ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বছর দুই আড়াই আগে সালকিয়ার বাবুডাঙা এলাকার ওই হোম থেকেই ৯ বছর বয়সি একটি বালিকাকে দত্তক নেয় একটি পরিবার৷ কিন্তু কয়েকদিন আগেই ওই মেয়েটি দত্তক নেওয়া বাবা-মাকে অভিযোগ জানায় যে ওই হোমের ভিতরেই তাকে যৌন নির্যাতন করা হত৷ এর পরই হাওড়া মহিলা থানায় অভিযোগ জানান ওই দম্পতি৷ ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা৷ ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে মালিপাঁচঘরা থানা এলাকায় করুণা হোম নামে ওই হোমে হানা দেয় পুলিশ, গোয়েন্দা এবং শিশুকল্যাণ দফতরের যৌথ দল৷
advertisement
আরও পড়ুন: ওজন ১,৫০০ গ্রাম, বিমানের সিটের তলায় মিলল ৭৫ লক্ষ টাকার সোনা !
অভিযোগ, তল্লাশির সময় হোমের থাকা নথিপত্রের সঙ্গে ভিতরে থাকা শিশুর সংখ্যা মেলেনি৷ অভিযোগ, সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী যে সংখ্যক শিশু হোমে থাকার কথা, তার থেকে বেশি সংখ্যক শিশুর খোঁজ মেলে সেখানে৷ এর পরই হোমের মালিক গীতশ্রীকে জেরা করতে শুরু করে পুলিশ এবং সরকারি আধিকারিকরা৷ তখনই অসলগ্ন কথা বলতে শুরু করেন তিনি৷ অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, হোম থেকে শিশু পাচার করা হত৷ এর পরই হোমের মালিক গীতশ্রীকে আটক করে পুলিশ৷ তার পর সারারাত ধরে একে একে আরও আট জনকে আটক করে পুলিশ৷ পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়
স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, হোমে বিদেশ থেকেও লোকজন আসত৷ তাঁদের নিজেদের বন্ধু বলে পরিচয় দিত গীতশ্রী এবং তাঁর স্বামী৷ হোমের ভিতরে পার্টি হত বলেও দাবি স্থানীয়দের৷ এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, কখনওই হোমের ভিতরে বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না৷ হোম থেকে অন্তত কুড়িটি শিশুকে উদ্ধার করে সেফ হোমে পাঠানো হয়েছে৷
আরও পড়ুন: মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া কাপড়, পাশে মদের বোতল, আখের ক্ষেতের ভিতরের মেয়েটির যা অবস্থা
তদন্তকারীদের অনুমান, প্রশাসনের তরফে যে শিশুদের হোমে পাঠানো হত, তার বাইরেও অনেক শিশুকে সেখানে নিয়ে এসে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হত৷ শুধু তাই নয়, দত্তক দেওয়ার জন্য শিশুগুলির প্রয়োজনীয় জন্মের শংসাপত্রও হাওড়া পুরসভা থেকে সহজেই বের করে ফেলতেন গীতশ্রী৷ কারণ গীতশ্রীর শাশুড়ি হাওড়া পুরসভার ডেপুটি মেয়র ছিলেন৷ পুলিশ নিশ্চিত, হোমের কর্মীরাও শিশু পাচার সম্পর্কে অবহিত ছিল৷ এমন কি, হোমের ভিতরে নিয়মিত শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ উঠেছে৷ নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত যেই হোন না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেেন কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হবে৷
এ দিন অভিযুক্তদের হাওড়া আদালতে পেশ করে পুলিশ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে পকসো আইন সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে৷ ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷