২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন সুশান্ত। যোগ দিয়েছিলেন চোপড়ার মাঝিয়ালি হাই স্কুলে। ছোট্ট এক ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ছিল শান্ত এক সংসার। কিন্তু ২০২২ সালে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যানসার, লিউকোমিয়া। তারপর থেকে প্রতি চার মাস অন্তর মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য, যার প্রতিবারের খরচ প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
advertisement
২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের প্রভাব হাজার হাজার স্কুলে! কী হবে বাংলার শিক্ষার ভবিষ্যৎ?
এই পরিস্থিতিতেই আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় তাঁর চাকরি। যদিও সুশান্ত জানান, তাঁর নাম কোনও দুর্নীতির তালিকায় ছিল না। তবুও চাকরি চলে যায়—আর বন্ধ হয়ে যায় আয়ের সমস্ত পথ। সামনে ১৯ মে ফের যেতে হবে মুম্বই, কিন্তু হাতে নেই এক টাকাও।
চোখের সামনে নিজের সন্তানের মুখ, আর অন্য পাশে মৃত্যুর ছায়া। এই পরিস্থিতিতে সুশান্তের প্রশ্ন— “আমি কি আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব? আমি কি আমার সন্তানকে বড় হতে দেখতে পাব?” স্ত্রী একজন সাধারণ গৃহবধূ, তাঁর নিজেরও উপার্জনের কোনও পথ নেই। একমাত্র রোজগেরে সুশান্ত এখন বেকার।
প্রতিবেশীরা পাশে থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আর্থিক দিক থেকে কেউই এগিয়ে আসতে পারছেন না। সমাজ, প্রশাসন বা কোনও সহৃদয় মানুষ—কেউ কি এগিয়ে আসবেন তাঁর পাশে দাঁড়াতে?
চাকরি হারানো হাজার হাজার শিক্ষকের ভিড়ে সুশান্ত দত্ত এক ব্যতিক্রম। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে নেই কোনও তদন্ত, অভিযোগ বা দুর্নীতির ছায়া। তবুও ভাগ্যদেবী মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে রয়েছেন নিশ্চয়ই, তবে মারণরোগে আক্রান্ত হয়ে যাঁদের প্রতিটি দিন মৃত্যুর কাছাকাছি এগিয়ে যাওয়া—তাঁদের অবস্থাটা আরও ভয়ঙ্কর, আরও হৃদয়বিদারক।
সুশান্ত দত্তর জীবনের শেষ ভরসা এখন এই সমাজ, এই রাষ্ট্র। কিছু সংগঠন, কিছু সহৃদয় মানুষ, বা প্রশাসনিক সহানুভূতি—এই মুহূর্তে তাঁর কাছে সেটুকুই বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাঁর প্রশ্ন, “শুধু একটা চাকরি নয়, সেটা ছিল আমার জীবন। সেটা কেড়ে নেওয়া কি ঠিক?”