অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিল্প: গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের থেকে আরও ব্যক্তিগত অফার আশা করছেন। কোন বিষয় তাঁদের পছন্দ সেটা বুঝে এমন একটা পরিষেবা তৈরি করা যাতে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০২৩ সালে গ্রাহকদের চাহিদা অনুমান করা এবং সেই অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতাই একটা ব্যাঙ্ককে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাঙ্কগুলোর থেকে আলাদা করে দেবে। বেশিরভাগ ব্যাঙ্কই আরও বেশি করে ডিজিটাইজেশনের উপর জোর দেবে। তাদের ডিজাইন করা সমাধানগুলি সুবিধা, নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং ব্যস্ততার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করবে তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। বিশ্লেষণ ক্ষমতার দৌলতে গ্রাহকদের সম্পর্কে ব্যাঙ্কের জ্ঞান এতটাই বাড়বে যে তারা কেবল অফারগুলিকে কাস্টমাইজ করার দক্ষতা রাখবে তাই নয়, প্রয়োজনীয়তাগুলো অনুমান করে সেই মতো পরিষেবার গুণমানকেও বাড়িয়ে তুলবে।
advertisement
আরও পড়ুন: আরও দাম বাড়ল সোনা-রুপোর, কিনতে যাওয়ার আগে দেখে নিন লেটেস্ট দাম
ওপেন ব্যাঙ্কিংই ভবিষ্যৎ: ওপেন এপিআই ব্যাঙ্কিং এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু এটাই ভবিষ্যতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ওপেন এপিআই ব্যাঙ্কগুলিকে তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা প্রদানকারী বা ফিনটেকের সঙ্গে ডেটা ভাগ করার অনুমতি দেয়। যেহেতু ব্যাঙ্কিং এবং অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সীমানা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে তাই এপিআই ক্রস-সেলিং পণ্য বা লেনদেনের নতুন সুযোগ তৈরি করতে ব্যাঙ্কগুলির জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠবে৷ এর ফলে গ্রাহকরাও বেশি সুবিধা পাবেন। তবে ওপেন এপিআই-এ নিরাপত্তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা এপিআই কার্যপ্রবাহকে ধীর না করেও গ্রাহকদের ডেটার প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। ২০২৩ সালে সম্ভবত ওপেন এপিআই ব্যাঙ্ক এবং তৃতীয় পক্ষ প্রদানকারীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের বিষয় হতে চলেছে। যাই হোক, ডেটা যাতে ফাঁস না হয়ে যায় তাঁর জন্য হাইব্রিড এপিআইগুলোতে ফোকাস করা যেতে পারে। ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বোত্তম প্রযুক্তি পদ্ধতি খুঁজে পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গ্রামীণ খাতে বিরাট লাভের সম্ভাবনা! জানুন বাজেটে নিয়ে কী বলছেন অর্থনীতিবিদ
চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে ব্যাঙ্কগুলো বিশুদ্ধ প্রযুক্তি কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে। বিস্তৃত গ্রাহক বেস এবং বৃহৎ বন্টন ব্যবস্থা ব্যবহার করে ডিজিটাল সমাধান দেওয়াই হবে তাদের কাজ। বর্তমানে জালিয়াতি সনাক্তকরণ এবং সম্মতির মতো ক্ষেত্রগুলিতেও, ব্যাঙ্কগুলি বিশুদ্ধ প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে টক্কর নিতে পারে না। কারণ তাদের উন্নত বিশ্লেষণে অ্যাক্সেস এবং বিপুল ডেটা ক্রাঞ্চ করার ক্ষমতা নেই। ২০২৩ সালে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের উত্থান ইতিমধ্যেই শিল্প জগতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেই ব্যাঙ্কিং সেক্টর অন্য রূপে আবির্ভূত হবে।
ডিজিটাল চ্যানেল: ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংকে ভবিষ্যৎ বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। ‘ডিজিটাল ম্যাচিউরিটি’ যত বাড়বে, ব্যাঙ্কগুলোও ধীরে ধীরে তাদের শাখা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেবে। এটাই ভবিতব্য। ইদানীং গ্রাহক সচেতনতাও বেড়েছে। তাঁরাও ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ে অভ্যস্ত হয়েছেন। তাঁরা ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলা বা জমা দেওয়ার চেয়ে অনলাইন বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং করতেই বেশি করেন।
ব্যাঙ্কিং অ্যাপস এখন স্মার্ট ডিজিটাল সহকারী: ২০২৩ সালে ব্যাঙ্কিং অ্যাপগুলো আর নিছক অ্যাপ থাকবে না। সেগুলো স্মার্ট ডিজিটাল সহকারীতে রূপান্তরিত হবে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুমান করে এবং তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কাস্টমাইজড পরামর্শ প্রদান করবে। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক আচরণের উপর ভিত্তি করে গ্রাহকের চাহিদা এবং পছন্দগুলোও বুঝে নেবে অ্যাপ। যেমন কেউ যদি সবসময় পে-ডেতে সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেন কিন্তু আগামী মাসের পেমেন্ট কার্ড টপ আপ করতে ভুলে যান তাহলে স্মার্ট অ্যাপ জানিয়ে দেবে– আপনার কার্ডের জন্য শীঘ্রই অর্থের প্রয়োজন হবে। অ্যাপগুলোর মাধ্যমে নিরন্তর কাজ হয়। তাই গ্রাহক নিজে উপলব্ধি করার আগেই তারা কী করতে চায় তা পরামর্শ দিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নেবে অ্যাপগুলো।
আরও বেশি গ্রাহক নিজেরাই ব্যাঙ্কিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন: ব্যাঙ্কিং শিল্প ক্রমশ গ্রাহক কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। গ্রাহক নিজেরাই লেনদেন সহ আরও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সন্ধান করছেন। ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রগতির সঙ্গে, অনেক স্ব-পরিষেবা অফার (যেমন, মোবাইল অ্যাকাউন্ট খোলা) গ্রাহকের কাছাকাছি কোনও শাখা বা এটিএম-এই পাওয়া যাবে। গ্রাহকদের আর সশরীরে ব্যাঙ্কে যাওয়ার দরকার হবে না। দ্রুত এবং সহজে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। ২০২৩ সালে, স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াগুলি পরিষেবার গুণমানকে আরও উন্নত করবে বলেও আশা করা হচ্ছে, উন্নত অ্যানালিটিক্স দ্বারা চালিত স্ব-পরিষেবা সরঞ্জামগুলি গ্রাহকদের দ্রুত এবং ভালো সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে৷
বিগ ডেটা এবং অ্যানালেটিকসে ফোকাস থাকবে: বড় ডেটার সাহায্যে, ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের আচরণকে তাদের ব্যবসায়িক মডেলের একেবারে কেন্দ্রে রাখতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিষেবা প্রদান তো থাকবেই পাশাপাশি বিশ্লেষণ থেকে সর্বাধিক লাভের মাধ্যমে নিজেদের বিক্রি বাড়াতেও সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে, সফল ডিজিটাল রূপান্তর নির্ভর করবে একটি ব্যাঙ্ক তার গ্রাহকদের কাছ থেকে কতটা শিখতে পারে তার উপর। গ্রাহক অধিগ্রহণের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাজার বিভাজন এবং ক্রস-সেলিং-এ বিশ্লেষণ অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দ্রুত ডেটা সংগ্রহের মাধ্যমে আরও ‘ক্লোজড লুপ’ দেখার আশা করা যেতে পারে। এটা ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের গ্রাহকদের চাহিদার ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ অর্জনে সাহায্য করে। ডিসকাউন্ট বা ব্যক্তিগত অফার সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতেও সাহায্য করে।
ব্লকচেন থাকার জন্য এসেছে: এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে ব্লকচেন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে সাধারণ লেনদেন এবং অর্থ স্থানান্তর ছাড়াও আর্থিক পরিষেবার অনেক ক্ষেত্রেই ব্লকচেন প্রযুক্তি গ্রহণ করা হবে। এটা নিশ্চিত যে নতুন বছরে কেওয়াইসি এবং গ্রাহকদের প্রচেষ্টাকে বিকেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত করবে। ফলে এটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, নতুন বছরে বাজারে আরও ব্লকচেন ভিত্তিক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যাটফর্ম আসতে চলেছে। তবে ব্লকচেইন-ভিত্তিক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যাটফর্মগুলিকে প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে বিদ্যমান সেটেলমেন্ট সিস্টেমের পরিপূরক হিসাবে দেখাই ভাল।
আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স, চ্যাটবটের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাঙ্কের সম্পর্ক আরও গভীর: আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স চালিত চ্যাটবটগুলি গ্রাহকদের বিভিন্ন অনুরোধ নিজেরাই পরিচালনা করবে। যেমন চ্যাটবট একজন গ্রাহকের আর্থিক ডেটা অ্যাক্সেস করার জন্য প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। সেই অনুযায়ী কোন পণ্য তাঁর জন্য উপযুক্ত হবে সেই নিয়ে তারা গ্রাহককে পরামর্শ দেবে। সেটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা কিংবা ক্রেডিট কার্ড আপগ্রেড করা নিয়ে হতে পারে। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স শুধুমাত্র চ্যাটবটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ব্যাঙ্কগুলি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স সহ আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যাপ্লিকেশনগুলিও খুঁজে দেখছে যাতে ভয়েস বা কথোপকথন থেকে গ্রাহকদের অনুরোধগুলি পরিচালনা করা যায়। ২০২৩ সালে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সেরই জয়জয়কার হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিই এই ব্যাপারে কোমর বাঁধতে শুরু করেছে। বিভিন্ন অ্যাপের পরীক্ষানিরীক্ষাও চলছে।
নো-কোড বা লো-কোড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম: ধীরগতির উন্নয়ন প্রকল্প আর চলবে না। দ্রুত কাজ করে এমন জিনিস চাই। মানুষের হাতে সময় কম। তাছাড়া দ্রুত কাজ করলে অনেক বেশি গ্রাহককে পরিষেবাও দেওয়া যাবে। তাই নো-কোড বা লো-কোড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলি দ্রুত জনপ্রিয় হতে চলেছে। ব্যাঙ্কিং শিল্পকে এগিয়ে যেতে হলে বাজারের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। ব্যাঙ্কগুলিকে ডিজিটাল পণ্য এবং পরিষেবাগুলি রোল আউট করতে যে সময় লাগে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে হবে। থার্ড-পার্টি ফিনটেক ফার্মে ছেয়ে যাবে বাজার। এরা এমন ডিজিটাল সমাধান অফার করবে যা কোর ব্যাঙ্কিংস সিস্টেমের সঙ্গে সহজেই একত্রিত করা যায়। নো-কোড বা লো-কোড প্ল্যাটফর্মগুলি তারা ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সংস্থাগুলিকে নতুন ডিজিটাল পণ্য এবং পরিষেবাগুলি বিকাশের একটি 'সহজ' উপায় অফার করে। এর জন্য খুব বেশি খরচও করতে হয় না।
