এক এসএমএস-এ ফাঁকা করে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বাড়িতে এসে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রথমে বিশ্বাস অর্জন, তারপরে ভুয়ো নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে গায়েব হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা। শহর কলকাতায় সম্প্রতি এমনই প্রতারণার খপ্পরে পড়েছেন এক বাসিন্দা।
এমন নজিরবিহীন জালিয়াতির শিকার শহর কলকাতার ৯২ বছরের এক বাসিন্দা। ঘটনার সূত্রপাত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে। হঠাৎ একটি ফোন আসে নেতাজি নগর থানা এলাকার সূর্যনগরের বাসিন্দা নির্মল কুমার সেন রায়ের কাছে। প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার নির্মলবাবুকে জানানো হয়, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ফোন করা হয়েছে। করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে নির্মলবাবুকে।
advertisement
তাঁর কাছে ঠিকানা জানতে চাওয়া হয় বলে দাবি নির্মলবাবুর। কিছু সময়ের মধ্যে তাঁদের ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হন এক অজ্ঞাত পরিচয়ের মহিলা। নির্মল বাবুর মেয়ে সুদেষ্ণা দাশগুপ্তের দাবি, "ওই মহিলা তাঁদের জানান বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের পর নির্মলবাবুকে ফোন করে সময় দেওয়া হবে, যে কখন স্বাস্থ্য কর্মীরা এসে বুস্টার ডোজ দিয়ে যাবেন।"
সুদেষ্ণা দাশগুপ্তের দাবি, "তিনি জানতে চান, তাঁদের কী করতে হবে? এরপরই ওই মহিলা বলেন, নির্মল বাবুর মোবাইলে একটি মেসেজ এসেছে দেখুন। সেখানে একটি নম্বর দেওয়া হচ্ছে, তাতে এসএমএস ফরোয়ার্ড করে দিতে হবে।" মহিলার কথা শুনে সেইমতো কাজ করেন সুদেষ্ণা। এরপর হঠাৎ সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে নির্মলবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার উধাও হয়ে যায়।
যার মধ্যে সেভিংস অ্যাকাউন্টের ৭৫ হাজার টাকা ও চারটি এফডি অ্যাকাউন্টের দু’লক্ষ টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে চলে যায়। পরদিনই তাঁরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয় নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। কিন্তু সুদেষ্ণাদেবীর দাবি, "তাঁরা কোনও ধরনের নেট ব্যাঙ্কিং করেননি।" তাঁদের অভিযোগ, "বুস্টার ডোজ দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করা হয়েছে।" ইতিমধ্যে নেতাজি নগর থানা ও সাইবার সেলে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন, '৫ লাখ টাকা দিলেই আগের রাতে প্রশ্ন,' টেট নিয়ে বিস্ফোরক শুভেন্দু
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনের প্রতারণা এখন নয়া কৌশল। অটো জেনারেটেড ওটিপি মেসেজ পাঠিয়ে, তা কৌশলে ফের নিজেদের মোবাইলে নিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার লক্ষ্য প্রতারকদের। আর বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়ার জন্য প্রতারকরা ছদ্মবেশে বিভিন্ন পরিচয়ে দেখা করার কৌশল নিয়েছে।
আরও পড়ুন, টেট বানচালের আশঙ্কা প্রকাশ পর্ষদ সভাপতির, সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক কথা
আর এই জালিয়াতি কৌশলের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেওয়া একটি ছক বলেই মানছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। যদিও এক্ষেত্রে যে মহিলা নির্মলবাবুদের বাড়িতে এসেছিলেন তার ছবি ধরা পড়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাতে। ওই মহিলার সঙ্গে আসা এক ব্যক্তিরও ছবি ধরা পড়েছে। যা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সুদেষ্ণার।
