নিউজ ১৮-এর সহযোগী এবং দেশের এক নম্বর ব্যবসায়িক চ্যানেল সিএনবিসি আওয়াজ ‘দিওয়ালি থেকে দীপাবলি’ শিরোনামে একটি সিরিজ শুরু করেছে। দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা সেখানে আসছেন। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হল, কোন স্টক এবং সেক্টরে বাজি ধরলে লাভবান হওয়া সম্ভব এবং কোনগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে, সেই বিষয়ে দেশের বিনিয়োগকারীদের ওয়াকিবহাল করা।
advertisement
আরও পড়ুন: কালীপুজোর আগে ফের সোনার দামে ধস! ফের সস্তা মধ্যবিত্তের প্রিয় ধাতু
এই অনুষ্ঠানে প্রায় সব বিনিয়োগকারীরাই খোলাখুলি ভাবে যে খাতের নাম নিয়েছেন, তা হল ব্যাঙ্ক এবং ক্যাপিটাল গুডস। বিনিয়োগকারীরা দুটি ক্ষেত্রেই বাম্পার সুযোগ দেখছেন। কোটাক এএমসির এমডি এবং সিইও নীলেশ শাহের মতে, আগামী বছরে ব্যাঙ্ক এবং ফিনান্সের পারফরমেন্স ভাল হবে। এই মনোভাবের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। নীলেশ শাহের মতে, খারাপ ঋণ অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যাঙ্কগুলোর মার্জিনের উন্নতি হচ্ছে এবং সাম্প্রতিক পতনের পরে স্টক আরও আকর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
আদিত্য বিড়লা সান লাইফের এমডি এবং সিইও এ. বালাসুব্রমণিয়নের মতে, ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক স্টকগুলির আধিপত্য বজায় থাকবে। এই সব কোম্পানিতে যে বিকাশ হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, এই খাতে যদি শক্তিশালী উর্ধ্বগতি হয়, তা-হলে টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত? এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডই সেরা বিনিয়োগের মাধ্যম। ব্যাঙ্কিং তহবিল নিয়ে যে কোনও মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা এতে এসআইপি করতে পারেন। এনভিশন ক্যাপিটালের এমডি এবং সিইও নীলেশ শাহের মতে, আইসিআইসিআই, এসবিআই-এর মতো ব্যাঙ্কগুলি ব্যাঙ্কিং সেক্টরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। হেলিওস ক্যাপিটালের সমীর অরোরা সিএনবিসি-আওয়াজকে জানিয়েছেন যে, তিনি নিজে সম্প্রতি ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক এবং আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করেছেন।
আরও পড়ুন: এ-বার নেসলে থেকেই সরাসরি কেনা যাবে ম্যাগি! চালু হল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম
বড় বিনিয়োগকারীদের ব্যাঙ্কিং সেক্টর পছন্দের আর একটা কারণ হল, এই বছরের ব্যাঙ্কগুলির সূচক ব্যাঙ্ক নিফটি সমগ্র বিশ্বে সর্বাধিক চলমান সূচক। এই বছর নিফটি, সেনসেক্স ফ্ল্যাট রিটার্ন দিয়েছে, যেখানে ব্যাঙ্ক নিফটি ১৫ শতাংশের বিপুল রিটার্ন দিয়েছে। সরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে গতি আরও বেশি। নিফটি পিএসইউ ব্যাঙ্ক সূচক এই বছর ২৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। স্টক সম্পর্কে কথা বলতে গেলে দেখা যাবে যে, এই বছর ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ফেডারেল ব্যাঙ্কও ৬০ শতাংশ লাভ করেছে। ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক আবার পরিচালিত হয়েছে ৩৮ শতাংশে। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এসবিআই, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ২০ শতাংশেরও বেশি।
শুধু ব্যাঙ্ক কিংবা ফিনান্স স্টকই নয়, অন্যান্য খাতগুলিও বড় বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে। এনভিশন ক্যাপিটালের নীলেশ শাহ প্রতিরক্ষা স্টকে বাজি ধরতে চান। নীলেশের মতে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি আরও বাড়বে। ফার্মা সেক্টরে তাঁর অন্যতম পছন্দের তালিকায় রয়েছে সিপলা। নির্মল ব্যাঙ্গ সিকিউরিটিজের রাহুল অরোরাও সিপলার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। সমীর আরোরা বলেন যে, ‘দেশীয় অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত স্টকের দিকেও নজর রাখা উচিত। জুতো, কাপড়ের মতো জিনিস তৈরির কোম্পানিগুলোও ভাল ফল করবে’।
এ ছাড়া দেশের বড় পরিবর্তনগুলির দিকেও নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত আইটি, বিপিও-র আধিপত্য ছিল পরিষেবা খাত বা সার্ভিস সেক্টরে, কিন্তু এখন সরকার দেশের উৎপাদন খাত বা ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। দেশে উৎপাদন বাড়লে আরও নতুন নতুন প্ল্যান্টও স্থাপন করা যাবে। আর নতুন প্লান্ট স্থাপন করা হলে নতুন মেশিনেরও প্রয়োজন হবে। এই কারণে মূলধনী পণ্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোও এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই বছর ব্যাঙ্ক বিনিয়োগকারীদের যতটা খুশি করেছে, ততটাই কাঁদিয়ে ছেড়েছে আইটি স্টকে বিনিয়োগকারীদের। টিসিএস, ইনফোসিসের মতো বড় আইটি সংস্থাগুলি এই বছরে ৩০ শতাংশ কমেছে। মিডক্যাপ আইটি স্টক কমেছে ৪০ শতাংশ। তবে আইটি সেক্টর নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধা বিভক্ত। কেউ কেউ সম্পূর্ণ দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। আইটি স্টক আরও কমতে পারে, তবে বড় পতনের সম্ভাবনা কম।