গত দু’দশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে ভারতবর্ষও। তবে সেই অনুপাতে কর্মসংস্থা ঘটেনি তেমন। তাই শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন অবশ্যই শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে ব্যবধান দূর করার জন্য আসন্ন বাজেটে কোনও না কোনও নিদান দিতে পারে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে উচ্চমানের ডিজিটাল শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করার দিকে নজর দেওয়াও দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা। শিক্ষাক্ষেত্রে পেশাদারদের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর)-এর প্রশিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য শিক্ষকদের যথযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: টাকা লেনদেনে ইউপিআই ব্যবহার করেন? এই ভুলগুলি করছেন না তো? জেনে নিন, নয়তো লোকসান!
আসলে ভারতে তরুণ জনসংখ্যার আধিক্য বরাবরই রয়েছে। আর সেই কারণেই সারাবিশ্বে ভারতীয় যুব সম্প্রদায়ের প্রতিভার চাহিদাও রয়েছে। কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই দাবি করেছে আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কর্মীবাহিনীর প্রায় ২৫ শতাংশ ভারতীয় হবেন। এই আকাঙ্ক্ষাকে মাথায় রেখে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের শিক্ষার দরজা খুলে দেওয়ার পক্ষপাতী অনেক বিশেষজ্ঞই।
২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে 'আন্তর্জাতিককরণ'-এর ব্যবস্থা করার দাবি রাখেন তাঁরা। পাশাপাশি ভারতে যাতে বিদেশি ছাত্ররা এসে পড়াশোনা করতে পারেন তার পরিকাঠামো গড়ার দিকেও নজর দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা। বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা আদানপ্রদানের সুযোগ গড়ে উঠলে শিক্ষার্থীদের লাভ হবে বলেই তাঁরা মনে করে। তাঁদের দাবি, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় পড়ুয়ারা এই সুযোগ পান না বলে পরবর্তীতে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে সময় পরিবর্তন আসতে চলেছে ঠিক সেই সময়ই বাজেটও অনুষ্ঠিত হবে। ফলে শিক্ষা সংক্রান্ত বরাদ্দের বিষয়টি সেখানে গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - ব্রাইটনেস ভলিউম ফুল রেখে স্মার্টফোন দেখেন? অজান্তেই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ডেকে আনছেন
বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার এই সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির মূল নীতিগুলিকে ত্বরান্বিত করতে চাইবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এর মূল বিষয়ই হল ডিজিটাল চালিত বৃদ্ধি। আর সে জন্যই ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’-র পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘ডিজিটাল লাইব্রেরি ইকোসিস্টেম’-ও স্থাপন করা হতে পারে, বা তাকে উৎসাহিত করা হতে পারে, যা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কাজ করতে পারে। এই ধরনের ডিজিটাল বিষয়বস্তুর ভাণ্ডার শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদেরই সাহায্য করবে না, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাবিদদেরও সাহায্য করবে।
ভারতীয় উচ্চ শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে, ক্রয়ক্ষমতা এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞদের আশা শিক্ষা মূলক কর্মসূচিতে ১৮ শতাংশ কর হ্রাস করা হবে। তা হলেই এদেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর বোঝা খানিকটা কম হবে যাঁরা দক্ষতা বৃ্দ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ চাইছেন। আর এর থেকেই তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানেও প্রভাবিত হবে।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তার ডিজিটাইজেশন প্রচেষ্টায় বৃহত্তর বেসরকারি অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে। বিশেষত যেখানে বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়টি সম্পর্কিত। ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রথম থেকেই শিক্ষার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছে এই জাতীয় শিক্ষানীতি। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির অংশীদারিত্ব তৈরি হলে তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি কর্মমুখী শিক্ষা পেতে পারবেন।
কর্মসংস্থানের জন্য যে কেরিয়ার সচেতনতার উপর জোর দিতে হবে, নিয়ে মোটামুটি সকলেই নিঃসংশয়। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশেরই বয়স ২৫-এর নিচে। এই নাগরিকের জন্য ভারতকে একটি প্রতিভার আগার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রাখছে ভারত সরকার, অন্তত তেমনই সরকারের দাবি। তাই, এই লক্ষ্যে কর্মজীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবের সঠিক দিশা রাখতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মডেল থাকলে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা সহজ হবে, যা যুবকদের মধ্যে সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়াবে।