিয়েছি বলে, ঐন্দ্রিলাকেও বাঁচতে হবে! লিখলেন চন্দন
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল