এই মহিলা রাস্তার ধারে একটি খাবার হোটেল চালান। প্রতিদিন দুপুর হতেই, খাবার সাজিয়ে বসেন তিনি। বর্তমানে তার খাবারের চাহিদা বেশ ভাল। যে কারণে দোকান খোলার আগে থেকেই,লম্বা লাইন পড়ে যায় ক্রেতাদের। অল্প টাকার মধ্যে ভাল মানের খাবার পরিবেশন করে ইতিমধ্যেই তিনি মন জিতে নিয়েছেন বহু মানুষের । বর্তমানে মুনমুন এবং তাঁর স্বামী দুজনে মিলে এই দোকান চালান। তবে বর্তমানে মুনমুনের অবস্থা ভাল হলেও , যখন তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তখন পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম ।
advertisement
আরও পড়ুন: LIC-র এই ৩ প্ল্যান কোটিপতি বানাতে পারে, আপনি বিনিয়োগ করেছেন কি?
এই প্রসঙ্গে মুনমুন বলেন , তাঁর মেয়ে ছোট থাকার কারণে তিনি লকডাউনের আগে চাকরি ছেড়ে দেন । লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাঁর স্বামীরও চাকরি চলে যায়। পরবর্তীতে মুনমুন যেহুতু রান্না ভাল করেন তাই হোম ডেলিভারি খাবারের ব্যবসা শুরু করবেন বলে ঠিক করেন । প্রথম দিন তিনি মাত্র ৩৭০ টাকা ব্যবসা শুরু করেছিলেন । বেশ কিছু দোকানে ধারও করেছিলেন। মুনমুন প্রথম দিন প্রায় ২২ জনের খাবার ডেলিভারি দিয়েছিলেন । যার মধ্যে ছিল দুজন কোভিড আক্রান্ত।
মুনমুন বলেন যদি সেই সময় তিনি ধার না পেতেন, তাঁদের সাহায্য না পেতেন তাহলে হয়ত আজ মুনমুন দিদি হয়ে উঠতে পারতেন না ।কঠিন পরিস্থিতি থেকে ব্যবসা শুরু হলেও আজ মুনমুন একটা ভাল জায়গায় রয়েছেন। দোকানের বিক্রিও বেড়েছে ব্যাপক । জানা গিয়েছে এখন তাঁর দোকান থেকে দৈনিক প্রায় ১২০০ প্লেট খাবার বিক্রি হয় । মুনমুনের ফুড স্টলে পাওয়া যায় বাসন্তী পোলাও, চিকেন কষা, ফ্রাইড রাইস, মটন কষা, চিলি চিকেন, রুটি, খাসির মাংসের ঘুগনি সঙ্গে আরও বেশ কিছু খাবারের পদ।
আরও পড়ুন: পোস্ট অফিস দিচ্ছে বাড়তি আয়ের সুযোগ, বেতনের পাশাপাশি প্রতি মাসে মিলবে মোটা টাকা !
মাত্র ৫০ টাকায় পাওয়া যায় বাসন্তী পোলাও অথবা ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে চিকেনের যে কোনও আইটেম। মটন নিলে দাম পড়বে ১০০ টাকা। চিকেন-মটন থাকবে ২ পিস এবং সাইজেও বেশ বড়। এখন আবার মহারাজা নামের একটি থালিও পাওয়া যাচ্ছে তাঁর দোকানে । মুনমুনের নিজের হাতের রান্নার স্বাদ হার মানাবে বড় বড় রেস্তোরাঁর রান্নার স্বাদকেও।
একজন মহিলা হয়েও থেমে থাকেনি মুনমুন। শুধুমাত্র নিজের পরিশ্রমের কারণে আজ তিনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন ।অন্যান্য মহিলাদের উদ্দেশ্যে মুনমুন বলেন , একজন মহিলা হয়ে কিছু করতে পারবনা এটা ভাবলে চলবে না । মনের মধ্যে সাহস এবং জেদ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে । ভয় পেয়ে দূরে সরে থাকলে তাতে কিছুই হবেনা ।
যেহেতু মুনমুন নিজে একজন মহিলা তাই আগামী আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন তিনি তাঁর দোকানে একটা রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করেছেন । মুনমুন বলেন , সাধারণ মানুষের জন্যই ,তাঁদের ভালবাসার জন্যই আজ তিনি একটা ভাল জায়গায় পৌঁছেছেন। তাই শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাঁর তৈরি খাবারের দামও তিনি আগামী দিনে একই রাখার চেষ্টা করবেন । ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয় তার একটা ভালো উদাহরণ হল বর্ধমানের মুনমুন । বর্ধমানের মুনমুন আজ সকলের কাছে মুনমুন দিদি নামেই পরিচিত ।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী