নয়াদিল্লি: দু’দিন আগেই মিঠুন চক্রর্তীকে ‘গদ্দার’ বলে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার পাল্টা দিলেন অভিনেতাও। তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে বললেন, “মুসলিমরা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্ক হল দুর্নীতি”। শুধু তাই নয়, বিজেপির তারকা প্রচারক বলছেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাঁর জীবনের “সবচেয়ে বড় ভুল” ছিল।
মিঠুনকে সম্প্রতি পদ্মভূষণে সম্মানিত করেছে কেন্দ্র সরকার। নিউজ 18-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ এবং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ নিয়ে মুখ খুললেন ৭৩ বছর বয়সী অভিনেতা। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই প্রচার করছেন মিঠুন। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে তাঁর রোড শো-তে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবতই তাঁর অনুপ্রেরণা। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন মিঠুন। তিনি বলেন, “প্রচণ্ড গরম। মাঝে মাঝে পা কেঁপে যাচ্ছে। কিন্তু পার্টির থেকে সবাই যদি কিছু চায়, তাহলে দেবে কে? আমি সেই মানুষ, যে পার্টির জন্য সব করতে পারে। আমি কাজ করতে চাই। দুজন আমার অনুপ্রেরণা – একজন প্রধানমন্ত্রী মোদিজি, অন্যজন মোহন ভাগবত। আমি ওঁদের আত্মত্যাগ দেখেছি। ওঁরা কিছু নিতে চান না, দিতে চান। দেশকে এতটাই ভালবাসেন যে কিছু নেওয়ার মনোভাব ওঁদের নেই। তবে এটা যেন কেউ মনে না করেন, ওঁরা আমাকে কিছু দেননি, অনেক কিছু দিতে চেয়েছেন। অনেক বড় প্রস্তাব দিয়েছিলেনও। আমি না বলেছি। আমি কিছু চাই না। শুধু ওঁদের জন্য কাজ করতে চাই”।
কট্টর বাম সমর্থক হিসেবেই পরিচয় ছিল মিঠুনের। কমিউনিস্ট পার্টির বড় নেতাদের অনেকেই তাঁর বন্ধুবৃত্তে ছিলেন। ওঠাবসা ছিল। তবে সিপিআই(এম)-এর আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ কোনওদিন গ্রহণ করেননি মিঠুন। এরপর হঠাৎই তৃণমূলে যোগ দেন। মমতা তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান। কিন্তু বাম সমর্থক মিঠুন কেন আচমকা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তা আজও রহস্য। অভিনেতার কথায়, “কলেজে আমি ছাত্র পরিষদের (কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন) প্রার্থী হয়েছিলাম। নির্বাচনেও জিতি। কিন্তু তারপর থেকে সক্রিয় রাজনীতি আর করিনি। কোনওদিন সিপিআই (এম)-এর সদস্য ছিলাম না। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। তবে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম”।
আরও পড়ুন: ইস্তেহার ‘আউটসোর্স করছে’ কংগ্রেস, ‘সংখ্যালঘু ও বামেদের থেকে….’ `বড় দাবি অমিত শাহের!
তৃণমূলে যোগ দেওয়া বড় ভুল: তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে মনে করেন মিঠুন। তিনি বলেন, “তৃণমূলে যোগ দিয়ে আমি জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। যোগ দেওয়ার আগে আমায় এক কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখলাম অন্য কিছু হচ্ছে। আমি বুঝেছিলাম, বড় ভুল করেছি, বড় ভুল”।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন বলিউডের বর্ষীয়াণ অভিনেতা। মিঠুনের কথায়, “বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গী অনেক বড়। তাদের কাছে দেশ সবার আগে। প্রতিটা রাজনৈতিক দল গ্যালারিতে খেলছে। সবাই ছলচাতুরি করছে। কিন্তু দেশের স্বার্থ চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিজেপি দেশের সর্ববৃহৎ দল”।
পদ্মভূষণ পাওয়ার কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মিঠুন। তিনি বলেন, “অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছি। একান্ত সাক্ষাৎকার ছিল। রাজনীতি এবং কিছু ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেই বৈঠকের বিস্তারিত কিছু বলব না”।
আরও পড়ুন: ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এই কাজটি করাতে চান, একান্ত সাক্ষাৎকারে মন খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
গদ্দার বলায় খারাপ লেগেছে: বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে ঝড় তুলেছেন মিঠুন। প্রতিদিন দুটো করে রোড শো করছেন। এরপরই অভিনেতাকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলার “আরেক গদ্দার”। শুধু তাই নয়, মিঠুনকে তিনি রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু অভিনেতা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন বলেও সুর চড়ান তিনি।
পাল্টা মিঠুন বলেন, “জাতীয় স্বীকৃতির জন্য তিনি আমাকে অভিনন্দনটুকুও জানাননি। আমি চাইও না যে তিনি আমাকে অভিনন্দন জানান। আর ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যখন বাংলার আরেক গদ্দার বলেছেন, আমার খারাপ লেগেছে’। তাঁর বক্তব্য, “আমি কাউকে টার্গেট করি না। ব্যক্তিগত আক্রমণে যাই না। দলের নাম নিই না। এমনকী প্রার্থীর নামও নিই না। আমি শুধু আমার দলের নীতি এবং দল কী করতে চায়, সেই নিয়ে কথা বলি। কাউকে খারাপ দেখানোটা আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু তাঁর সেই অভ্যাস আছে। তিনি সবাইকেই গালাগালি দেন। তাঁর দলের লোকেরাও সেটাই অনুসরণ করে”।
সঙ্গে মিঠুন যোগ করেন, “আমি কারও ছেলে। আমারও একটা পরিবার আছে। তিনি কীভাবে এমন নামে ডাকতে পারেন? কোনও মুখ্যমন্ত্রী ওই ভাবে কথা বলেন না, একেবারে নোংরা কথাবার্তা। তারপর বলেন, মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কতবার? আমিও তাঁকে বাংলার ‘গদ্দারি’ বলতে চাই”।
এখন আর ওঁকে ছাড়ব না: তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করছেন মিঠুন। তাঁর কথায়, “হতাশার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছেন। বিপুল জনসমাগম দেখে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, এটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এখন আমিও ওঁকে ছাড়ব না। সমস্ত অপব্যবহারের প্রতিক্রিয়া দেব। উনি মিথ্যার রানি। বাংলার গরিব মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। যখন ওঁর দলে যোগ দিয়েছিলাম, তখন বাংলার কথা ভাবতেন”। এরপরই মিঠুন বলেন, “মুসলিম ভাই-বোনেরা ওঁর ভোটব্যাঙ্ক নয়, দুর্নীতি ওঁর ভোটব্যাঙ্ক। চাইলে একদিনে সমস্ত দুর্নীতি খতম করতে পারতেন। কিন্তু তিনি চান না। উল্টে দুর্নীতিবাজদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। তিনি দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেন না কারণ, দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর রাজত্ব চলে যাবে”।
মিঠুন মনে করেন, মমতা জমানার দুর্নীতির কারণেই বিজেপি রাজ্য বিধানসভায় ৩ থেকে ৭৭ আসনে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “ভোটের সময় বুথে ওরা যে দুর্নীতি করছে তার কী হবে? আমাদের হাত-পা বাঁধা। কারণ এমন অপকর্ম করার কথা আমাদের দল ভাবতেও পারে না”।