২০২৩ ব্যাচের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস অফিসার মোইন আহমেদ মোরাদাবাদের দিলাড়ি এলাকার জাতপুরা গ্রামের ছেলে। তাঁর বাবা ওয়ালি হাসান ছিলেন মোরাদাবাদে ইউপি রোডওয়েজের বাস ড্রাইভার। মা তাসলিম গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মোইন দ্বিতীয়। ছোটবেলায় তিনি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু বাবার একমাত্র উপার্জনে ক্রিকেট কিট বা ট্রেনিংয়ের খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে স্বপ্ন ছেড়ে দিতে হয়। সেই প্রথম মোইন বুঝেছিলেন জীবনের কঠোরতা কী।
advertisement
পারিশ্রমিক নিলেন ১৮ কোটি! নেত্রা মন্তেনার বিয়েতে দেখে নিন কী করলেন জেনিফার লোপেজ!
আজ ৫ লক্ষ টাকার সোনা কিনলে ২০৩০ সালে তার দাম কত হবে? বিনিয়োগের আগে জেনে নিন
শিক্ষায় বরাবরই মনোযোগী মোইন দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো ফল করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ফি-এর অঙ্ক তাঁর নাগালের বাইরে ছিল। ব্যাংকও তাঁকে শিক্ষা ঋণ দিতে রাজি হয়নি। ফলে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। মোইন ফিরে আসেন নিজের শহর মোরাদাবাদে এবং সেখানেই স্নাতক ডিগ্রির প্রস্তুতি নেন।
২৫ বছর বয়সি মোইন আহমেদের ক্ষেত্রে সেই সংগ্রাম ছিল শুধু একটা পর্ব নয়—ছিল তাঁর স্বপ্ন গড়ার মাটিই।
পরিবারকে সাহায্য করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা জমানোর উদ্দেশ্যে তিনি কাজ শুরু করেন এক সাইবার ক্যাফেতে। কঠোর পরিশ্রমে দ্রুতই মাসে ৪০ হাজার টাকা রোজগার করতে শুরু করেন। এই সাইবার ক্যাফেতে কাজ করতেই তাঁর মনে জন্ম নেয় UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির ভাবনা। তবে তাঁর সিদ্ধান্তকে সবাই স্বাগত জানায়নি—বাবা আপত্তি করেন, কয়েকজন আত্মীয়ও বলেন এটি ক্যারিয়ার নষ্ট করার সমান। কিন্তু পাশে দাঁড়ান তাঁর মা তাসলিম।
২০১৯ সালে মোইন চাকরি ছেড়ে দিল্লি চলে যান UPSC কোচিং করতে। প্রস্তুতির খরচ যোগাতে ২.৫ লক্ষ টাকার ঋণ নেন। দিল্লির দিনগুলো মোটেই সহজ ছিল না—টাকা ফুরিয়ে যাওয়া, ভয়ংকর মানসিক চাপ, অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে সময়টা ছিল অত্যন্ত কঠিন। ঠিক এমন সময় তিনি পাশে পান কয়েকজন সুহৃদকে। আইআরএস অফিসার অসিফ ইউসুফের পরামর্শ এবং আতিয়া ফাউন্ডেশনের সাহিল খানের আর্থিক সাহায্য তাঁকে নতুন করে ভরসা দেয়।
প্রথম তিন বার UPSC পরীক্ষায় ব্যর্থ হন মোইন। তবুও ভেঙে পড়েননি। অবিচল পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ে চতুর্থ প্রচেষ্টায় তিনি সফল হন। UPSC 2022-এ তাঁর র্যাঙ্ক ২৯৬, এবং তিনি হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম সম্মানজনক প্রশাসনিক পদ—আইএএস অফিসার।
