কাট টু ২০২২। তৈরি হল 'বল্লভপুরের রূপকথা'। পরিচালক সেই অনির্বাণ। ছয়ের দশকে বাদল সরকারের লেখা জনপ্রিয় নাটক তাঁর প্রথম ছবির আধার। শ্রীভেঙ্কটেশ প্রযোজিত এই হরর- কমেডিতে ইন্ডাস্ট্রির 'হেভিওয়েট'রা এক প্রকার ব্রাত্য। বরং সত্যম ভট্টাচার্য, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবরাজ ভট্টাচার্যের মতো আপাত-নতুন কিছু মুখকেই ধরে নেওয়া হয়েছে ছবির পুঁজি হিসেবে । আর তাতেই বক্স অফিসে বিপুল লক্ষ্মীলাভ 'বল্লভপুরের রূপকথা'র।
advertisement
২৫ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে 'বল্লভপুরের রূপকথা'। বক্স অফিসের হিসেব বলছে, শুরু থেকেই রমরমিয়ে ব্যবসা করছে ছবিটি। এখনও পর্যন্ত এই হরর-কমেডির ভাঁড়ারে এসেছে আড়াই কোটি টাকা। ছবির পুরো বাজেটের থেকে যা অনেকটাই বেশি। শুধু শহুরে মাল্টিপ্লেক্সেই নয়, রূপকথাকে চাক্ষুষ করতে দেখার মতো ভিড় জমছে সিঙ্গলস্ক্রিনগুলিতেও।
চলতি বছরে বেশ কিছু বাংলা ছবি মুক্তি পেলেও ব্যবসার নিরিখে সফল মাত্র তিনটি । 'অপরাজিত', 'বেলাশুরু', 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন'। বছর শেষে সেই তালিকায় 'বল্লভপুর' খানিক তাক লাগাল বৈকি!
অনির্বাণের ছবিতে ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত পরিচিত কোনও মুখ নেই বললেই চলে। নেই নামী ফ্র্যাঞ্চাইজির জোর। তবুও অচিরেই মিলল কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। কী ভাবে?
কলকাতার এক বিশিষ্ট বাণিজ্য বিশেষজ্ঞের মতে, নতুনত্বই এই ছবির ইউএসপি। তাঁর কথায়, "দর্শক এখন অনেক বেশি সচেতন । প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে টাকা খরচ করে তাঁরা শুধু ভাল ছবিই দেখবেন। তাই ছবির সাফল্য এখন আর তারকা-নির্ভর নয়। ভাল গল্প, অভিনয় আর সাবলীল পরিচালনাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর সেখানেই 'বল্লভপুর' এগিয়ে গিয়েছে।"
সেই বিশেষজ্ঞের মতে, 'বেলাশুরু' এবং 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন', দুইই নামী ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ। আবার দুই ছবিতেই দেখা গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির একাধিক চেনা মুখকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বক্স অফিসের দৌড়ে এগিয়ে ছিল ছবিগুলি। অন্য দিকে, অনীক দত্তের পরিচালনা এবং ছবির বিষয়বস্তু 'অপরাজিত'কে এনে দেয় ঈপ্সিত সাফল্য।
আরও পড়ুন : অস্কারে মনোনীত পাকিস্তানি ছবি 'জয়ল্যান্ড'! নিজের দেশেই নিষিদ্ধ করা হল কেন?
আরও পড়ুন : বরফের চাদরে ঢাকল 'ভূস্বর্গ'! কাশ্মীরের রূপ আনন্দ দ্বিগুণ করছে পর্যটকদের, দেখুন
কিন্তু বাণিজ্যের নিরিখে এই তিন ছবিকে কি ছাপিয়ে যাবে ' বল্লভপুরের রূপকথা'?
তাঁর কথায়, "সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে খুব সহজেই তিন কোটির বেশি আয় করে ফেলতে পারবে ছবিটি। এখনও পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রেক্ষাগৃহই প্রায় হাউজফুল।"
বাংলার ' বল্লভপুর'-এর সঙ্গে বলিউডের ' কাশ্মীর ফাইলস'-এর তুলনা করেছেন সেই বিশেষজ্ঞ। তাঁর যুক্তি, "আমি বিষয়বস্তুর নিক্তিতে এই তুলনা করছি না। কিন্তু বক্স অফিসে দু'টি ছবির একই ভাবে উত্থান হয়েছে। 'কাশ্মীর ফাইলস'-এর মতোই অনির্বাণের ছবিতে সে রকম জনপ্রিয় কোনও মুখ নেই। বাজেটও বিশাল নয়। তবু এত ভাল ব্যবসা করল। অনেক সুপারস্টারের ছবিকে ছাপিয়ে গিয়েছে বল্লভপুর। এই ছবিকে অনায়াসেই টলিউডের ব্ল্যাক হর্স বলা যায়।'
সপ্তাহান্তেও শহর এবং শহরতলির প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়েছে ভিড়। বল্লভপুরের সেই ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি, সর্বশান্ত রাজা ভূপতি, শতাব্দীপ্রাচীন এক পূর্বপুরুষের ভূত- এ সবই যেন চিরাচরিত ছক ভেঙেচুরে টাটকা হাওয়া বইয়েছে দর্শকের মননে। আর তারই প্রতিফলন ছবির বক্স অফিস 'কালেকশন'।
'বল্লভপুরের রূপকথা'-র সাফল্য খুশি প্রযোজকরাও। শ্রীকান্ত মোহতার কথায়, " তৃতীয় সপ্তাহেও মানুষ আমাদের ছবিটি দেখতে যাচ্ছেন। দর্শক যে ভাল বিষয় নিয়ে তৈরি ছবি দেখতে চাইছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি। হলে সিনেপ্রেমীদের ভিড় দেখে সত্যিই আমরা আপ্লুত।"
অতিমারির পর বাংলা ছবির ভবিষ্যত্ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। এখনও চলছে। হয়তো এর পরেও চলবে। ছবির অন্যতম অভিনেতা সত্যম ভট্টাচার্য নিউজ18 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "প্রচারের চেয়েও বেশি এই ছবিটি মানুষের মুখের কথায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মানুষই আরও মানুষকে আমাদের ছবিটি দেখার উৎসাহ দিয়েছেন।" অর্থাৎ 'বল্লভপুর' যে লাভ-ক্ষতির হিসেবনিকেশ ওলটপালট করে বক্স অফিসে নতুন গল্প লিখেছে, সে কথা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না।