আরও পড়ুন: কমার আশা জাগিয়ে ফের বাড়ল সোনা-রুপোর দাম! কত যাচ্ছে আজকের বাজারদর?
২৯ ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, সোনার দাম -১.২% ইয়ার-টু-ডেট ভিত্তিতে কমেছে। শুধু তা-ই নয়, গোল্ড মাইনার্স ইনডেক্স এবং জুনিয়র মাইনার্সের পারফরমেন্সও খুবই খারাপ ছিল। ইয়ার-টু-ডেটের ভিত্তিতে রিটার্ন এসেছে -৭.৪২% এবং -১২.০২%।
চলতি বছরে সোনার দাম বৃদ্ধির আশার কিছু কারণ:
advertisement
২০২২ সালে সোনার পারফরমেন্স খুবই দুর্বল ছিল। তবে বেশ কিছু কারণ থেকে স্পষ্ট যে, চলতি বছরে সোনা থেকে দুর্দান্ত রিটার্ন পাওয়া যাবে। দেখে নেওয়া যাক সেই কারণগুলি।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের নতুন কেনাকাটা (বিশেষ করে চিন থেকে):
এই বছর সোনার বাজারে এই বিষয়টার উপরেই প্রথম নজর দিতে হবে। সারা বিশ্বের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, কিংবা নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে চিন, তুরস্ক এবং ভারতের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক রেকর্ড গতিতে সোনা কিনছে। আর এই প্রবণতা চলে আসছে টানা ১৩ বছর ধরে। তবে সম্প্রতি এই গতি অনেকটাই বেড়েছে। আসলে তারা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গোল্ড রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। মূলত ফরেন এক্সচেঞ্জ হোল্ডিং এবং মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের মতে, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ইয়ার-টু-ডেট সোনার চাহিদা ৬৭৩ টন, যা ১৯৬৭ সাল থেকে বার্ষিক সর্বমোট পরিমাণকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের কেনাকাটা মূলত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিরাপদ সম্পদের দিকে চালিত হচ্ছে। গত নভেম্বরে চিনের পিপলস ব্যাঙ্ক ঘোষণা করে যে, তারা ৩২ টন সোনা কিনেছে আউন্স প্রতি ১ হাজার ৬৫০ ডলারের হিসেবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পরে এই প্রথম কোনও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক নিজেদের গোল্ড রিজার্ভে পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করল। আর চলতি বছরেও এই প্রবণতা বজায় থাকবে। যা সোনার দর বাড়াতে সহায়ক হয়ে উঠবে।
সোনার গয়নার চাহিদা:
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সোনার গহনার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যা পৌঁছয় ৫২৩ টনে। গত কয়েক দশকে বার্ষিক ভিত্তিতে সোনার গয়নার চাহিদা ৮৪০ থেকে ২১০০ টন পর্যন্ত হয়েছে। প্রতি বছরে গড়ে ১৫০০ টন। চিনে কোভিড বিধিনিষেধ খানিক শিথিল হওয়ার ফলে সোনার গয়নার চাহিদা বাড়বে বলে আশা। বলে দেওয়া ভাল যে, বর্তমানে সারা বিশ্বের সোনার গয়নার সবথেকে বড় বাজার হল চিন। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চিনের অর্থনীতি পুরোপুরি ভাবে খুলে যাবে। এমনকী এই মুহূর্তের খবর অনুযায়ী, চিনের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই পুনরায় খুলতে শুরু করেছে। চিনে সোনার গয়নার চাহিদাকে প্রভাবিত করে এখানকার সাংস্কৃতিক বিশ্বাস। ফলে চিনের বেশির ভাগ মানুষের কাছে সোনাকে ভাল আর্থিক পরিকল্পনা এবং সৌভাগ্য আনয়নের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাজি ধরে বলা যায় যে, চলতি বছরে চিনের মানুষের সোনা কেনার পরিমাণ বাড়বে।
চাহিদা এবং সরবরাহের পরিসংখ্যান:
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের মতে, গত বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মোট সোনার সরবারহ কিছুটা হলেও বেড়েছে। ইয়ার-ওভার-ইয়ারের ভিত্তিতে ১ শতাংশ বেড়ে তা হয়েছে ১ হাজার ২১৫ টন। ২০১৮ সাল থেকে মাইন প্রোডাকশনের মাত্রা বেড়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের হার কমানোর বিষয়:
সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফেডারেল রিজার্ভ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। তবে আগামী কয়েক বছরে এর হার কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞের ভবিষ্যদ্বাণী, চলতি বছরের শেষ দিক থেকেই এটা ঘটতে পারে। কারণ কোভিড অতিমারী থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। কম সুদের হার কিন্তু সোনার দরের জন্য বেশ ইতিবাচক একটা দিক। কারণ এটা সোনা রাখার খরচ কমাবে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
দুর্বল মার্কিন ডলার:
সোনার দর এবং মার্কিন ডলারের মূল্যের বিপরীত মুখে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ডলার দর কমলে কখনও কখনও সোনার দর বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক কালে ডলারের দুর্বল অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আর সেই অবস্থা গোটা বছরটা জুড়েই চলার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে সোনার দর বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।