আসলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে আমেরিকা সরকার আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি সুসংগঠিত প্রবেশ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেওয়ার পরেই বিমানবন্দর ছেড়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াটি সাধারণত খুবই সহজ এবং বিশেষ সময়ও লাগে না। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে তাই খুব কম সময়ে অনুমোদন পাওয়া যায়।
ভারতীয় পড়ুয়ারা যাতে আমেরিকায় এই প্রবেশ প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছেন ভারতের মার্কিন দূতাবাসের ইউ.এস. কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) অ্যাটাশে অফিসের (U.S. Customs and Border Protection Attaché Office) পোর্ট অফ এন্ট্রি বিশেষজ্ঞরা।
advertisement
আসল নথিপত্র এবং ব্যাক অ্যাপ প্রস্তুত রাখতে হবে:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলির মধ্যে রয়েছে বৈধ পাসপোর্ট, এফ-১ (F-1) ছাত্র ভিসা এবং একটি অনুমোদিত ফর্ম I-20 A-B। এই নথিগুলির মধ্যে যে কোনও একটি হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হয়ে গেলে ব্যাক-আপ হিসেবে এই নথিগুলির ফটোকপি এবং ডিজিটাল কপি উভয়ই হাতের কাছে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানবন্দরে নামার পরে হাতের কাছে সমস্ত নথির আসল কপি প্রস্তুত রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুকে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান? রইল স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর...
এ ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চিঠি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের তথ্য এবং আর্থিক ডকুমেন্টেশনের তথ্যও সহয়ক নথি হিসেবে কাজ করে এবং এগুলিও অনুমোদন পেতে সাহায্য করে।
ট্রানজিটে থাকাকালীন প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি বার করে এক জায়গায় রাখতে হবে। একবার মার্কিন মুলুকে পৌঁছে গেলে শিক্ষার্থীকে নিজে থেকে সিবিপি অফিসারের কাছে গিয়ে সমস্ত নথিপত্র যাচাই করাতে হবে।
কী কী প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখা উচিত:
শিক্ষার্থীর সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যদ্রব্য এবং ওষুধ থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে। শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ যে কোনও একটি পণ্য-সহ ধরা পড়লে কোনও কাল-বিলম্ব ছাড়াই তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এছাড়া, সেই পড়ুয়া অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীনও হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সিবিপি ওয়েবসাইটের খাবার নিয়ে আসা সংক্রান্ত সাইটে (Bringing Food into the United States) একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত ভারতীয় শিক্ষার্থীর। কারণ আমেরিকায় কোন কোন পণ্য নিষিদ্ধ, তা উল্লেখ করা রয়েছে এই ওয়েবসাইটে দেওয়া তালিকায়।
নির্দেশাবলী:
যাঁরা প্রথম বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছেন, তাঁদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই উদ্বিগ্ন না-হয়ে শুধুমাত্র নিজেকে শান্ত রেখে নির্দেশাবলী মেনে সমস্ত ধাপগুলি অতিক্রম করতে হবে।
অতিরিক্ত বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া, খুব বেশি কথা বলা, অপ্রাসঙ্গিক নথি প্রদান করা বা সিবিপি অফিসারকে বিভ্রান্ত করতে পারে, এমন বিষয়গুলি এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরনের যে কোনও আচরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেলে মাথায় রাখতে হবে কোন ৬ বিষয়? জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা...
সব সময় সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে:
সবার আগে মাথায় রাখা জরুরি যে, পোর্ট অফ এন্ট্রি অফিসার বা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের সামনে কখনওই মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়। এমনকী তথ্য গোপন করাও ঠিক নয়। ভুল তথ্য প্রদান করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রবেশ করতে না-ও দেওয়া হতে পারে।
কাস্টমস ডিক্ল্যারেশন ফর্ম হল একটি নথি, যা সমস্ত আন্তর্জাতিক পর্যটক এবং শিক্ষার্থীদের পূরণ করতে হয়। এই ফর্মে সব সময় সঠিক তথ্যই প্রদান করা উচিত। ভুল তথ্য দিলে জরিমানা-সহ আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
নিজের আচরণে নমনীয়তা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়:
সাধারণ পরিস্থিতিতে পোর্ট অফ এন্ট্রি পদ্ধতিতে সিবিপি অফিসারের কাছে গিয়ে নথি যাচাই করিয়ে ব্যাগ হাতে বিমানবন্দর থেকে বেরোতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময়ও লাগতে পারে। আর দেরি হতে পারে ভেবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। তা নিয়ে বিচলিত হলে চলবে না।
একই সময়ে একাধিক আন্তর্জাতিক উড়ান অবতরণ করলে অভিবাসন এবং কাস্টমসের লাইন দীর্ঘ হতে পারে। একই ভাবে শিক্ষার্থীর নথি বা দেশ থেকে নিয়ে আসা পণ্য যাচাইয়ের কারণেও বেশি সময় লাগতে পারে। এই রকম পরিস্থিতিতে নিজেদের নমনীয়তা এবং ভদ্র আচরণ বজায় রেখে অফিসারদের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। আর মনে রাখতে হবে যে, সিবিপি আধিকারিকেরাও সব সময় শিক্ষার্থীদের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করারই চেষ্টা করে থাকেন।