একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আবাসিক সম্পত্তির বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ। তবে, এই নিয়ে যে খুব আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে এমনটা মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
কারণ ২০২৩ বা তার পরবর্তী সময়ে ভারতে আবাসন ক্ষেত্রে সব কিছুই যে খুব মসৃণ পথে এগোবে এমনটা নয়। আর সে কারণেই ২০২৩ সালের বাজেট ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসাহ জোগাতে পারে, যদি কেন্দ্রীয় সরকার চায়।
advertisement
প্রকৃতপক্ষে গৃহঋণ এবং রিয়েল এসেস্ট হল ভারতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। বর্তমানে এই ক্ষেত্রটি বেশ টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। সুদের হার বৃদ্ধিই এজন্য অনেকাংশে দায়ী। ফলে মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে এই ক্ষেত্রে খানিকটা বৃদ্ধি পেতে গেলে সুদের হার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতেই হবে। পাশাপাশি ঋণদাতাদের যুক্তিসঙ্গত মূল্য এবং আকর্ষণীয় পরিশোধের শর্তাবলী দিতে হবে গ্রাহককে। একমাত্র তাহলেই এই ক্ষেত্রে খানিকটা নিশ্চয়তা পাওয়া যেতে পারে। রিয়েল এস্টেট শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৩ সালের বাজেটে বাড়ি কিনতে চান এমন নাগরিকদের সাহায্য করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপ।
গৃহঋণ সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তন
বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, গৃহঋণকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে গেলে অবশ্যই গৃহঋণে সুদের হার কমাতে হবে। তবে এ কথা শুধু বিশেষজ্ঞদের নয়, গত কয়েক মাসে যে ভাবে গৃহঋণে সুদের হার বেড়েছে, তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার। ঋণের হার অবশ্য সব সময়ই নির্ভর করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র নীতির উপর। তবে বাজেট গৃহঋণ পাওয়ার নিয়মগুলি শিথিল করতে পারে খানিকটা, তাতে ক্রেতারা খানিকটা স্বস্তি পেতে পারেন।
কেমন হতে পারে সেই পরিবর্তন? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, গৃহঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট-এর পরিমাণ কমানো যেতে পারে। অথবা, ঋণ যোগ্যতার মাপকাঠি সহজ করা যেতে পারে। তাতে ক্রেতাদের অর্থায়ন নিরাপদ করা অনেকটা সহজ করতে পারে।
কর ছাড়
সুদের হার বৃদ্ধির ফলে আগামী দিনে গৃহঋণ ও রিয়েল এস্টেট খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ক্রমবর্ধমান সুদের হার ক্রয়ক্ষমতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হতে পারে। এনিয়ে ক্রেতারা উদ্বিগ্ন। তাই, কেন্দ্রীয় সরকার ধারা ২৪(বি)-এর অধীনে যদি গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের উপর করছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে, তবে উপকার হতে পারে।
জীবনের প্রথম বাড়ি কেনার জন্য ক্রেতাদের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলে তা একটি বাড়ি কেনার সামগ্রিক খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাতে নাগরিকের অনেকটা সুবিধা হতে পারে।
সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, উর্ধ্বসীমায় পরিবর্তন
এই মুহূর্তে ভারতের সমস্ত শহরে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন হিসেবে গণ্য করা হয় ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তিকে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু তার উপরে উঠে গেলেই খরচ বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উর্ধ্বসীমা ভারতের বেশিরভাগ শহরের ক্ষেত্রেই উপযুক্ত নয়। বরং এই উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৭৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি করা প্রয়োজন।
জিএসটি ছাড়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে নির্মাণাধীন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্য বর্তমান জিএসটি কাঠামো যে রকম রয়েছে, তা নির্মাণকারীদের উপর অতিরিক্ত বোঝা তৈরি করে। এর ফলে ক্রেতাদেরই অতিরিক্ত মূল্য চোকাতে হয়। এর কারণ অনেক গভীরে। এই মুহূর্তে ভারতে ইস্পাতের উপর জিএসটি ১৮ শতাংশ, সিমেন্টের উপর ২৮ শতাংশ। নির্মাণকারী সংস্থা এই সব কারণে দেওয়া জিএসটি-এর জন্য কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন না। ফলে পরোক্ষে দাম বাড়ে আবাসনে, বোঝা চাপে মধ্যবিত্তের কাঁধে। এই বোঝা কমাতে এবং সম্পত্তির ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে, সরকার আসন্ন বাজেটে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (আইটিসি) পুনরুদ্ধার করার কথা বিবেচনা করতে পারে। পাশাপাশি সিমেন্ট এবং ইস্পাতের মতো কাঁচামালের খরচ কমালেও সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি কেনার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে সে দিকে সরকারের নজর থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া, নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলির জন্য জিএসটি ১ শতাংশয় সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন, লাভ হতে পারে মধ্যবিত্তদেরও! বাজেটে বিরাট ঘোষণা করতে পারেন নির্মলা
আরও পড়ুন, শুধু স্যালারি নয়, মিলতে চলেছে আরও সুবিধা! বাজেটে কেন্দ্রীয় কর্মীদের বিপুল লাভ
ভাড়ার আবাসন
ভারতে এই ধরনের আবাসনের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন ২০২৩ সালের বাজেটে এই ক্ষেত্রটিকে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যে সমস্ত নির্মাণকারী আবাসন প্রকল্প ভাড়া দেওয়ার জন্য তৈরি করবেন, তাঁদের কর সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।