২৫ বছর বয়সি তরুণী এই আইএএস অফিসারের এখন পোস্টিং গুজরাতে। কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার জোরে তিনি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। তবে তাঁর সাফল্যের পিছনে আরও একটি বিষয় রয়েছে। আসলে টানা তিন বছর নিজের মোবাইল ফোনের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক ছিল না তাঁর। রাজস্থানে জন্ম নেহা বৈদওয়ালের। ছত্তিশগড়ের রায়পুরে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
advertisement
পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথমবার ফেল করেছিলেন তিনি। যদিও সেই ফলাফল তাঁর মনোবল ভাঙতে পারেনি। চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে শিখে নিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গেও লড়াই করতে শিখে গিয়েছিলেন। একবার সাক্ষাৎকারে নেহা জানিয়েছিলেন যে, বাবার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে শিফট করেছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে এমন এক স্কুলে ভর্তি হন, যেখানে ইংরাজিতে কথা বলা বাধ্যতামূলক ছিল। এমনকী হিন্দিতে কেউ কথা বললেই জরিমানা করা হত। ধীরে ধীরে ইংরাজি বলাও রপ্ত করে নেন তিনি।
এদিকে নেহার বাবাও পেশায় একজন উচ্চপদস্থ আয়কর আধিকারিক। ফলে বাবার পদচিহ্ন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেহা। তাই সিভিল সার্ভিসেস – ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু এখানেও ব্যর্থতা তাঁকে ঘিরে ধরে। তিন বারের ব্যর্থতার পর মোবাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন নেহা। তারপর লেখাপড়া আর কঠোর অধ্যবসায়ে ডুবিয়ে ফেলেন নিজেকে।
পরীক্ষার প্রস্তুতির পদক্ষেপ হিসেবে দৈনিক ১৭-১৮ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করেছেন নেহা। মোবাইলের ব্যবহার ভুলে গিয়েছিলেন। আর এই সিদ্ধান্তের ফল হাতেনাতে পেয়ে যান। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই হয় তাঁর স্বপ্ন পূরণ। সব মিলিয়ে ৯৬০ নম্বর পেয়ে আইএএস অফিসার হয়ে যান।
আরও পড়ুন: উচ্চ শিক্ষায় সরকারি স্কলারশিপ, মাধ্যমিক-HS-এর পর কত নম্বরে কোন স্কলারশিপ পাওয়া যায়? বিশদে জানুন
যদিও নেহা বিশ্বাস করেন যে, পরীক্ষার্থীরা আত্মত্যাগ করেন না। বরং তাঁদের মা-বাবারাই আত্মত্যাগ করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, “কোথাও ঘুরতে না যাওয়া কিংবা কোনও কিছু না কেনা কোনও আত্মত্যাগ নয়। যখন আপনি সারা দিন কাজের পর বাড়ি ফেরেন এবং নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান, সেটাই আসল আত্মত্যাগ। যেমন – আমার বাবা কাজ থেকে ফেরার আধ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে নিয়ে বসতেন। অঙ্ক থেকে ইতিহাস পর্যন্ত পড়া ধরতেন। বলা ভাল, নেহার স্বপ্ন পূরণ করতে একজোট হয়েছিল তাঁর গোটা পরিবার।”
সব শেষে নিজের এই সাফল্যের প্রসঙ্গে নেহা বলেন যে, “এই যাত্রাপথ আমাদের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, উদ্যম, কখনও হার না মানার মনোভাব এবং সময়কে কীভাবে ধরে রাখতে হয় আর তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাই শিখিয়ে দেয়।”