১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বড় ঘোষণা আসতে চলেছে। আয়কর ছাড়, ক্যাপেক্স বৃদ্ধি, জিএসটি রেশনালাইজেশন সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে চাহিদা পূরণ হতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন অ্যালায়েন্স ইউনিভার্সিটির প্রো-চ্যান্সেলার অভয় জি চেব্বি। তিনি বলছেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো খুব জরুরি। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, মহাকাশ গবেষণা, উদ্ভাবন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক্সিলেন্স সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। সেখানে নিত্যনতুন গবেষণা হবে। স্টার্টআপের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে। তবেই প্রযুক্তি খাতে ভারতের অবস্থান মজবুত হবে।“
advertisement
কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫ | Union Budget 2025 Live Updates
আরও পড়ুন: হু হু করে বেড়েই চলেছে সোনার দাম ! বাজেটের পর দাম কি কমতে পারে ?
উচ্চ শিক্ষায় গবেষণা এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির উপর বিশেষ জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শোলিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রো-চ্যান্সেলার বিশাল আনন্দ। তিনি বলছেন, “গবেষণা এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিকে কর্পোরেট সিএসআর তহবিলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এতে গবেষণায় নতুন দিগ্নত খুলে যাবে।“
শুধু তাই নয়, শিক্ষা ও গবেষণায় মূলধনী ব্যয়কে অগ্রাধিকার ঋণের আওতায় আনার সওয়াল করেছেন বিশাল। তাঁর মতে,”দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সেই অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদে, কমপক্ষে ২৫ বছরের কথা ভেবে টাকা ঢালতে হবে। কম সুদে ভর্তুকিযুক্ত ঋণ দিতে হবে। এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগও আসবে। শিক্ষাকে লাভজনক মডেল হিসেবে এই খাতে পুঁজি আসবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের অবস্থানও শক্তিশালী হবে।“
পাশাপাশি জামানত ছাড়া এডুকেশন লোন দেওয়ার দাবিও তুলেছেন বিশাল। তাঁর কথায়, “এতে দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উৎসাহিত হবেন। আরও সুযোগ তৈরি হবে। ভারতের মতো তরুণ জনসংখ্যাবহুল দেশে এটা খুব প্রয়োজন।“
দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন হিন্দুস্থান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স-এর অধ্যাপক এবং প্রধান ড. এম কে বদ্রীনারায়ণ। তাঁর মতে, বাজেটে এই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বদ্রীনারায়ণ বলছেন, “জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। অধিকাংশই তরুণ। এটা একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্য দিকে, সুযোগও। স্বাধীনতার পর সাত দশক কেটে গিয়েছে। দেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অংশ। ভারতের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি প্রায় অর্ধেক বিশ্ব শাসন করছে। এই উন্নতির পথে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেও সামিল করতে হবে।“
বদ্রীনারায়ণের কথায়, “দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত। এই বিপুল মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের অনেক রকমের সমস্যা রয়েছে। খরচ বাড়ছে, চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে আর্থিক স্থিতিশীলতা আসে। মধ্যবিত্ত সমাজ সমৃদ্ধ হয়।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ঋণ, মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এমনটাই মনে করেন বদ্রীনারায়ণ। তাঁর কথায়, “বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়, কিন্তু সাধারণ চাকরিজীবীরা রেহাই পান না। এমএসএমই মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থানের উৎস, কিন্তু ঋণ এবং কর সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত। সরকার যদি নির্দিষ্ট কর ছাড়, সুদের হার কমানো এবং স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি স্কুল ও হাসপাতাল উন্নয়ন করে, তবেই মধ্যবিত্ত সমাজের সুরাহা হবে। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণি শক্তিশালী হলে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর স্লোগানও সত্যিকারের বাস্তবায়িত হবে।“
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে খরচ করার মতো টাকা থাকলে আর্থিক প্রবৃদ্ধি গতি পাবে বলে মনে করেন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড কমার্স, MIT-WPU-এর ডিন ড. অঞ্জলী সানে। তিনি বলছেন, “সবাই এখন বাজেটের দিকেই তাকিয়ে। ট্যাক্স স্ল্যাব পরিবর্তনের আশা করছি। আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে ১৫ লাখ, সিকিউরিটিজ ট্রানজেকশন ট্যাক্স (STT) তুলে নেওয়া এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।“
পেনশন বাড়ানোর দাবিও তুলছেন অঞ্জলী। তাঁর কথায়, “অবসরপ্রাপ্তদের কথা ভাবা উচিত। ইপিএফও-এর আওতায় পেনশন বৃদ্ধি এবং পেনশন কর ছাড় দিলে অনেকটা সুরাহা হবে।“ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও করেছেন তিনি। পাশাপাশি জিএসটি কাঠামো আরও সহজ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে কর কমালে আমজনতার উপকার হবে বলেও মনে করেন তিনি।
