খোদ জেলা শাসকের কাছে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমস্ত মেডিকেল রিপোর্ট-সহ দরবার করে রোগীর পরিবারগুলিকে বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে আর্জি জানান। শেষমেষ মেলে অনুমতি। তবে সেই অনুমতি মেলার পর বর্তমানে আবারও চরম সমস্যার সম্মুখীন হন রোগী এবং তাঁদের পরিবার। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র মেলার পর মঙ্গলবার দক্ষিণ ভারতের ভেলোর থেকে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দেয় দশটি পরিবার। ঠিক হয় ভেলোর থেকে দুর্গাপুর, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিমবঙ্গে যার যেখানে বাড়ি কিলোমিটার প্রতি সেই গাড়ি চব্বিশ টাকা করে নেবে। বিপুল টাকার ব্যাপার থাকলেও অসহায় ও নিরুপায় মানুষগুলো তাতেই রাজি হন। শুরু হয় সড়কপথে যাত্রা। কিন্তু বিপত্তি দেখা যায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে। এক এক করে অনুমতি পত্র পাওয়া দশটি গাড়ি বাংলা উড়িষ্যা সীমানায় পৌছতেই আটকায় পুলিশ।
advertisement
জলেশ্বরের সোনাকোনিয়া চেকপোস্টের কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা গাড়ির চালক এবং আরোহীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেন। গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র, হাসপাতালে কাগজ দেখানোর পরেও পুলিশকর্মীরা জানিয়ে দেন বাংলায় ঢোকা যাবে না। গাড়িতে চিকিৎসা ফেরত রোগীরা রয়েছেন। পাশাপাশি ভেলোর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার সরকারি অনুমতি পত্রও রয়েছে। তাহলে কেন যেতে দেওয়া হবে না? রোগী এবং তাঁদের পরিবারের এই প্রশ্নের উত্তরে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন, করোনা সংক্রমণ তথা লক ডাউনের কারণে অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় কোন যানবাহন ঢোকার অনুমতি নেই'। ফাঁপড়ে পড়েন রাজ্যে ফেরত বাসিন্দারা। পুলিশের বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন সবাই। তাঁদেরই একজন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাবার কিডনির সমস্যা রয়েছে। ওদের কত অনুরোধ করলাম। অনুমতিপত্র থাকা সত্বেও পুলিশকর্মীরা গাড়ি থেকে প্রত্যেককে নামিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চালকদের যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যেতে বললেন।" এরপর সওয়ারিদের নামিয়ে রেখেই মাঝপথেই চালকরা নিজেদের প্রাপ্য নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান ভেলোরের উদ্দেশ্যে। বর্তমানে যে এলাকায় অসহায় পরিবারগুলো আটকে রয়েছে, তার অদূরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নিরুপায় মানুষদের আর্জি, নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থার করুক রাজ্য সরকার।
দুর্গাপুর এ জোনের ৭২ বছরের প্রবীণ দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রঞ্জিতকুমার চট্টোপাধ্যায় কিংবা দুর্গাপুরের বি জোনের বাসিন্দা রঞ্জিত সিকদার আজ অনেকেই আশ্রয়হীন। ভোর রাত থেকে খোলা আকাশের নীচে রাস্তার ধারে দিন কাটছে। হাতে টাকা-পয়সা নেই, খাবার নেই, এমনকি নিয়মিত জীবনদায়ী ওষুধ খাওয়ার মত জলও নেই। "কী করবো কিছু ভেবে উঠতে পারছি না" রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, "আমাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে এখানে কারও কোনও হেলদোল নেই। শুনশান রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে বসেই সময় কাটছে। কী করব ভেবে উঠতে পারছি না।" অপর এক ভুক্তভোগীর কথায়, 'অনেকটা বেশি টাকা খরচ করেও অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলাম না। জানিনা কবে পৌঁছব।' একরাশ উদ্বেগ, আশঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এক কঠিন লড়াইকে সঙ্গী করে। এই লড়াইয়ের শেষ কবে? প্রশ্ন আছে, তবে উত্তর এখনও অজানা অসহায় পরিবারগুলির কাছে।
VENKATESWAR LAHIRI