গল্প খুব সহজ৷ ছবিতে বাবা ও মেয়ের চরিত্রে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও রুক্মিণী মৈত্র৷৷ মেয়ে বড় হয়েছে৷ তাঁর মা নেই৷ স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই মেয়েকে নিয়ে একটু বেশি সচেতন হয়েছেন বাবা৷ সবসময় মনে করছেন কীভাবে মেয়ে নিশ্চিন্তে সংসার করবে৷ অন্যদিকে মাকে হারিয়ে বাবাকে আঁকড়ে ধরেছে মেয়ে৷ চাকুরিরতা মেয়ে চায় সবসময় বাবাকে চোখে চোখে রাখতে, যাতে বাবার কোনও রকম অবহেলা না হয়৷ কিন্তু বাবা মনে করেন যে এভাবে মেয়ে তাঁর খেয়াল রাখলে মেয়ের জীবন থিতু হবে না৷ ফলে মেয়ের প্রতি উল্টো চাল চালতে শুরু করেন বাবা৷ রাগ দেখিয়ে, দুর্ব্যবহার করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে মেয়ের নিজের সংসার পাততে দেখতে চান তিনি৷ বাবা-মেয়ের মধ্যে জমে অভিমানের পাহাড়৷ তবে সেই সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়ে মেয়ের বিয়ের বদলে বাবা নিজেই পড়েন প্রেমে৷ বিপত্নীক ভদ্রলোকের জীবনে এক মহিলার প্রবেশ ঘটে৷ ফলে মেয়ের বিয়ে দেবেন নাকি নিজে বিয়ে করবেন, সেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে চলে কিছুটা সময়৷ পরে অবশ্য জানা যায় যে মেয়েই বাবার বিয়ে ঠিক করেছে৷ কারণ বুড়ো বাবা যেমন চায় না তার সেবা করতে করতে মেয়ের জীবন কেটে যাক, তেমন বাবাকে ছেড়ে নিশ্চিন্ত না হতে পারা মেয়েও চায় যে বাবার জীবনটা যেন একাকীত্বে ঘিরে না ধরে৷ তার জীবন যেন নিঃসঙ্গতায় অসহায়তায় না কাটে৷
advertisement
এমন গল্প বলেছেন পরিচালক অর্ণব মিদ্যা৷ তবে এখানেই ছবির শেষ নয়৷ একেবারে শেষেই রয়েছে ছবির ট্যুইস্ট এবং অবশ্যই কঠিক বাস্তবের মুখোমুখি হবেন দর্শক৷ গল্পটার মধ্যে একটা সারল্য রয়েছে৷ এবং এর পাশাপাশি বস্তাপচা ভাবনার বাইরে একটু মন ভরে খোলা নিঃশ্বাস নেওয়ার কথা বলে এই ছবি৷ সেই কারণে বাবার বিয়ে দেওয়া জন্য মেয়ের চেষ্টা দেখা যায়৷ ফলে এই ছবি শুধু বাবা-মেয়ের গল্প হয়েই থাকে না, বয়স্কদের জীবনচর্চার এক বার্তাও দেয়৷ তবে সবটাই দেখানো হয়েছে খুব লাইট মোডে৷
এবার আসা যাক অভিনয়ের ব্যাপারে৷ বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে বেশ ভাল লাগবে৷ রুক্মিণী অনেকটাই চেষ্টা করেছেন চরিত্রটি জীবন্ত করে তুলতে৷ তুলিকা বসু, অঞ্জনা বসু, সন্দীপ্তা ভট্টাচার্য, বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণয় দাশগুপ্ত, প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার সকলেই ভাল৷ ছবিতে কয়েকটি গান রয়েছে৷ যদিও কোনওটা সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি৷
ছবি গতি একটু স্লথ৷ ফলে প্রথমদিকে খানিকটা অন্যমনস্ক হতে পারেন৷ ছবির গল্প বেশ আধুনিক৷ পরিচালক অর্ণবের কাজ ভাল লাগবে৷ যে পথে আমাদের বাবা মায়েরা হাঁটেন, সেই একই পথে আমরা চলি এবং এরপর চলে আমাদের পরের প্রজন্ম৷ এইভাবে ছবির নামকরণ হাঁটি হাঁটি পা পা৷ এই ছবি জীবনের গল্প বলতে চেয়েছে, তবে কোথাও গিয়ে যেন একটু ছন্দপতন হয়েছে৷ অর্থাৎ আরও একটু পাঞ্চ দরকার ছিল বলে মনে হতে পারে দর্শকদের৷ যদিও শীতের ছুটিতে একবার দেখে আসতেই পারেন বাবা-মেয়ের এই কাহিনি৷ ট্রেলারে পিকু ছবির সঙ্গে অনেকে মিল খুঁজে পেলেও গোটা ছবি একেবারে তেমন নয়৷
