প্রশ্ন- Escape from Taliban ছবির শ্যুটিং-র জন্য গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে৷ কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
উত্তর- ২০০২ সেপ্টেম্বর মাসে ছবির শ্যুটিং-এর জন্য রেকি করাতে গিয়েছিলাম আফগানিস্তানে৷ সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ি যেখানে ছিল সেই সারানা (মালকানার পাশে) পৌঁছে গিয়েছিলাম৷ আর সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন এসেছিল আমাদের পরিচয় জানতে৷ খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ দেখেছিলাম কীভাবে ওখানে মেয়েরা অত্যাচারিত হয়৷ ওই জায়গাটা কাবুল থেকে অনেকটা দূরে ছিল৷ অর্থাৎ তখন শহরগুলির থেকে দূরে দূরে অনেকটা ভিতরের দিকে এমন ভয়ের পরিস্থিতি ছিল৷ যা এখন কাবুল বা অন্যান্য শহরে শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সত্যিই এটা খুবই আতঙ্কের৷ আমরা যখন ওখানে ছিলাম, আমাদের কাছে স্বরাষ্ট্র দফতরের থেকে ফোন এসেছিল এবং জানানো হয়েছিল তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য৷ সত্যিই, সেদিন যদি ওই ফোন না আসত, আর আমরা সময় মতো বেরিয়ে না আসতাম, তাহলে আজ জানি না কী হত৷
advertisement
প্রশ্ন- কখনও ভয় লেগেছিল শ্যুট করতে? কারণ আফগানিস্তানে তালিবানদের কথা সকলেরই জানা৷ এবং আপনার ছবিও ছিল তাদের জড়িয়ে!
উত্তর- অনেকবার হুমকি এসেছিল৷ আল কায়দা ধমকি দিয়েছিল৷ ৬ বছর পুলিশ প্রোটেকশনে ছিলাম৷ এখনও যে বারবার ফোনে কথা বলছি আপনাদের সঙ্গে, আমার স্ত্রী নিষেধ করছেন৷ কারণ ও জানে সেই সময় কী অবস্থা ছিল৷
প্রশ্ন- ছবির শ্যুটিং-র আগে ও পরে আফগানিস্তান সম্পর্কে কোনও ধারণা বদলেছিল?
উত্তর- না, একদমই এক৷ যা শুনেছিলাম, তার থেকেও যেন খারাপ অবস্থা সেখানে৷ কীভাবে মেয়েদের ভোগের দাসী বানানো হয়, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না৷ রাস্তায় মেয়েদের মারধর করা হয়৷ একটা ধর্মান্ধ গ্যাং মেয়েদের অত্যাচার করতে জানে৷ শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের উপরও অত্যাচার চলে ওদের৷ তবে ধর্মের নামে ওরা লিঙ্গ বৈষম্য করে৷ এবং মেয়েদের সম্মান তো দূরের কথা, ওদের শুধু সন্তানের জন্ম দেওয়ার যন্ত্র হিসেবেই মনে করে৷
প্রশ্ন- ছবি তৈরির সময়, আগে-পরে সুস্মিতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সঙ্গে এমন কোনও কথা হয় তালিবানদের সম্পর্কে বা সেই দেশ সম্পর্কে যা বইতে বা ছবিতে নেই৷
উত্তর- হ্যাঁ কথা হয় ওর মেয়ের ব্যাপারে৷ নিজের তো সন্তান হয়নি৷ গর্ভবতী যখন ছিল তখন ওর পেটে লাথি মারে তালিবানরা৷ বাচ্চা নষ্ট হয়৷ পরে জায়ের মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসত৷ নাম দিয়েছিল তিন্নি৷ তিন্নিকে পড়াতে চেয়েছিল৷ তাকে ক্যাম্প থেকে আনতেই আবার আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিল৷ কিন্তু আর ফেরা হল না৷ ওকে গুলি করে মেরে দিল তালিবানরা৷
প্রশ্ন- এখন আফগানিস্তানের এমন সমস্যা দেখে কী মনে হচ্ছে?
উত্তর- তালিবানরা এমন যারা মা-বোন-বাচ্চাদের সঙ্গে শরীরিক ভোগে লিপ্ত হতে পারে যখন তখন, মেয়েদের অস্তিত্ব মুছে ফেলে দিতে পারে৷ সেটাই ওরা চায়৷ দেখে খুবই খারাপ লাগছে৷
প্রশ্ন- জানা যায় যে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় তালিবানদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন৷ এখন তো তালিবান নেতারা বলছেন যে তারা বদলেছে৷ সেটা কতটা সত্যি বলে মেনে নিতে পারেন?
উত্তর- একদম মিথ্যে, এরা বদলাতে পারে না৷ যা বলছে সব মিথ্যে৷ ১৭ বছর আগে আমাদের সঙ্গে যা হয়েছিল, সেই কথা ভাবলে এখন গায়ে কাঁটা দেয়৷ তাহলে তারা যে বদলে যাবে, তা এককথায় না ভাবাই ভাল৷
(জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়৷ এসকেপ ফ্রম তালিবান ছাড়াও তাঁর তৈরি ছবিগুলি হল উত্থান, সার্চ, স্বভূমি, গন্ডি, কালরাত্রি, ভূমিকা প্রমুখ৷ সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের অ্যাডভাইসারি বোর্ডের সদস্য তিনি৷ নয়াদিল্লির চিত্র ভারতী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিচারকের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি৷)